
গাজীপুরের কালীগঞ্জে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জেরে পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন প্রধান শিক্ষক। রবিবার (১৮ আগস্ট) সকালে উপজেলার জামালপুর আর এম বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগে আন্দোলন শুরু করলে প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মো. ফাইজ উদ্দিন প্রায় ১২ বছর যাবত ওই বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
জানা গেছে, নানা অনিয়ম, আর্থিক দুর্নীতি, শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য, অযোগ্যতা এবং অদক্ষতার অভিযোগে বেশ কিছুদিন ধরেই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছিলেন। অভিযোগ রয়েছে তিনি স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে ক্ষমতার দম্ভ দেখাতেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সফলতার পর বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরাও প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে। এরই জেরে আজ সকালে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কালীগঞ্জে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থী, বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী এবং অধিকাংশ শিক্ষক ও কর্মচারীরা বিদ্যালয়ের বাইরের প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন শ্লোগানে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে থাকে। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে বাধ্য হয়ে প্রধান শিক্ষক মো. ফাইজ উদ্দিন পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিজয় মিছিল করতে দেখা যায়।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. আতিক হাসান জানান, প্রায় এক যুগ ধরে এই বিদ্যালয়ে তিনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। বহুদিন ধরেই তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ করে আসছিলেন। তিনি ঠিকমতো শিক্ষকদের ক্লাস নিতে দিতেন না। ছাত্রদের থেকে বেতনের টাকা নিলেও সময়ের সাপেক্ষে তার কোন রসিদ দিতেন না। এজন্য ছাত্ররা সবাই বিক্ষোভ করেছে।
একই বিদ্যালয়ের অপর শিক্ষার্থী তাবাসসুম বলেন, স্যার সব সময় স্বৈরাচারী মনোভাব পোষণ করতেন। আমাদের যৌক্তিক দাবি গুলো কখনো তিনি শোনেননি। অনেক রূঢ় আচরণ করছেন তিনি আমাদের সাথে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের সাথে স্যারের সুসম্পর্ক থাকায় কেউ স্যারকে কিছু বলতে পারতো না। এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না। আর তাই আমরা আমাদের বিদ্যালয়ের স্বার্থে স্যারের পদত্যাগ পেয়েছি এবং তিনি তা করেছেনও।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রানা সরকার জানান, সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করলে তিনি বিষয়টি জানতে পারেন। পরে তিনি আরো কিছু শিক্ষার্থীকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় তারা প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে ঘটনার সত্যতা খুঁজে পান। পরে প্রধান শিক্ষককে বলেন পদত্যাগ করতে, প্রথমে আপত্তি করলেও পরে ছাত্রদের তোপের মুখে তিনি পদত্যাগ করতে রাজি হন বলেও জানান ওই সমন্বয়ক।
বিদ্যালয়ের করণিক আব্দুল গফুর বলেন, বিদ্যালয়ে তিনি কাউকে বিশ্বাস করতেন না। স্থানীয় প্রভাবশালীদের সাথে নিয়ে বিদ্যালয় সকল লেনদেন নিজ হাতে করতেন। কালেকশন করা অর্থের কোন হিসাব চাইলেও তিনি দিতেন না। ছাত্রদের থেকে বেতন আদায় করা এবং তার হিসাব রাখা এগুলো সাধারণত বিদ্যালয়ের করণীকের কাজ। এসব কাজ ও তিনি নিজেই করতেন। মোট কথা বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদে যারা থাকতেন তাদের সাথে করে নিয়ে বিদ্যালয়ের অর্থ অবৈধভাবে ভাগাভাগি করার জন্যই তিনি এমনটা করতেন। বারবার প্রতিবাদ করলেও তাকে থামানো যায়নি। আজকে ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে তিনি পদত্যাগ করেছেন।
এ ব্যাপারে কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম ইমাম ব্রাজিল টুলু বলেন, পদত্যাগের বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। পদত্যাগ পত্রটি হাতে পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর