বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ও বর্তমান সরকারের পট পরিবর্তন হওয়ার পর সারাদেশে হামলা, মামলা, দখল, পালটা দখল, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা সংঘটিত হয়।
এসব ঘটনার মধ্যে সেনাবাহিনীর টহল ও সক্রিয় তৎপরতার জন্য ব্যতিক্রম ছিল হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলা। এখানের পরিবেশ শান্ত ছিল। ছাত্র- জনতার আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ। এখন প্রশংসায় ভাসছেন ছাত্র জনতা ও সেনা বাহিনীর সদস্যরা। নবীগঞ্জ থানা পুলিশ কর্ম বিরতি নিলেও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক। এমন চিত্রে হতবাক করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে। সেনাবাহিনীর টহল প্রতিদিন জোরদার করা হচ্ছে। সেনা টহলের পাশাপাশি ও নবীগঞ্জ থানায় আসতে শুরু করেছে পুলিশ সদস্যরা। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় থানায় শুরু হয়েছে সেবা কার্যক্রমও।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) সকাল থেকে নবীগঞ্জ থানার কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক, এসআই, কনস্টেবলসহ পুলিশ কর্মকর্তা যোগ দেন। এরপর শুরু হয়েছে সেবা কার্যক্রম। থানার নিরাপত্তায় এখনো সেনা সদস্য মোতায়েন রয়েছে। গতকাল ১৪ আগস্ট নবীগঞ্জ থানার স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকে এখন পর্যন্ত নবীগঞ্জ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার কোথাও হামলা, মামলা, দখল,পালটা দখল,ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা সংঘটিত হয়নি। ছাত্র জনতার বিজয় মিছিল ও আন্দোলন কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ভাবে পালিত হচ্ছে। এদিকে নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি, যুবদল,ছাত্রদল, জামাত ও জাতীয় পাটি তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ভাবে পালিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দলীয় কোন দাঙ্গা হাঙ্গামা হয়নি। বিএনপির উপজেলা পর্যায়ের নেতারা সক্রিয়ভাবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্য মত বিনিময় সভা ও পরামর্শ করছেন। বিশেষ করে বিএনপি মনোনীত পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব ছাবির আহমদ চৌধুরী ও নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান চৌধুরী সেফু সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।
নবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের দায়িত্ব প্রাপ্ত মেজর তানভীর আহমদ সক্রিয় ভূমিকা প্রশংসায় ভাসছেন জনতার মধ্যে। তিনি প্রথম দিন এসেই নবীগঞ্জে সব শ্রেণি ও পেশার মানুষকে নিয়ে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ে মত বিনিময় করেন। সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের সাথে কথা বলেন। এ বিষয়ে মেজর তানভীর আহমদ বলেন, আমার দেখা নবীগঞ্জ উপজেলার চিত্র অবাক করেছে, এখানে এতো শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আর কোথায় শোনাতে পাইনি। পার্শ্ববর্তী উপজেলা বানিয়াচংয়ে গন্ডগোল হলেও এখানে পরিবেশ স্বাভাবিক ছিল। নবীগঞ্জের ছাত্র জনতার আন্দোলন আমাকে মুগ্ধ করেছে, এখানে তাদের আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ। রাজনৈতিক দল গুলো কোন সহিংসতা করেনি আমার মনে হচ্ছে এটা বাংলাদেশের মধ্যে ব্যতিক্রম উপজেলা। আমাদের সেনা বাহিনী আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সব সময় সক্রিয় রয়েছে।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সম্বনয়ক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, আমরা অনেক কষ্টের বিনিময় দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করেছি। নবীগঞ্জ উপজেলাকে কলঙ্ক মুক্ত রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। আমরা কোন সহিংসতায় জড়ায়নি, আমরা নিজেরা সরকারি মসজিদ মন্দির, সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা পাহাড়া দিয়েছি এই জন্য নবীগঞ্জে কোন অরাজকতা, হামলা, ভাঙচুর লুটপাট হয়নি।
নবীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও বিএনপির অন্যতম নেতা আলহাজ্ব ছাবির আহমদ চৌধুরী বলেন, আমরা কেন্দ্রীয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানে নির্দেশে আন্দোলনের শুরু থেকেই মাঠে কাজ করছি। নবীগঞ্জ উপজেলার মধ্যে কোন জায়গায় আমাদের দলীয় নেতা কর্মীরা কোন জায়গায় ভাঙচুর বা হামলা করেনি। তাদের কে সব সময় সম্প্রীতি বজায় রেখে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করার জন্য তদারকি করেছি এই জন্য নবীগঞ্জে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তাই নবীগঞ্জে মেন সংখ্যা লঘুরা নিরাপদ আছেন তেমনি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারার নিরাপদে চলাচল করছেন।
নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুন্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান চৌধুরী শেফু বলেন, নবীগঞ্জ উপজেলা হচ্ছে বাংলাদেশের মধ্যে একটি ব্যতিক্রম এখানে রাজনৈতিক ও সামাজিক সম্প্রীতি রয়েছে। তাই সরকারে পট পরিবর্তনের পর আমরা সার্বক্ষণিক ভাবে আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করছি। মসজিদ মন্দিরসহ বিভিন্ন জায়গায় মত বিনিময় করেছি। নবীগঞ্জ একটি সম্প্রীতির শহর সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। আশাবাদী আগামীতেও এই সম্প্রীতি বজায় থাকবে।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুক আলী বলেন, নবীগঞ্জ থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ৮০ ভাগ সদস্য ইতিমধ্যে যোগদান করেছেন, আশা করি বৃহস্পতিবারের মধ্যে সবাই যোগ দিবে। তিনি বলেন-বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অন্যান্য এলাকায় ভাঙচুর হলেও নবীগঞ্জ ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। ছাত্রজনতা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ থাকায় নবীগঞ্জের সরকারি স্থাপনায় কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। তাই ছাত্রজনতাকে ধন্যবাদ জানাই।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর