
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচরের দক্ষিণে সোনার চরের বাহিরে শিবচর নামক স্থানে সাগর মোহনায় অসংখ্য ডুবোচর ও পানির ডেউয়ে ১৩ জন জেলে নিয়ে ট্রলার ডুবির ঘটনায় ৮ জেলে নিখোঁজ রয়েছে। এর মধ্যে জীবিত ফিরেছেন ৫ জেলে। শুক্রবার সকাল ৮ টার দিকে ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। তবে সংবাদ লেখা পর্যন্ত ৮ জেলের কারো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
শনিবার (৩ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ট্রলার মালিক রুবেল চৌকিদার। নিখোঁজদের ফেরার অপেক্ষায় স্বজনরা। তবে জীবিত বা মৃত্যু হোক ফিরিয়ে দেওয়ার দাবী জানান ৮ জেলে পরিবার। নিখোঁজ জেলেদের সন্ধানে কাজ করেছেন কোস্ট গার্ড ও নৌ-পুলিশ। পরিবারগুলোর বাড়ী বাড়ী চলছে শোকের মাতম। প্রতিটি পরিবার জানায়, যারা নিখোঁজ হয়েছে তারাই একমাত্র তাদের চালিকা শক্তি এতে দিশেহারা হয়ে পরেছেন পরিবারগুলো।
নিখোঁজ জেলেরা উজেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। নিখোঁজ জেলেরা হলেন, চরফ্যাসন উপজেলাধীন নুরাবাদ ৮ নং ওয়ার্ডের হুমায়ুন কবির, নুরুদ্দিন, নুরাবাদ ৯নং ওয়ার্ডের শাহে আলম, আহাম্মদপুর ৮ নং ওয়ার্ডের মোঃ হোসেন, আহাম্মদপুর ৯ ওয়ার্ডের জাহাঙ্গীর, বেল্লাল, ছাদেক ও সবুজ। জীবিত উদ্ধার জেলেরা হলেন, নাজিম, সুমন, মনির, শাহিন ও দুলাল মাঝি।
ট্রলার মালিক রুবেল চৌকিদার জানান, ২৬ জুলাই ১৩ জন মাঝি মাল্লাসহ উপজেলার দুলারহাট থানাধীন আহাম্মদপুর ইউনিয়নের সুকনাখালী ঘাট থেকে মাছ ধরতে যায় সাগরে। মাছ ধরা শেষে শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে ট্রলারটি পুনরায় শুকনাখালী ঘাটের উদ্দেশ্য রওয়ানা দেয়। ট্রলার কিছুক্ষণ চালানোর পর ৮ টারদিকে শিবচর এলাকায় অসংখ্য ডুবোচর ও পানির ডেউয়ে ট্রলার আকস্মিকভাবে উল্টে যায়। এতে ১৩ জন জেলের মধ্যে ৫ জনকে অন্য একটি ট্রলার উদ্ধার করে। তবে এখনো নিখোঁজ রয়েছে ৮ জন জেলে। তাদেরকে উদ্ধারে কোস্ট গার্ড ও নৌ-পুলিশ কাজ করছেন।
শনিবার সরেজমিনে নিখোঁজ পরিবারগুলোর বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি বাড়ীতে চলছে আহাজারি। স্বজন ও গ্রামবাসীর আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে। নিখোঁজ জেলের পরিবারের কারো স্ত্রী বা সন্তানরা একমাত্র কর্মক্ষমকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পরেছেন। তাদের জীবিত বা মৃত্যু হোক ফিরিয়ে দেওয়ার দাবী জানান ৮ জেলে পরিবারগুলো।
নিখোঁজ জেলে সবুজের স্ত্রী রেশমা কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। পরিবারের একমাত্র চালিকা শক্তি তার স্বামী। দীর্ঘদিন ধরে জেলে পেশায় নিয়োজিত আছেন। এই বছরে নদীতে মাছ না থাকায় খুব কষ্টে দিন পার করছেন তারা। ২৬ জুলাই শুক্রবার তার স্বামী সকালে নদীতে যাওয়ার আগে তাদের কে বলে আমাকে মাফ করে দিও। স্ত্রী রেশমাকে মাছ ধরা শেষে বাড়ীতে এসে ডাক্তার দেখানোর কথা ছিলো। তবে আর ফিরবে কী সবুজ এ নিয়ে বার বার কান্নায় ভেঙে পরেন রেশমা। এসময় জীবিত বা মৃত্যু হোক তার স্বামীকে পরিবারের কাছে ফেরতের দাবী জানান।
দক্ষিণ আইচা কোস্ট গার্ড কন্টিনজেন্ট কমান্ডার শুধাম চাকমা জানান, নিখোঁজ ৮ জেলের উদ্ধার কাজ চলমান রয়েছে।
চরফ্যাসন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার জানান, গতকাল শুক্রবার অসংখ্য ডুবোচর ও পানির ডেউয়ে ১৩ জন জেলেসহ ট্রলার ডুবে যায়। এতে ৫ জন জেলে জীবিত উদ্ধার হয়েছে। বাকি ৮ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজ জেলেদের সন্ধানে কাজ অব্যহত রেখেছে কোস্ট গার্ড ও নৌ-পুলিশ।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর