কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নেয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং রায় ঘোষণার পর গণগ্রেপ্তারের ঘটনায় উত্তাল সারাদেশ। আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের আহত হওয়া ও তাদের মৃত্যু নিয়ে মর্মাহত সবাই। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মতো ক্রীড়াঙ্গন ও শোবিজ তারকারাও কথা বলছেন। সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা রাজপথ―অনলাইন ও অফলাইনসহ সব মাধ্যমেই সরব তারকারা।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশের জন্য বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সকালে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই রাজধানী ঢাকার ফার্মগেটে ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে এক প্রতিবাদ সমাবেশ করেন তারকারা। সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী হত্যা, সহিংসতা, গণগ্রেপ্তার ও হয়রানির প্রতিবাদ এবং সব হত্যার হিসাব, বিচার, গুলি ও সহিংসতা বন্ধ, গণগ্রেপ্তার, হয়রানি বন্ধ ও আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি তুলেন সংস্কৃতিকর্মীরা।
এবার সেই ধারাবাহিকতা অনুযায়ী ধানমন্ডির আবাহনী মাঠের সামনে দাঁড়িয়ে ছাত্র-জনতাদের হত্যার প্রতিবাদে একত্র হলেন শত শত শিল্পী ও সাধারণ মানুষ। শুক্রবার (২ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডে আবাহনী মাঠের সামনে ‘গণহত্যা ও নিপীড়নবিরোধী শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে এই প্রতিবাদী সমাবেশ হয়।
এ সমাবেশে নিহতদের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে হত্যাকাণ্ডের তদন্ত, বিচার ও হত্যার দায় নিয়ে সরকারের পদত্যাগের দাবি তোলা হয়।
এদিন এ প্রতিবাদী সমাবেশে অংশ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আলোচনায় উঠে আসা কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। তিনি বলেন, কোনো ছাত্রকে, কোনো সাধারণ মানুষকে যদি মারা হয়, তাহলে তাদের প্রতিরোধ করতে হবে আমাদের। নীরবতার কারণেই এত মায়ের বুক খালি হচ্ছে।
হিরো আলম বলেন, অনেক লাশ পড়েছে। এই লাশের খেলা বন্ধ করতে হবে। আপনাদের ঘরে বসে থাকা যাবে না। আপনারা ছাত্রদের পাশে এসে দাঁড়ান, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়ান। কারণ, নীরবতার কারণেই দেশের এই অবস্থা। আর আমরা ছাত্র ও জনসাধারণের পাশে আছি। আমরা শুরু থেকেই তাদের সঙ্গে ছিলাম, হয়তো আপনারা মাঠে কম দেখেছেন। ফেসবুক-ইউটিউবে বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা কথা বলেছি। গানে গানে প্রতিবাদও করেছি।
এ সময় হিরো আলম সরকারের সমালোচনা করে বলেন, সরকার দাবি মেনে নিয়েছে মাত্র একটি। অথচ শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়েছে ৯টি। আর সেই একটি দাবি মেনে নেয়ার পরও কেন শিক্ষার্থীদের হত্যা করা হলো? আমরা দেখতেছি শিক্ষার্থীরা মাঠে নামলে সরকারের লোক তাদের মুখ চেপে ধরছে, গলা চেপে ধরছে, আবার পেটানো হচ্ছে। তাহলে দাবি মেনে নেয়ার পর কেন তাদের মারধর করা হচ্ছে।
হিরো আলম বলেন, তারা মুখে মুখে দাবি মেনে নিয়েছে। কিন্তু অন্তরে তাদের বিষ। সবশেষ বলতে চাই, আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়।
প্রসঙ্গত, এদিন সমাবেশে শিল্পীসমাজ তিন দফা দাবি জানান। দাবিগুলো হচ্ছে গণগ্রেপ্তার ও গণমামলা বন্ধ করে আটক শিক্ষার্থী-জনতাকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকার দলীয় মুক্ত করা এবং কোটা আন্দেোলনে হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে সরকারের অবিলমম্বে পদত্যাগ।
এদিন সমাবেশ শেষে সাতমসজিদ সড়ক হয়ে শোভাযাত্রা নিয়ে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কে গিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়। আর শনিবার বিকেল তিনটায় রবীন্দ্রসরোবরে সংগীতশিল্পীদের প্রতিবাদী সমাবেশের কর্মসূচির ডাক দেয়া হয়।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর