স্কুলের সহকারী কাম-কম্পিউটার পদে চাকুরির ভুয়া নিয়োগপত্র হাতে ধরিয়ে দিয়ে স্থানীয় জাকির হোসেন নামে এক যুবকের কাছ থেকে ১২ লাখ ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।
প্রতারণার ঘটনায় এলাকায় গ্রাম্য সালিশ হলে হাতিয়ে নেয়া সেই টাকা ৬ মাসের মাসের মধ্যে কিস্তিতে ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ওই শিক্ষক। এ প্রতারণার অভিযোগটি উঠেছে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ভূটিয়ারকোণা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোহাম্মদের বিরুদ্ধে।
শুধু ওই যুবকের নয়, চাকুরি প্রলোভনে আরও বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদেরকে সর্বস্বান্ত করেছেন গোলাম মোহাম্মদ। এসব নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসারে কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম।উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের কুমড়ী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে জাকির হোসেন জানান- ভূটিয়ারকোনা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী কাম কম্পিউটার পদে চাকুরি দেয়ার কথা বলে প্রায় সাড়ে ৩ বছর পূর্বে স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোহাম্মদ তার কাছ থেকে ১২ লাখ ৭০ হাজার টাকা নেন। টাকা নেয়ার কিছুদিন পর গৌরীপুর পৌর শহরে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আরও কয়েকজনের সঙ্গে ওই পদে নিয়োগ পরীক্ষা নেন তিনি। নিয়োগ পরীক্ষা শেষে স্কুলের প্যাডে ২০২০ সালের ৩০ জুলাই নিয়োগ পত্র হাতে ধরিয়ে দিয়ে তাকে ওই বছর ২৫ সেপ্টেম্বর কাজে যোগদানের কথা বলেন প্রধান শিক্ষক গোলাম মোহাম্মদ।
২৫ সেপ্টেম্বর তিনি স্কুলে কাজে যোগদান করতে গেলে প্রধান শিক্ষক তাকে বলেন- এখন স্কুলে আসতে হবেনা এমপিওভুক্তির পর কাজে যোগদান করলে চলবে। এরপর প্রায় সাড়ে তিন পার হলেও চাকুরি অথবা হাতিয়ে নেয়া টাকা কোনোটাই ফেরত পায়নি জাকির হোসেন। এ প্রতারণার ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে গত ২০ জুলাই/২০২৪ইং এক সালিশ দরবার অনুষ্ঠিত হয়। এ সালিশ দরবারে প্রধান শিক্ষক গোলাম মোহাম্মদ চাকুরি দেয়ার নামে জাকির হোসেনের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া টাকা ৬ মাসের মধ্যে কিস্তিতে পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেন।
স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম জানান- শুধু জাকির হোসেন নয় স্থানীয় আরও বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে স্কুলে বিভিন্ন পদে চাকুরি দেয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোহাম্মদ। তিনি স্কুলের সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম তালুকদার সোলাইমান হাসানের হাজিরা স্ট্যাাটমেন্টে তাদের স্বাক্ষর জাল করে বিল উত্তোলন করেছেন। তিনি বিনা নোটিশে সহকারী শিক্ষক নাজমা সুলতানার ২০ দিনের বেতন কর্তন করেন।
এছাড়া তিনি নিয়মিত স্কুলে আসেন না। প্রধান শিক্ষক গোলাম মোহাম্মদের নানা স্বেচ্ছাচারিতা,অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকের এসব দুর্নীতি-অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন শফিকুল ইসলাম।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক গোলাম মোহাম্মদ গণমাধ্যমকে জানান- জাকির হোসেনকে স্কুলের প্যাডে যে নিয়োগ পত্রটি দেয়া হয়েছে তাতে ওই স্বাক্ষরটি তার নয়।
সালিশ দরবারে জাকির হোসেনের টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আপনি এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- চাকুরি দেয়ার কথা বলে জাকিকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন জনৈক এক স্থানীয় লোক। ওই লোকের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করে জাকিরকে ফিরিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি সালিশে দরবারে। এসময় সহকারী শিক্ষকদের স্বাক্ষর জাল ও বিনা নোটিশে বেতন কর্তনের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন- প্রতিষ্ঠানের কাজে বাইরে থাকায় তিনি দুই দিন স্কুলে উপস্থিত ছিলেন না।
এ প্রতারণার ঘটনায় সালিশ দরবার অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে মাওহা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল ফারুক জানান- এ প্রতারণার ঘটনার সঙ্গে শুধু প্রধান শিক্ষক গোলাম মোহাম্মদ নয় আরও কয়েকজন জড়িত আছেন। তাদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করে ৬ মাসের মধ্যে জাকিরের টাকা ফিরিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন গোলাম মোহাম্মদ।
গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাকিল আহমেদ জানান- ভূটিয়ারকোনা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোহাম্মদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর