জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলের কক্ষ দখল ও হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং এ ঘটনায় আন্দোলনের সমন্বয়কদের বিতর্কিত করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী শেখ মুহাম্মদ মুয়াজের বিরুদ্ধে।
তিনি ইংরেজি বিভাগের ৫১ ব্যাচের (২০২১-২২ সেশন) ও কামালউদ্দিন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে মীর মশাররফ হোসেন হলে অবৈধভাবে অবস্থান করছিলেন।
এ ঘটনায় তাকে বৃহস্পতিবার দুপুরে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় হল প্রশাসন। এর আগেও মুয়াজের বিরুদ্ধে ৫২ ব্যাচের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে রাত ২ টায় হল থেকে বের করে দেওয়া, মুক্তমঞ্চে নারী শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্ত করা ও ৪৪ ব্যাচের এক শিক্ষার্থীকে মারধর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট চত্বর সংলগ্ন লেকের পানিতে চুবিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ রয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে হলের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) ঘটনায় অভিযুক্ত মুয়াজ তার ৫১ ব্যাচের ৫-৬ জন সহপাঠী মিলে হলের দ্বিতীয় তলার একটা কক্ষের তালা ভেঙ্গে দখলের চেষ্টা করে। এসময় ৪৬, ৪৭, ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করলে একসময় বাকবিতণ্ডায় সৃষ্টি হয়। এসময়, হলের ৪৬, ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ আচরণ করলে তারা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে মুয়াজ মোবাইল ফোনে ভিডিও করার চেষ্টা করলে তারা তার ফোন থেকে ভিডিও ডিলিট করতে বলেন। তবে তাকে শারীরিকভাবে আঘাত করা হয়নি বলে স্বীকার করেছে মুয়াজ।
এর আগে গত রোববার মীর মশাররফ হোসেন হলের ওয়ার্ডেন ও আবাসিক শিক্ষকদের উপস্থিতিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে 'হল সংস্কারের উদ্দেশ্যে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়৷ সভায় হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রস্তাবনা আসে যা থেকে শিক্ষকরা ছাত্ররাজনীতি বন্ধ ও হলের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার সিদ্ধান্তে উপনীত হন। সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়, কেউ আপাতত কোনো ধরনের রুম পরিবর্তন করবে না, হলের সকল শিক্ষার্থীর সিট হল প্রশাসন ব্যবস্থা করবে। অর্থাৎ পুরো দায়িত্বটা বর্তমানে হল প্রশাসনের। মিটিং এ উল্লেখ করা হয় জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে সিঙ্গেল রুমগুলোতে শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা করা হবে।
তবে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বুধবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে মুয়াজ ও তার কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে ৪৬ তম ব্যাচের এর এক শিক্ষার্থীর কক্ষের তালা ভাঙতে যায়। ঐ শিক্ষার্থী তখন তার মায়ের অসুস্থতাজনিত কারণে হলে ছিলেন না। এসময় ৪৬ ও ৪৭ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা তাদের আটকাতে গেলে তারা তাদের সাথে খারাপ আচরণ করে ও তাদেরকে 'মৌলবাদী' ট্যাগ দেয় তাদের দাড়ি থাকার কারণে এবং এক সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীকে ও মৌলবাদী আখ্যা দেয়।
তবে হল থেকে বের করার আদেশ দেয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ আসে মুয়াজের বিরুদ্ধে৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি 'হলের সব কক্ষ সমন্বয়করা দখল করে নিয়েছে','মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ভিডিও ডিলিট করা','ব্যাচভিত্তিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলায় হল থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ আনেন। এসময় তিনি ছাত্র ইউনিয়নে ঢাবি সংসদের সভাপতি মেঘমল্লার বসু, জাবি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি অমর্ত্য রায় ও সেক্রেটারি ঋদ্ধ্য অনিন্দ্য গাঙুলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন৷ তবে তার এ সকল চেষ্টাকে 'প্রকৃত ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা' হিসেবে দেখছেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শেখ মুহাম্মদ মুয়াজ বলেন, সিনিয়রদের সাথে খারাপ ব্যবহার হয়েছে এটা আমি অস্বীকার করবো না৷ তবে তারা জোরপূর্বক আমার মোবাইল কেড়ে নিয়ে চেক করেছে, ফোনের ভিডিও ডিলিট করেছে। অন্য কোথাও আমার সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা চেক করে দেখেছে৷ আমি ডিপার্টমেন্ট থেকে কথা বলে এই সিট পেয়েছি। ভাইরা যেখানে আমাদের ম্যানার শেখানোর কথা, সেখানে ২ তলার সিঙ্গেল রুমগুলোতে ৪৮-৪৯ এর সবাই যে যার মতো উঠে যাচ্ছিল, আমি তার প্রতিবাদ করেছি।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার অন্যতম সমন্বায়ক তৌহিদ সিয়াম বলেন, আমরা শুনেছি মুয়াজ আন্দোলনকে পুঁজি করে হলে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছে এবং হলে কিছু রুম ভাঙচুর করছে। হলের শিক্ষার্থীরা হল প্রশাসনের সহায়তায় তাকে হল থেকে বের করে দেয়। সে মীর মশাররফ হলের বৈধ শিক্ষার্থী না। তার এ্যলোটেড হল কামালউদ্দিন হল। সে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যাচার করে সমন্বয়কদের প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সমন্বয়করা হলে কোনে ধরনের রুম দখল করেনি এবং কোনো অন্যায়ের সাথে জড়িত না।
এ বিষয়ে হলের আবাসিক শিক্ষক বদিরুজ্জামান খোকন বলেন, মুয়াজ হলে তার কিছু বন্ধু-বান্ধব নিয়ে রুম দখলের চেষ্টা করছিল এবং হলে নৈরাজ্য পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করছিল। মুয়াজকে নিয়ে হলের সবার একটা আপত্তি ছিল, ওকে হলে রাখলে হলের পরিবেশ নষ্ট হতে পারে তাই আমরা হল প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে হল থেকে বের করে দিয়েছি। তার বিষয়ে এর আগেও অভিযোগ ছিল। সে আমাদের অবজার্ভেশনে ছিল। আজ না হয় কাল তাকে আমরা হলে থেকে বের করেই দিতাম। যেহেতু সে হলের পরিস্থিতি খারাপ করার চেষ্টা করছিল তাই আমরা তাকে হলে থেকে বের করতে বাধ্য হয়েছি। আর সে আমাদের হলের এলোটেড শিক্ষার্থীও ছিল না।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর