ফেনীতে ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পাহাড়ি ঢলে চলতি আগষ্ট মাসের প্রথমেই ফেনী ৩ টি নদীর বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হচ্ছে শতশত গ্রাম।বাঁধ রক্ষার সমীক্ষার পরও বাঁধের কাজ না করায় এমনটি হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা। তাছাড়া জনস্বার্থে তেমন কোন কাজই করা হয় নি বিগত ১৬ বছরে। এতে মুহুরি কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ১৫ টি বাঁধ ভেঙ্গেছে।
বাঁধ ভাঙ্গনের ফলে ও টানা বৃষ্টিতে ভেঙ্গে গেছে বিভিন্ন রাস্তাঘাট। খানাখন্দের ফলে গাড়ি চলাচলে ও সমস্যা হচ্ছে। তেমনি রাস্তার পাড় ভেঙ্গে রাস্তাও তলিয়ে যাওয়ার সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে ফুলগাজি পরশুরামের অধিকাংশ রাস্তা ভেঙ্গে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় খানাখন্দ। শুধু সড়ক নয়, ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মৎস্য, কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও সড়ক বিভাগসহ কয়েকটি সরকারি দপ্তর এরই মধ্যে ক্ষতির হিসাব নিরূপণ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ১ আগস্ট রাত থেকেই মুহুরি, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। ২ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে পরশুরামে নদী রক্ষা বাঁধের দুটি স্থান ভেঙে এবং ফুলগাজীতে বাঁধ উপচে একের পর এক গ্রাম প্লাবিত হতে থাকে। তিনদিনে নদী রক্ষা বাঁধের ১৫টি স্থান ভেঙে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার ৪৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়। প্রশাসনের হিসাব মতে, অন্তত ২৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ফুলগাজী-পরশুরাম সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ভেসে যায় মৎস্য খামারের কোটি কোটি টাকার মাছ ও পোনা। ডুবে যায় রোপা আমনের বীজ ও শীতকালীন সবজি। পানির স্রোতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয় সড়কগুলোয়। কোনো কোনো এলাকায় রাস্তা ভেঙে গেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানিবন্দি পরিবারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়েও আনা হয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় চিথলিয়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল্লাহ জানান' স্থানীয় বানভাসি মানুষকে নিকটস্থ আশ্রয় কেন্দ্র সমূহতে পুনর্বাসন করা হয়েছে। সেখানে তারা ভালো আছেন। তাদের অনেকেরই বাড়িঘর, আসবাবপত্র, টাকা পয়সা হারিয়ে গিয়েছে। বানের পানিতে এ সমস্ত জিনিসগুলো তাদের নিকট আর নেই। একই সাথে তাদেরকে স্থানীয় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর থেকে টিকা ও ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি যারা জন প্রতিনিধি ও বিভিন্ন নেতৃত্ব স্থানীয় লোকজন আছেন তারা খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন।
ফুলগাজি সদর ইউনিয়নের আবদুস সালাম বলেন, 'এবারের বন্যায় মানুষ অনেকভাবে ক্ষতির কবলে পড়েছে। কৃষকের বীজতলা ও শীতকালীন আগাম সবজি নষ্ট হয়েছে। পুকুর ও মাছের খামার ভেসে গেছে। ক্ষতিপূরণের বিষয়টি রাষ্ট্রকে ভাবতে হবে। তা না হলে এসব এলাকার মানুষ নানা সূচকে পিছিয়ে পড়তে পারে।' চিথলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, 'পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে বারবার লোকালয় প্লাবিত হচ্ছে। এক মাস আগে ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কারে গড়িমসির কারণে আবারো একই স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।' ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আবুল কাশেম বলেন, '৪ আগস্ট মুহুরি, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। বন্যা পরিস্থিতির পুরোপুরি উন্নতি হওয়ার পর বরাদ্দ সাপেক্ষে নদী রক্ষা বাঁধের ভাঙনকবলিত স্থানগুলো মেরামত করা হবে। এর আগে, জুনের শেষ দিকে ভারী বৃষ্টি ও উজানের পানিতে পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় মুহুরি নদীর বাঁধের একাধিক স্থানে ভেঙে অন্তত ৪৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই ফের বন্যায় এসব এলাকার মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
এছাড়াও ভাঙন কবলিত রাস্তা গুলো সংস্কারের কাজ করছেন স্থানীয় জামায়াতে ইসলামের কর্মীরা। এ বিষয়ে জামায়াতের জেলা আমির সামসুদ্দিন ইলিয়াস জানান " পেনের বিভিন্ন রাস্তা সমূহ ভেঙে গেছে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করার কারণে এই অবস্থায় সৃষ্টি হয়েছে। আপনারা দেখবেন বাইরের দেশে চাইতে আমাদের দেশে রাস্তার টেন্ডার উচ্চ মূল্যের হয়। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি রাস্তা ভাঙন ধরে না। কিন্তু আমাদের দেশে একমাত্র দ্রুত রাস্তা ভেঙ্গে যায়। তো এই লক্ষ্যে আমরা যার যা পারছি যা দিয়ে পারছি যতটুকু পারছি ব্রিক ফিল্ড থেকে ইট বালু ও রাবিশ ব্যবহার করে রাস্তার ভাঙন মেরামতের চেষ্টা করছি।
ফেনীর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ আল ফারুক বলেন, 'দুবারের বন্যায় ফুলগাজী ও পরশুরামে অনেক রাস্তার পিচ উঠে গেছে। রাস্তায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। উপজেলাগুলো থেকে কর্মকর্তারা ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন প্রস্তুত করছেন। দ্রুত সড়কগুলো মেরামতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।'
জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার বলেন, 'দুই দফা বন্যায় ফুলগাজী ও পরশুরামে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।'
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর