সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের কাছ থেকে ১২টি দেশের মুদ্রা, দুই দেশের মুদ্রা ও ৩টি কূটনৈতিক পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর সদরঘাট থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের আটক করা হয়। তাদের তল্লাশি করে এসব মুদ্রা ও পাসপোর্ট জব্দ করা হয়।
বুধবার (১৪ আগস্ট) নিউমার্কেট থানার হত্যা মামলার রিমান্ড আবেদনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির উপ-পরিদর্শক মো. সজীব মিয়া এসব তথ্য উল্লেখ করেছেন।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সালমান এফ রহমানের কাছে থেকে ১২ হাজার ৬২৪ ইউএস ডলার, ৬২০ সুইস ফ্রাংক, সাড়ে আট হাজার দিরহাম, ১৩ লাখ উজবেকিস্তানের সোম, ১১ হাজার ৬৫০ রিয়াল, ৭৭৯ সিঙ্গাপুরের ডলার, দেড়শো পাউন্ড, এক হাজার ৩২১ ইউরো, ৫০ হাজার টাকা, ছয় হাজার ২৩০ ভুটানের গুলট্রাম, এক হাজার রূপী, তিন হাজার ৩২০ থাইল্যান্ডের বাথ মুদ্রা জব্দ করা রয়েছে। পাশাপাশি তার কাছে থেকে সবুজ রঙের ৫টি ও একটি কূটনৈতিক পাসপোর্ট পাওয়া গেছে। এছাড়া আনিসুল হকের কাছে থেকে ১৭ হাজার ৫১২ ইউএস ডলার, ৭২৬ সিঙ্গাপুরের ডলার এবং ৩টি কূটনৈতিক পাসপোর্ট পাওয়া গেছে।
এদিন গ্রেপ্তার আসামি সালমান এফ রহমান ও আনিসুলকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্তের স্বার্থে তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মামুনুর রশিদের আদালত তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে মঙ্গলবার গোপন তথ্যের ভিত্তিতে নৌপথে পলায়নরত অবস্থায় রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গত ১৬ জুলাই কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় পাপোশের দোকানের কর্মচারী শাহজাহান আলীকে হত্যার অভিযোগে তার মা আয়শা বেগম (৪৫) একটি মামলা করেন।
এ মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগী শাহজাহান আলী নিউমার্কেট থানার মিরপুর রোডের বলাকা সিনেমা হলের গলির মুখে পাপোশের দোকানে কাজ করতো। প্রতিদিনের ন্যায় গত ১৬ জুলাই সকাল ৯টার দিকে দোকানে কাজ করার জন্য আসেন। ওইদিন সন্ধ্যায় অজ্ঞাতনামা একজন মামলার বাদীকে মোবাইলে কল দিয়ে জানায় যে, শাহজাহান আলী গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য শাহজাহানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে ছেলের মরদেহ শনাক্ত করেন তিনি।
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, কোটা সংস্কারের অজ্ঞাতনামা বিরোধীরা, জামায়াত, শিবির ও বিএনপির সশস্ত্র আসামিরা এক হয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে লোহার রোড, হকিস্টিক, লাঠিসোঁটা ইত্যাদি অস্ত্রসহ সায়েন্সল্যাব ক্রসিং হতে নিউমার্কেটের দিকে গাছ, লোহার রোলিং ভাঙচুর করতে করতে এগিয়ে আসে এবং রাস্তায় থাকা বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন দেয়। তখন কোটাবিরোধী অজ্ঞাতনামা আন্দোলনকারী, জামায়াত, শিবির ও বিএনপির সশস্ত্র আসামিরা এক হয়ে অতর্কিতভাবে নিউমার্কেট থানাধীন মিরপুর রোডের টিটি কলেজের বিপরীত পাশে কাদের আর্কেড মার্কেটের সামনে পাকা রাস্তার ওপর শাহজাহান আলীকে আক্রমণ করে।
মামলায় আরও বলা হয়, অজ্ঞাতনামা আসামিরা তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এতে তিনি রক্তাক্ত জখম হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকেন। পরে উপস্থিত পথচারীরা তাকে চিকিৎসার জন্য দ্রুত ধানমন্ডির পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থা খারাপ দেখে পপুলার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গত ১৬ জুলাই সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টা ৫ মিনিটের দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর