
স্বাধীন কমিশন গঠন, পুলিশ বাহিনীকে সংস্কার করে দলীয় প্রভাব মুক্ত জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত, যে রঙের ইউনিফর্ম পরিধান করে কলঙ্কিত হলাম সেই পোশাকের পরিবর্তন করে কনস্টেবল থেকে আইজি পর্যন্ত একই ড্রেসকোড, সকল পুলিশ সদস্য ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তা, যেসব পুলিশ অফিসারের কারণে পুলিশ সদস্য ও ছাত্র-জনতার মৃত্যু হয়েছে সে সকল পুলিশ অফিসার গ্রেপ্তার পূর্বক বিচারের দাবিসহ ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে পুলিশ সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সকালে সিরাজগঞ্জ পুলিশ লাইনে জেলায় কর্মরত এসআই, এ.এসআই ও কনস্টেবলরা এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। বিক্ষোভকালে পুলিশ সদস্যরা বলেন, ১১ দফা দাবি বাস্তবায়নপুর্বক গেজেট আকারে প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করবে বলে ঘোষণা দেন। পুলিশ সদস্যের দাবি, পুলিশ সদস্যরা আন্দোলন করলেও জেলার কোন সিনিয়র অফিসার এখন পর্যন্ত তাদের সাথে কোন যোগাযোগ করেনি।
বিক্ষোভকারী পুলিশ সদস্যরা বক্তব্য রাখেন, এস.আই শাহিন মাহমুদ ও এস. আই ইয়ামিন সরকার ও এ.এস আই জাহিদ হাসান। এ সময় তারা ১১ দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবীগুলো হলো-
১ ক). স্বাধীন কমিশন গঠন, পুলিশ বাহিনীকে সংস্কার করে দলীয় প্রভাব মুক্ত জনগনের কল্যাণে নিয়োজিত করতে হবে। আমরা যে রঙের ইউনিফর্ম পরিধান করে কলঙ্কিত হলাম সেই পোশাকের রং পরিবর্তন করে কনস্টবল থেকে আইজি পর্যন্ত একই ড্রেসকোড হতে হবে।
(খ) আমাদের সকল পুলিশ সদস্য ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং এর সাথে সাথে যে সকল সিনিয়র অফিসাররা ক্ষমতা লোভী দালাল পুলিশ অফিসারদের কারণে আমাদের শত শত পুলিশ সদস্য ও সাধারণ ছাত্র জনতা মৃত্যু বরণ করেছেন তাদেরকে গ্রেফতার করে অনতিবিলম্বে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে বিচার করতে হবে ও তাদের অবৈধ সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশের কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে।
২.ক) চলমান সহিংসতায় যে সকল পুলিশ সদস্য আহত ও নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে, যে সকল সদস্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জানমালের নিরাপত্তার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছেন তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকারের বিভাগীয় ব্যবস্থা অথবা হয়রানি করা যাবেনা।
খ) সকল পুলিশ সদস্যদের অন্যান্য সংস্থার চাকুরির মতো শ্রম আইন অনুযায়ী ৮ (আট) ঘণ্টা কর্ম ঘণ্টা নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে যদি ৮ (আট) ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালন করতে হয় তাহলে ওভার টাইম হিসাবে গণ্য করতে হবে।
৩.ক) প্রত্যেক পুলিশ সদস্যদের প্রতি বছর ২০ (বিশ) দিন নৈমিত্তিক ছুটির পাশাপাশি ২ (দুই) মাস অর্জিত ছুটি ভোগ করার ব্যবস্থা করতে হবে।
খ) প্রত্যেক পুলিশ সদস্যের নিজ জেলা ব্যতীত পর্যায়ক্রমে পদায়নের ব্যবস্থা করতে হবে এবং অধস্থন পুলিশ সদস্যের আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. আমাদের সকল পুলিশ সদস্য ও পরিবারের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে এবং তার পাশাপাশি ব্যক্তিগত চিকিৎসা করা হলে তাহার ভাউচার অনুসারে কল্যাণ তহবিল থেকে সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৫. ক) বিভাগীয় পদোন্নতির ক্ষেত্রে একবার পরিক্ষায় পাশ করার পরে পর্যায়ক্রমে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা এবং অধস্থনদের পদোন্নতির বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনে সুপার নিউমারারী পদ সৃজন করতে
খ) ওসি হিসাবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বিগত ১৫ (পনের) বছরে যারা সুবিধা বঞ্চিত হয়েছেন তালের দায়িত্ব দিতে হবে এবং ওসি হিসাবে ২ (দুই) বারের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না এবং ৫৪ (চুয়ান্ন) বছরের বয়সের সীমাবদ্ধতা তুলে দিতে হবে।
৬. অধস্থন পুলিশ সদস্যদের সাথে পিআরবি অনুসারে সৌহাদাপূর্ণ আচরণ করতে হবে, এবং ব্যক্তিগত কাজে কোন সদস্যকে ব্যবহার করা যাবে না ও কন্সটেবল থেকে সকল পর্যায়ের অফিসারদের পোস্টিং বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে।
৭. সার্জেন্ট এবং সাব-ইন্সপেক্টরদের কে পিএসসির অধীনে একই নিয়োগের মাধ্যমে সকল ইউনিটে পদায়ন করতে হবে এবং বর্তমানে কর্মরত সার্জেন্টদেরকে তদন্ত ক্ষমতা দিতে হবে ও এটিএসআইকে এসআই (নিরস্ত্র) হিসাবে সমন্বয় করতে হবে। জনগণের স্বার্থে এবং সুষ্ঠু ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ট্র্যাফিক বিভাগের অবৈধ বেকার বাণিজ্য বন্ধ করা এবং মামলার টার্গেট প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে।
৮. কমিউনিটি ব্যাংক এবং সকল কল্যাণ তহবিলের সুস্পষ্ট হিসাব প্রতি বছর সকলকে প্রদান করতে হবে এবং লোনের ক্ষেত্রে সুদের হার ১০% এর নিচেই নিয়েই আসতে হবে।
৯.ক) নবম গ্রেড থেকে পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়ে ৬ ষ্ঠ গ্রেড নিশ্চিত করতে হবে এবং একই পদে সর্বোচ্চ ১০ (দশ) বছরের মধ্যে পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে।
খ) ইন্সপেক্টর থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চাকুরি হারালে সকলেই পেনশন সহ সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা পায় কিন্তু কনস্টবল থেকে এসআই পর্যন্ত এই সুবিধা দিতে হবে এবং সারা বাংলাদেশে যে সকল সদস্যদের বরখাস্ত করে রাখা হয়েছে তাদেরকে মানবিক কারণে বিবেচনা করতে হবে।
১০. ইন্সপেক্টর থেকে ৬০% এএসপি পদে পদোন্নতি দিতে হবে। পদোন্নতির জটিলতা নিরসনের জন্য সকল পদে পদোন্নতির জন্য সুপার নিউমারারি চালু করতে হবে এবং ন্যূনতম পুলিশ সুপার পর্যন্ত পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে। অধস্থন পুলিশ সদস্যদের টিএ/ডিএ বিল যথা সময়ে প্রদান করতে হবে ও সোর্স মানি প্রদান করতে হবে।
১১. পুলিশের সকল সদস্য সকল ইউনিটে চাকুরি করার সুযোগ রাখতে হবে (স্বায়ত্বশাসিত এবং টেকনিক্যাল) বলে কোন ইউনিট থাকবে না ও সবাইকে সব ইউনিটে বদলির সুযোগ থাকতে হবে। পুলিশ সুপারের নিচে বডি গার্ড, অর্ডালি নিয়ম বন্ধ করতে হবে। উল্লেখতি দাবিগুলো সাত কার্য দিবসের মধ্যে গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে। অন্যথায় সমগ্র বাংলাদেশ পুলিশের কর্মবিরতি চলমান থাকবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর