শেখ হাসিনা (সাবেক প্রধানমন্ত্রী) পদত্যাগ এবং দেশ ছাড়ার পর থেকে পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাসহ ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত কয়েক শতাধিক নেতা-কর্মী ঘর-বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন।
আত্মগোপনে যাওয়া এসব নেতাদের মধ্যে সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও দলীয় শীর্ষ পদধারী নেতারাও রয়েছেন। দলের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও গা ঢাকা দিয়েছেন। হামলা-মামলার ভয়ে আত্মীয়-স্বজনের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে।
গত ৩৬ দিনের আন্দোলনে দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে গত ৫ই আগস্ট দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ত্যাগের খবর প্রকাশ হওয়ার পর পরেই জেলা জুড়ে আনন্দ মিছিল বের করে হাজারো ছাত্র জনতা। এর মধ্যেই উপজেলা শহরের বেশ কয়েকজন আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীদের বাস ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন দুর্বৃত্তরা। ফলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি সঞ্চার হওয়ায় আত্মগোপনে চলে গেছেন তারা।
সরেজমিনে পাথরঘাটার বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাদের বাসা তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। এছাড়া আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। স্থানীয়রা জানান, শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর প্রকাশের পর থেকে অধিকাংশ নেতাকর্মীরা পরিবারসহ আত্মগোপনে চলে গেছেন। তবে কোথায় গেছেন নেতাকর্মীরা সে বিষয়ে কিছুই জানেন না। বেশি বেকায়দায় পড়েছে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
পাথরঘাটা উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের এক আওয়ামী লীগ নেতা মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে জানান, আমরা ক্ষমতাসীন দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা কোনো সুবিধা ভোগ করিনি, কারও অন্যায় করিনি, একটি কুচক্রী মহল আমাদের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট চালিয়ে আসছে।
এদিকে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে পুলিশ বাহিনীর কর্মবিরতির কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে জন নিরাপত্তা। গত তিন দিনের বেশি সময় ধরে গাইবান্ধার সাত থানার প্রধান ফটক বন্ধ রেখে কর্মবিরতি পালন করছে পুলিশ। এতে বেড়েছে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার প্রবণতা।
পাথরঘাটার বিশিষ্ট কয়েকজন নাগরিকদের দাবি, ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা একটানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকায় উপজেলার শীর্ষ পদে থাকা বেশ কয়েকজন নেতা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েছিল। সাধারণ মানুষের সাথে হয়রানিমূলক আচরণের কারণে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরপরই বিক্ষুব্ধ জনতা তাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করছে। তবে যে কোন প্রতিবাদ যেন সহিংসতায় রূপ না নেয়, সেদিকটাও খেয়াল রাখতে হবে জানান বিশিষ্টজনরা।
পাথরঘাটা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক চৌধুরী মো. ফারুক বলেন, বিএনপি প্রতিশোধ পরায়ণ না হয়ে সাম্যের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। দমন পীড়ন জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির আদর্শের পরিপন্থি। বিএনপি সকল নাগরিকদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুন্দর দেশ গড়তে চায়। তিনি দলের নেতাকর্মীদের সংযত আচরণ করার আহ্বান জানান।
এছাড়াও তিনি আরো বলেন, মাইকিং করা হচ্ছে বাড়িঘর, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বা কোনো কিছুতে হামলা ভাঙচুর বা লুটপাটসহ এ জাতীয় কিছু নষ্ট করা যাবে না। কেউ করলে প্রতিহত করতে হবে। আমরা প্রত্যেকটি মসজিদের মাইকেও এগুলো প্রচার করতে বলেছি। এখন প্রত্যেকটি ইউনিয়ন পর্যায়ে এটা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর