
অবশেষে প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে সোমবার সরকারের নিয়ন্ত্রণে এসেছে নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার কোটি টাকা রাজস্বের নৈহাটি গরুর-হাট। দীর্ঘ ৪০বছর ধরে উপজেলার চিরাম ইউনিয়নের নৈহাটিতে অবৈধভাবে গরুর-হাট বসিয়ে বছরে কোটি টাকা চাঁদা আদায় করছিলেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা আক্তার ববি সোমবার হাটে উপস্থিত থেকে খাস-কালেকশানের মাধ্যমে হাটে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময় সেনাবাহিনীর মেজর নাজমুশ সাকিব ও সঙ্গীয় ফোর্স উপস্থিত ছিলেন। বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা আক্তার ববি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার চিরাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও নৈহাটী গ্রামের বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম, তার ভাই আলামীন ও তাদের লোকজন স্থানীয় একটি ওয়াকফ এস্টেট ও মাদ্রাসাকে সাহায্যের নামে নৈহাটী বাজারের পাশে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে প্রায় ৪০ বছর ধরে গরুর হাট পরিচালনা করছিলেন। এ নিয়ে মামলা হলে তারা বাজারটিকে নৈহাটি মৌজায় সরিয়ে নেন ও টোল কালেকশানের নামে চাঁদা আদায় করেন। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ ও আদালতে মামলা হওয়ার পরও গরুর হাটটি দখলমুক্ত করা যায়নি। প্রতি সোমবার হাট বসে এখানে। প্রতি হাটে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা কালেকশান হয়। এই হিসাবে বছরে দেড় কোটি টাকার বেশি আয় করেছেন তারা।
চিরাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান চৌধুরি বলেন, প্রতি হাটবার উপলক্ষ্যে গরুবোঝাই চার-পাঁচশত ভারী ট্রাক ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়ক দিয়ে এখানে আসা যাওয়া করে। এতে সড়কগুলো খুব তাড়াতাড়ি ভেঙ্গে গেছে। ইউনিয়ন পর্যায়ের সড়কগুলো হালকা যান চলাচলের উপযোগী করে তৈরি করা হয়। গরুরহাটের কারণে সরকারের অনেক টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অনিয়মের প্রতিকারে কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। এ ব্যাপারে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। হাট-বাজারের নীতিমালা প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর ২০ ধারা অনুযায়ী যে কোন ব্যক্তিমালিকানাভূক্ত জমিতে হাট-বাজার গড়ে উঠলে তা দায়হীনভাবে সরকারের উপর বর্তাবে বা সরকার ওই হাট-বাজার বাজেয়াপ্ত করতে পারবে। অথচ নৈহাটী গরুরহাট দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারিভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। সোমবার বাজার সরকারি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ায় প্রশাসন ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারা।
চিরাম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম সেনাবাহিনীর হেফাজত ও তার ভাই আল-আমিন আত্মগোপনে থাকায় তাদের সাথে কথা বলা সম্ভব হয় নাই। ইউএনও ফারজানা আক্তার ববি বলেন, সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতার কারণে হাটে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে। সোনাহিনী ছাড়াও এলাকার জনপ্রতিনিধিগণ সাহায্য করেছেন। নিয়ন্ত্রন ধরে রাখার জন্য সকলের সহায়তা কামনা করেন তিনি।
বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফারজানা আক্তার ববি বলেন, সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতার কারণে হাটে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে। সেনাবাহিনী ছাড়াও এলাকার জনপ্রতিনিধিগণ সাহায্য করেছেন। নিয়ন্ত্রন ধরে রাখতে সব সময় সকলকে সহযোগিতা করতে হবে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর