বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির রহমান লিওনসহ গ্রেপ্তারকৃত সব শিক্ষার্থীর মুক্তি দাবিতে বিবৃতি প্রদান করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (২ জুলাই) জাবির সাবেক ৩২২ জন শিক্ষার্থীর নাম সম্বলিত এক বিবৃতিতে এসব দাবি জানান তারা।
বিবৃতিতে তারা শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে নিয়ে কারফিউ প্রত্যাহার, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম চালু ও ইন্টারনেটের পূর্ণগতি নিশ্চিত, নিহতদের হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা, গণগ্রেপ্তার ও গায়েবি মামলার নামে হয়রানি বন্ধ, জাহাঙ্গীরনগর সহ সকল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিগত কয়েক সপ্তাহজুড়ে তীব্র আকার ধারণ করেছে। এই আন্দোলন দমনে ঘটানো 'জুলাই হত্যাকাণ্ড' গোটা জাতিকে হতবিহ্বল করে দিয়েছে। ন্যায্য দাবিতে সারাদেশের ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ এ আন্দোলনে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘গত ২৮ জুলাই ভোরে গৌরবময় এই আন্দোলনের অন্যতম নেতা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেলকে সাদা পোষাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে বেআইনিভাবে ওয়ারেন্ট ছাড়া তাঁর বাসা থেকে তুলে নেয়া হয়। আন্দোলনের পুরো সময় জুড়ে আরিফ সোহেল নিজ ক্যাম্পাসে আন্দোলন সংগঠিত করার কাজে যুক্ত থাকলেও আমরা দেখলাম, বনানীর সেতু ভবনে হামলার দায়ে, তুলে নেয়ার প্রায় ৩৬ ঘন্টা পর গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডের আবেদনসহ মামলা দায়ের করা হয়েছে তাঁর নামে। আশাহত হয়ে আমরা লক্ষ করলাম আদালত তার ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
এ ঘটনায় আমরা ভীষণভাবে বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন। একই সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই ধরনের মিথ্যা গল্প ফেঁদে গ্রেফতারের ঘটনায় আমরা ভীষণভাবে সংক্ষুব্ধ। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, ৪৯ ব্যাচের সাব্বির রহমান লিওনকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারছি।
বিবৃতে তারা উল্লেখ করেন, সেতু ভবনে হামলা চলাকালে আরিফ সোহেলের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকার নানা অকাট্য প্রমাণ থাকার পরও কেন তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার করা হলো তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা মনে করি এই মামলায় তাকে রিমান্ডে নেয়া সরকারের সীমাহীন দমন, পীড়ন, নিপীড়ন ও অত্যাচারের আরেকটি নিদর্শন।’
বিবৃতিতে তারা আরও উল্লেখ করেন, মতামত প্রকাশ ও ন্যায়সঙ্গত দাবিতে আন্দোলন সংবিধানসম্মত মৌলিক মানবাধিকার। মতামত প্রকাশ ও ন্যায়সঙ্গত দাবিতে আন্দোলনের কারণে কোন নাগরিক পুলিশি হয়রানির মুখোমুখি হলে তা উৎকটভাবে অগণতান্ত্রিক সংস্কৃতিরই প্রকাশ ঘটায়।
বিবৃতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আটককৃত আরিফ সোহেল, সাব্বির রহমান লিওনসহ গ্রেফতারকৃত সকল শিক্ষার্থীর মুক্তি দাবি জানানোর পাশাপাশি অবিলম্বে নাগরিক অধিকারের পরিপন্থী সকল ধরনের তৎপরতা বন্ধ, 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন' এ শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে নিয়ে কারফিউ প্রত্যাহার, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম চালু ও ইন্টারনেটের পূর্ণগতি নিশ্চিত, নিহতদের হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা, গণগ্রেপ্তার ও গায়েবি মামলার নামে হয়রানি বন্ধ, জাহাঙ্গীরনগর সহ সকল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার আহ্বান জানান।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর