
মহেশখালী হোয়ানকের কেরুণতলী এলাকার করিমদাদ সিকদার, বয়সের ভার এখন ১শ বছরে ছুঁইছুঁই। ঠিকমতো হাঁটাচলা, খাওয়াদাওয়া কিছুই করতে পারেন না আগের মতো। বেঁচে আছেন চিকিৎসার দয়া নিয়ে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হওয়া এ বয়োবৃদ্ধ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে জেল হাজতেই মিথ্যে মামলায় কাটিয়ে দিচ্ছেন টানা ৩০ বছর। ৩০ বছর আগে বাড়িতে রেখে যাওয়া ছেলে-মেয়েরাও বাবার স্নেহবঞ্চিত প্রায় আড়াই যুগ ধরে। কিন্তু করিদমদাদ সিকদারের কেনো এ বেহাল দশা? জানতে হলে ফিরতে হবে আজ থেকে ৩০ বছর পূর্বে।
স্থানীয় সূত্র মতে- গত ১৯৯১ সালে পঞ্চম ধাপের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন হোয়ানকের মৃত (এখন) ইসহাক মিয়া বিএ ও বিএনপি থেকে মোহাম্মদ রশিদ মিয়া। একদা ইসহাক মিয়া নির্বাচনে জিতলে কোণঠাসা হয়ে পড়ে রশিদ মিয়া গ্রুপ। আর জয়ী ইসহাক মিয়া এমপি যোগ দেন আ.লীগ রাজনীতিতে। পুরো নির্বাচনী এলাকা একক কর্তৃত্বে নিয়ন্ত্রণে নিতে এমপি ইসহাক মিয়া ঘায়েল করতে থাকেন বিএনপি ঘরনারদের। সে সময় বর্তমানে কারাবাস করা করিমদাদ সিকদারকে আবুল হোছন হত্যা মামলায় আসামি করে ইসহাক মিয়া বিএ এমপি।
মহেশখালী থানার ০৮ মামলা সূত্র মতে- হোয়ানক কেরুণতলীতে হত্যা হন আবুল হোছন নামে এক ব্যক্তি। তৎকালীন সময়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করে মামলায় আসামি করা হয় করিমদাদ সিকদারকে। এরপর একপেশে তদন্ত ও বিচারিক কার্যক্রম শেষে করিমদাদের মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। যদিও করিমদাদের পরিবার এ নিয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করলে মৃত্যুদণ্ডের সাজা বাতিল করে ৩০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। যে সাজা বর্তমানে প্রায় শেষের দিকে।
শুধু তা-ই নয়, মামলার বাদী পক্ষও করিদমদাদ সিকদারের জামিনে অনাপত্তি দাবি দিয়ে রেখেছে। অর্থাৎ বয়োবৃদ্ধ করিমদাদের জামিনে বাদি আর আপত্তি থাকলো না। এ বিষয়ে সরকারের বিশেষ গোয়েন্দা শাখাতে এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্টও জমা দেয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন- কক্সবাজার-২ আসনের মরহুম ইসহাক মিয়া এমপির রাজনীতির জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে জীবনের ৩০টি বছর হারিয়ে ফেলেছেন হোয়ানকের সম্ভ্রান্ত ঘরের করিমদাদ সিকদার। এ ক্ষতি কে পুষিয়ে দেবে? তাই জীবনের শেষ সময়ে পরিবারের সঙ্গে থেকে হলেও যেন তাঁর মৃত্যু হয় সে কারণে অনতিবিলম্বে করিমদাদকে মুক্তি দেয়াড় কথা বলছেন তাঁরা।
এদিকে- মৃত্যুসয়ী করিমদাদ সিকদারের পরিবারে ২ স্ত্রী ও ৬জন ছেলে মেয়ে রয়েছেন। যারা স্বামী ও পিতাকে ফিরিয়ে পাওয়ার প্রহর গুনছেন ৩০ বছর ধরে। তাই দেশের স্বৈরাচার পতনের এ সময়ে পিতাকে ফিরিয়ে পাওয়ার আশা করছেন ছেলে মেয়েরা।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর