
মধুপুর বনাঞ্চলের কুল ঘেঁষেই ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার সংরক্ষিত ও সামাজিক বন। এ বনে চলছে চোরাইভাবে গাছ কাটার মহোৎসব। সরেজমিনে সন্তোষপুর বিট অফিসের সন্নিকটে ২০০গজ পশ্চিমে দেখা যায় আকাশ মনি বাগান সাবাড় করা হয়েছে। রাতের আধারে এ বাগানের বড় বড় গাছগুলো কেটে পাচার করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তবুও এ ঘটনায় এ রিপোর্ট লেখার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত অদৃশ্য কারণে কোন মামলা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট বিট অফিসারকে ম্যানেজ করেই সাবাড় করা হচ্ছে সংরক্ষিত বন।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে রসুলপুর রেঞ্জ অফিসার মকরুল ইসলাম আকন্দ জানান, বিট অফিসের নাকের ডগায় দুর্বৃত্তরা বড় বড় ১০টি আকাশমণি গাছ কেটে নিয়েছে। যার বাজারমূল্য আনুমানিক প্রায় ৪ লাখ টাকা। এ ঘটনায় আমরা সরেজমিন পরিদর্শন করে গাছের গুড়ি উদ্ধার করে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রসুলপুর রেঞ্জ এর আওতাধীন সন্তোষপুরে সাইদুল হক বিট অফিসার হিসেবে যোগদানের পর থেকেই স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অনিয়মে জড়িত। তাকে টাকা দিলেই মেলে সবকিছুর অনুমোদন। টাকার বিনিময়ে বনের জমিতে থাকা সুফল বাগানের গাছ কেটে আনা, ফসলের সুযোগ ও বসতবাড়ি নির্মাণের সুযোগ করে দেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি যোগদানের পর পরই সুফল বাগানের ২ লাখ টাকার বাঁশ বিক্রি করেন। ২০-২১ অর্থবছরে ৮৭৫ দাগে ৭ একর জমিতে সুফল বাগানের রোপণকৃত হরতকি, বহেরা, গোলাপজাম, আমলকি জারই, চাপালিশ ও অন্যান্য গাছ কর্তন করে জনৈক রেজা মুন্সিকে ফসল আবাদের সুযোগ করে দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। একই কায়দায় অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বাগান ধ্বংস করে স্থানীয় সাজুর ছেলে মোস্তাফিজসহ আরও বেশ কয়েকজনকে চাষাবাদের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। গত ৩ মাসে সন্তোষপুর ও সবুজ মার্কেট এলাকায় বনভূমিতে অন্তত ১০ টি বসতঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এদের থেকে ঘর প্রতি সর্বনিম্ন ২০-৩০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়াও রাবার বাগানের পাশে সুফল বাগান নষ্ট করে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে একটি কোম্পানিকে মুরগীর বিষ্ঠা ফেলার অনুমতি দেওয়ারও প্রচার রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, বিট অফিসারের সাথে চোরাকারবারীদের যোগসাজশ রয়েছে। তাকে ম্যানেজ করা হলে তিনি সেদিন আর বিট অফিসের এলাকায় থাকেন না অন্যত্র চলে যান। এর আগেও বিট অফিসারের যোগসাজশে রাতের বেলায় একটি বাগান থেকে ৩০-৩৫ টি আকাশমণি গাছ কাটার ঘটনা ঘটে। বিষয়টি রেঞ্জ অফিসে জানালে পরে তারা গাছগুলো জব্দ করেন।
স্থানীয়রা বলেন, সন্তোষপুর বন হচ্ছে আমাদের প্রাণ। অসাধু বিট অফিসারের কারণে বনখেকুরা রাতারাতি বন উজাড় করে ফেলতেছে। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করলে মামলার হুমকি দেওয়া হয়। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো নিরীহদের হয়রানি করেন তিনি।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সন্তোষপুর বিট অফিসার সাইদুল হক বলেন, আমি বৃক্ষ মেলার ডিউটিতে ছিলাম। এসে শুনি গাছ কাটা হয়েছে। আমাকে এখান থেকে সড়ানোর জন্য রেঞ্জার আমার বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। আমি দায়িত্ব বুজে নেওয়ার আগে এ বনের ৭৫ টি গাছ কাটা হয়। এ বিষয়ে রেঞ্জারকে বললে তিনি জানান বন থাকলে তো গাছ কাটবেই। রেঞ্জার নিজেই অনিয়মের সাথে জড়িত। গাছ কাটার তদন্তে এসে সবুজ মার্কেট বুড়ার বাজার এলাকায় লাকড়ির গাড়ি আটকিয়ে কেশরগঞ্জের হেলাল নামের এক ব্যাপারির কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন।
রসুলপুর রেঞ্জ অফিসার মকরুল ইসলাম আকন্দ বলেন, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করলে তো আর হবে না। তার বিরুদ্ধে ইতঃপূর্বেও অনিয়মের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। অপরাধের সাথে সম্পৃক্ততা না থাকলে তিনি অবশ্যই ব্যবস্থা নিতেন। তিনি একের পর এক ফ্যাসাদ করেই চলছেন। তার বিরুদ্ধে এর আগেও অফিসে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এবারও রিপোর্ট পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আ.ন.ম.আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি, তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর