
বাহারাইনে অবস্থানরত প্রবাসীদের কাছ থেকে সরকারি ভাবে জমি বরাদ্দের নামে ৩৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা কুমিল্লার প্রতারক আবুল। এ বিষয়ে সদর দক্ষিণ মডেল থানাসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে কয়েকটি অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী প্রবাসীদের পরিবার।
ভুক্তভোগী পরিবার ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়- কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার, ৫নং পশ্চিম জোরকানন ইউনিয়নের বানীপুর গ্রামের মৃত আবদুল খালেকের পুত্র আবুল ওরফে মেহেদীর বিরুদ্ধে বাহারাইনে কর্মরত বিভিন্ন জেলার ৭/৮ জন প্রবাসীর কাছ থেকে ৩৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে করার অভিযোগ পাওয়া যায়।
অভিযোগে প্রবাসী ও পরিবারের দাবি, আবুল ওরফে মেহেদীও ছিলেন। বাহারাইনের মানামা শহরের আমোটন অমল হাসান বুদাইয়া শহরে চাকুরি করতেন। সেই সুবাদে আশপাশের অন্যান্য বিভিন্ন জেলার প্রবাসীদের সাথে গড়ে উঠে গভীর সর্ম্পক। নিজেকে বাংলাদেশের একজন প্রভাবশালী নেতা পরিচয় দেন। বিএনপি সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে শুরু হয় প্রতারণা। হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশে চলে আসবেন এবং তার নিকটতম আত্মীয় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আছে। বাহরাইনে স্থানীয় ৭/৮ জন প্রবাসীদের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, পাসপোর্টের ফটোকপি সংগ্রহ করতে থাকেন। দেশে আসার পর তাদেরকে সরকারি ভাবে জমিই বরাদ্দ নিয়ে দিবে এবং স্থায়ী ভাবে আবাসনের ব্যবস্থার করার আশা দিয়ে চলে আসেন বাংলাদেশে।
কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর বাহারাইনে অবস্থারত প্রবাসীদের কে টাকা পাঠানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। মন্ত্রণালয়ে প্রত্যেক প্রবাসীদের জন্য জমি বরাদ্দের কাজ চলছে এবং সরকারি ভাবে বিভিন্ন দপ্তরে টাকা দিতে হবে বলে টাকা দাবি করেন। তার কথায় বিশ্বাস করে বাহারাইনে অবস্থানরত প্রবাসী কুমিল্লা জেলার লালমাই উপজেলার শাসনপাড় গ্রামের শাহজাহান, নরসিংদী জেলার পলাশ নতুন বাজার গ্রামের রবিউল হোসেন, ফেনী জেলার মনির হোসেন, চাঁদপুর জেলার কামরুল, সিরাজুল ইসলাম সহ আরো কয়েকজন প্রবাসীর অসহায় প্রবাসীরা তাদের আত্মীয় স্বজনরা প্রতারক আবুলের নিকট ৩৫ লক্ষ টাকা বাংলাদেশে পাঠায়। টাকা পেয়ে তাদের কে দেওয়া হয় ভুয়া ব্যাংকের কাগজ পত্র।
দীর্ঘদিন যাওয়ার পর যোগাযোগ করা হলে প্রতারক আবুল বলেন- তাদের টাকা ব্যাংকে জমা আছে কাজ না হলে টাকা ফেরত দিয়ে দিবেন। তার পর থেকে তাদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। প্রবাসীদের পরিবারের পক্ষ থেকে ব্যাংকে যোগাযোগ করা হলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানান- উল্লিখিত শাহজাহান ২২ এপ্রিল ২০২৩ ইং তারিখে সোনালি ব্যাংক শাখায় ৩লক্ষ টাকা, ২৬ জুন ২০২৩ইং তারিখে ২৪ লক্ষ ৩ হাজার জমা, মনির হোসেনকে ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইং তারিখে একই ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নং৬৮৭৮৬৩২২ নাম্বারে ১ লক্ষ টাকা জমার রিসিটগুলোর নামে কোন অ্যাকাউন্ট নেই। ব্যাংক ছাড়া ও বিকাশ নাম্বার সহ সর্ব মোট ৩৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রবাসীদের পরিবারের পক্ষ থেকে তার নিজ গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখতে পান বাড়ির দরজায় তালা ঝুলানো।
ভুক্তভোগী প্রবাসী শাহজাহান বলেন, আমরা প্রবাসীরা দীর্ঘদিন বিদেশে শ্রমিকের কাজ করে টাকা আয় করে নিজ জেলার লোক হওয়ায় আবুলকে বিশ্বাস করে আমি এবং আমার সহকর্মীদের কাছ থেকে রাজধানী ঢাকায় আমাদের কে আবাসনের ব্যবস্থা করে দিবে সেই সুবাদে বিভিন্ন সময়ে ৩৫ লক্ষ টাকা দিয়েছি। আমাদের সব টাকা আত্মসাৎ করায় আমরা এখন পথের ফকির হয়ে গেছি। আমি এখন কি করবো উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। স্ত্রী পোলা মাইয়া লইয়া এখন না খাইয়া দিন কাটাই। এ ঘটনার পর শাহজাহানের পরিবারের পক্ষ থেকে সদর দক্ষিণ মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশ ও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা প্রতারক আবুলের বাড়িতে গিয়ে দেখতে পান দরজায় তালা।
স্থানীয়দের এ বিষয়ে জানতে চাইলে কামাল নামে এক ব্যক্তি বলেন- দীর্ঘদিন যাবৎ সে এলাকা থেকে উধাও পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় থাকে আমরা জানি না। তবে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিনিয়ত তাকে খোঁজ করতে লোকজন আসেন। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীদের পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে কয়েকটি অভিযোগ দাখিল করা হয়।
এ বিষয়ে সদর দক্ষিণ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি আলমগির হোসেন বলেন- ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। আমরাও তদন্তে গেলে তাকে বাড়ি যাওয়া যায়নি। আমরা তাকে অবশ্যই গ্রেফতার করবো।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর