কোটা আন্দোলন ঘিরে দেশব্যাপী হত্যা, গণগ্রেফতার ও মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রতিবাদে নয় দফা দাবিতে আবারও ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের নৃশংস হামলার ঘটনায় প্রশাসনের নিরব ভূমিকার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে চার দফা দাবি জানিয়েছে ‘নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষমসমাজ’।
শনিবার (৩ আগস্ট) দুপুর সারে বারোটার দিকে শিক্ষার্থীরা নয় দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মহুয়া চত্বর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নেন। দুপুর দুইটা পর্যন্ত এ অবরোধ কর্মসূচি চলে। এসময় শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন। বিক্ষোভ মিছিল থেকে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল সমূহ খুলে দেয়ার আল্টিমেটাম দেয়া হয়ে।
অবরোধ চলাকালে এক বক্তব্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুর রশিদ জিতু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আবাসিক হল সমূহ খুলে দেয়ার আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ দ্রুত স্বাভাবিক করতে হবে। আমরা যাতে দ্রুত হলে ফিরতে পারি সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আবাসিক হল সমূহ খুলে দেয়ার জন্য ২৪ ঘন্টা সময় বেঁধে দিচ্ছি। অন্যথায় কঠোর থেকে কঠোরতর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে, প্রশাসন সহযোগিতা না করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা হলে উঠার জন্য তাদের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এরপর বিকেল তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদের শিক্ষক লাউঞ্জে ‘নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষমসমাজ’ এর ব্যানারে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন শিক্ষকরা। এসময় তারা চার দফা দাবি পেশ করেন।
দাবিগুলো হলো: ২৪ ঘন্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল গুলো খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে এবং হলকে মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থী মুক্ত করতে হবে। উপাচার্য, প্রো-উপাচার্যদ্বয়, ট্রেজারার ও প্রক্টরকে পদত্যাগ করতে হবে। ১৫ জুলাই রাতে বহিরাগত সন্ত্রাসী ও ছাত্রলীগ কর্মীদের দ্বারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের যারা নৃশংসভাবে আঘাত করেছে তাদের বিচার করতে হবে। অনতিবিলম্বে আরিফ সোহেল ও সাব্বির রহমান লিয়নসহ অন্যায্য ভাবে গ্রেফতারকৃত সকল রাজবন্দীদের মুক্তি দিয়ে সকল শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আনিছা পারভীন জলি বলেন, আমরা এর আগেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন করেছি। এবারও শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির পক্ষে দাড়িয়েছি। গত ১৫ জুলাই রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের নৃশংস হামলার ঘটনায় প্রশাসনের নিরব ভূমিকার প্রতিবাদে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি।
দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রাইহান রাইন বলেন, আমরা এ সরকারকে আর বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করি না। প্রধানমন্ত্রী নিজেই ছাত্রদের উপর তার পেটুয়া বাহিনী, পুলিশ বাহিনী লেলিয়ে দিয়েছেন, আবার নিজেই বলছেন ছাত্রদেরকে ধরবেন না। মামলার এজহারে বলা হচ্ছে পুলিশ গুলি করেনি, অন্য কেউ গুলি করেছে, অথচ আমরা স্পষ্ট দেখেছি কারা গুলি করেছে। আমরা আর এসব বিশ্বাস করি না। হল বন্ধ করে দেয়ায় শিক্ষার্থীরা পাশ্বর্বর্তী গ্রামগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু সেখানেও তাদেরকে তাড়া করা হচ্ছে, হয়রানি করা হচ্ছে। তাই আমরা অবিলম্বে হল খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে আজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসাইন লিওন জামিন পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর