
কক্সবাজারে শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতার সম্মিলিত উদ্যোগে বিক্ষোভে সড়ক-মহাসড়কে মানুষের ঢল নেমেছে। চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় বিচারের দাবিতে মাঠে নেমেছেন তারা।
শনিবার (৩ আগস্ট) বিকেল ৩ টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচিতে কক্সবাজার শহরের কালুরদোকান, হলিডে মোড এলাকায় জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। পরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন কক্সবাজার বাসটার্মিনালে দীর্ঘ ২ ঘণ্টা কর্মসূচি পালন করে। পরে সেখান থেকে তারা শহরের প্রবেশদ্বার লিংক রোডে যান। সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি চলে। এসময় শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য সড়ক-মহাসড়কে অবস্থান নেয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ মিছিলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অংশ নেয় অভিভাবক ও সাধারণ মানুষজন।
‘আমার ভাই কবরে খুনি কেন বাহিরে, আমার ভাই খুন কেন, শেখ হাসিনা জবাব চাই, লেগেছে রে লেগেছে রক্তে আগুন লেগেছে, সন্ত্রাসীদের আস্তানা জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও, তুমি কে আমি কে রাজাকার-রাজাকার, বায়ান্নের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’ ইত্যাদি স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো বিক্ষোভস্থল।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে সরকারদলীয় সংগঠন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার, সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাবের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেয় বিক্ষোভে অংশ নেয়। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আওয়ামী লীগ সরকারে পদত্যাগেরও দাবি তুলেন তারা। তবে, মুখে মাস্ক পরে অংশ নেয়ারা নানা ছাত্র সংগঠনের দায়িত্বশীল ও ক্যাডার বলে উল্লেখ করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে জুমাবারেও তারা মাঠে নামে। বিক্ষোভের মাঝখানে কেউ যেন বিশৃঙ্খল কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য সতর্ক দৃষ্টি নিয়ে চারপাশে অবস্থান নেয় শৃঙ্খলাবাহিনীর বেশ কয়েকটি টিম।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মিজানুর রহমান বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা শহরের কালুর দোকান থেকে শুরু করে, লিংকরোড এ কিছুক্ষণ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করেছে।
প্রসঙ্গতঃ কোটা আন্দোলনের শুরুতে কক্সবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত ও স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ১৬ জুলাই বেলা ১১টার দিকে মিছিল করে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লিংকরোড এলাকায় অবস্থান নেয় কক্সবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এরপর থেকে পর্যটন শহরে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। অভিযোগ উঠে, সাদা শার্ট পড়ে শিক্ষার্থীদের ভেতর ঢুকে পড়ে দুর্বৃত্তরা। তারা মিছিল নিয়ে রহস্যজনক ভাবে কক্সবাজার সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকার চেষ্টা করে। বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে ঢুকছে দেখে তাদের বাঁধা দেয় কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় কলেজে ইন্টারনাল পরীক্ষা চলছিল। বাঁধা দেয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও মিছিলকারীদের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আহত হন অনেকে।
সরকারি কলেজের সাবেক ছাত্রনেতাদের দাবি, চারদলীয় জোট সরকারের শেষ সময়ে ছাত্র সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার পর ১/১১ পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার গঠন হলে কলেজ ক্যাম্পাস হতে দৃশ্যমান বিতাড়িত হয় নব্বই দশক হতে কর্তৃত্ব চালানো ছাত্র শিবির। গোপনে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালালেও কলেজে কর্তৃত্ব চালাতে না পেরে কোটা আন্দোলনের কাঁধে ভর করে সরকারি ছাত্র শিবির সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকার চেষ্টা চালায়। ব্যর্থ হয়ে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতির মোটরসাইকেল জ্বালানোসহ ভাঙচুর চালানো হয়। অথচ তাদের দাবি নিয়ে হয় রাস্তায় নাহয় রাষ্ট্র প্রতিনিধি হিসেবে জেলা প্রশাসনের কাছে যাওয়ার কথা।
পরে সেই রেশ চলে যায় জেলা শহরে। সন্ধ্যার পর শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে কালিমা লেপন করে সুযোগ সন্ধানীরা জেলা আওয়ামী লীগ, জেলা জাসদ, জেলা জাতীয় পার্টির অফিসসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন জায়গায় নগ্ন হামলা ও ভাঙচুর চালায়। কোপানো হয় ছাত্রলীগের চার নেতাসহ অনেককে। এসব ঘটনায় পৃথক ৭টি মামলায় ৭৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রায় ১৫০০ জনের বিরুদ্ধে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মা.মাহফুজুল ইসলাম বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ভর করে যারা নৈরাজ্য চালিয়েছে তাদের শনাক্তে মাঠে রয়েছে শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে স্থির ও ভিডিও চিত্র এবং সিসিটিভি ফুটেজ দেখে নৈরাজ্যকারিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর