কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাতে রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) ফ্রান্স থেকে দেশে ফিরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হয়ে কথা বলার সময় এমন দৃশ্যের অবতারণা হয়।
এদিন দুপুর ২টা ১০ মিনিটের দিকে ড. ইউনূসকে বহনকারী বিমানটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। পরে তাকে স্বাগত জানান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ ৩ বাহিনী প্রধান, পুলিশ প্রধান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক আসিফ নজরুল ছাড়াও ড. ইউনূসের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ তার বন্ধু-শুভাকাঙ্ক্ষীরা।
এ ছাড়াও নোবেলজয়ী এ অর্থনীতিবিদকে বিমানবন্দরে ফুল দিয়ে স্বাগত জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ক। একই দিন দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) থেকে তারা ড. ইউনূসকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হন।
শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হন ড. ইউনূস। এ সময় তার চারপাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। পরে আবু সাঈদের কথা বলতে গিয়ে ড. ইউনূস যখন কান্নায় ভেঙে পড়েন তখন পাশে থাকা ৬ সমন্বয়কও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
নিহত আবু সাঈদের কথা স্মরণ করে ড. ইউনূস বলেন, আজ আবু সাঈদের কথা মনে পড়ছে আমাদের। যে আবু সাঈদের ছবি মানুষের মনে গেঁথে গেছে। এটা কেউ ভুলতে পারবে না। কী অবিশ্বাস্য এক সাহসী যুবক, বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, তারপর থেকে কোনো যুবক-যুবতী আর হার মানেনি। তারা বলেছে যত গুলি মারুক, মারতে পারে, আমরা আছি। যার কারণে সারা বাংলাদেশজুড়ে এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। যার কারণে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা অর্জন করলো। এই স্বাধীনতা আমাদের রক্ষা করতেই হবে।
তরুণদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, এ স্বাধীনতাকে আরও মজবুত করে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। যে তরুণ সমাজ এটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। তারা এ দেশকে নতুনভাবে পুনর্জন্ম দিয়েছে। এ স্বাধীনতা প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে।
জনসাধারণকে সংখ্যালঘুদের ওপরসহ প্রতিটি হামলা বন্ধে তৎপর থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আপনারা যদি আমার ওপর বিশ্বাস রাখেন, ভরসা রাখেন তাহলে নিশ্চিত থাকুন দেশের মানুষের ওপর কোথাও হামলা হবে না। আমার প্রথম কথা হলো আপনারা বিশৃঙ্খলা, সহিংসতা থেকে দেশকে রক্ষা করুন।
ড. ইউনূস বলেন, আমাদের দায়িত্ব হলো সরকারের কাঠামোগুলো পরিবর্তন করা, মানুষকে রক্ষা করা। মানুষ যাতে সরকারের ওপর আস্থা রাখে। বাংলাদেশ একটি পরিবার, সম্পদ-জনগণ সবই আমাদের। এ সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুরকে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মন্তব্য করেন তিনি।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর