
জয়পুরহাটে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে দফায় দফায় পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় আন্দোলনকারীদের হামলায় মেহেদী হাসান (২৫) নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সদর উপজেলা পরিষদের সামনে দুটি গাড়িতে আগুন দেয়। আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সময় অফিসে অবস্থান করা জয়পুরহাট-১ আসনের এমপিসহ অন্তত ৩৫ নেতাকর্মী আহত ও পুলিশের গুলিতে আন্দোলনকারীদের ৫০ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয় ।
২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালনকারী মেডিক্যাল অফিসার ডা. এস এম গালীব আনোয়ার জানান, পুলিশের গুলিতে নিহত ছাত্র মেহেদী হাসান। সে পাঁচবিবি উপজেলার রতনপুর গ্রামের মজিদুলের ছেলে। জেলা আওয়ামী লীগের অফিসে হামলার সময় আহতরা হচ্ছেন জয়পুরহাট-১ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সামছুল আলম দুদু (৬৯), জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রাজা চৌধুরী (৭৪) , ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক মাহমুদ হোসেন হিমু (৪৬), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক কৃষিবিদ মোস্তাইন তুহিন (৫০), সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর মোয়াজ্জেম হোসেন (৫৭), দোগাছী ইউনিয়ন আঃলীগ সভাপতি মতিয়র রহমান (৫৭), মোহাম্মাদাবাদ ইউনিয়নের আঃলীগ সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম মিলন (৪৬)সহ ২৫ জন নেতাকর্মী আহত হওয়ার দাবি করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মন্ডল ।
পুলিশের ছড়রা গুলি ও টিয়ার শেলের আঘাতে আহতরা হচ্ছেন সাজারুল ইসলাম (২৩), আলাউদ্দিন (২২) রাকিব (২০), সাকিব (২৩), তানিম (২২), রাকিবুল (২৩), হারুনুর রসিদ (২৪), রকিবুল হাসান (৩২) সহ ৫০ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্র জানায়।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম আরও জানান, মেহেদী হাসান নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী আন্দোলনকারীদের হামলায় নিহত হয়েছেন।
অপরদিকে, পুলিশের ছোড়া সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেলের আঘাতে ৫০ জন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার দাবি করা হয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কারীদের পক্ষ থেকে।
অপরদিকে, জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম জানান, আন্দোলনকারীদের হামলা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় ১২ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সময় ছবি তুলতে গেলে একুশে টিভির সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম (৪৮) ও বিডি২৪লাইভ জয়পুরহাট প্রতিনিধি শাহাদুল ইসলাম সাজু (৫৫) হামলার স্বীকার হন। এসময় তাদের লাঞ্ছিত করা হয় এবং ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। গুরুতর আহত শফিকুলকে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণহত্যার প্রতিবাদসহ ৯ দফা দাবিতে কোটা বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়। জয়পুরহাটে ছাত্ররা রোববার বেলা সাড়ে ১০ টার পর থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল সহ নতুনহাট এলাকায় সমবেত হয়। সেখান থেকে মিছিল সহকারে আন্দোলনকারীরা জয়পুরহাট শহরের প্রধান সড়ক দখলে নিয়ে জিরো পয়েন্ট পাচুরমোড়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে পুলিশ শক্ত অবস্থান নিলেও বেলা ১২ টায় বিক্ষোভকারী ছাত্ররা পেছন থেকে হামলা চালায় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় অফিসে অবস্থান করা এমপিসহ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা আহত হন।
পুলিশ এ সময় সরকারি সম্পদ ও জানমাল রক্ষা এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাবার বুলেট, ছড়রা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ছোড়ে। পরে আন্দোলনকারীরা সদর উপজেলা পরিষদের সামনে দুটি গাড়িতে আগুন দেয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয়, ট্র্যাফিক পুলিশ অফিস ও থানায় হামলা চালানোর চেষ্টা করে, ইট-পাটকেল ছোড়ে সাইনবোর্ড ভাঙচুর করা হয়। দফায় দফায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয় আন্দোলনকারী ছাত্রদের। বর্তমানে জয়পুরহাট জেলা শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এমপি সামছুল আলম দুদু বর্তমানে আশঙ্কামুক্ত বলে জানান, জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারক।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর