বেতন ভাতা থানায় হাজিরার জন্য যাতায়াত ও দৈনিক ভাতা প্রতি গ্রাম পুলিশের লাখ টাকা ওপরে বকেয়া থাকায় ধারদেনা করে সংসার চালাতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার আবেদন জানিয়েও এর কোনো সুফল মিলছেনা। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে ওই সকল গ্রাম পুলিশ ও তাদের পরিবার পরিজন মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
এমনি ঘটনা ঘটেছে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ৫৬ জন ও মধ্যনগর উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে ৩৫জন গ্রাম পুলিশ কর্মরত মোট ৯১জন গ্রাম পুলিশ। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন রাজস্ব খাতে পর্যাপ্ত আয় না হওয়ার কারণে ইউপি খাতের বেতন ভাতা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে জেলার ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলার ৯১জন গ্রাম পুলিশ কর্মরত আছেন। গ্রাম পুলিশের ইউপি অংশের বেতন ভাতা এবং থানায় হাজিরার জন্য যাতায়াত ও দৈনিক ভাতা সাধারণত সাব রেজিস্টারের কার্যালয় হতে প্রাপ্ত স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করের ১% আয় হতে পরিশোধ করা হয়। সরকারি অংশ থেকেও ইউপি অংশের সমপরিমাণ বেতন ভাতা ও উৎসব ভাতা প্রদান করা হয়। ইউপি অংশ পরিশোধের ক্ষেত্রে স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করের ১% হতে সংকুলান না হলে হাট বাজার ইজারালব্দ আয়ের ৪১% হতে প্রদানের জন্য নির্দেশনাও রয়েছে।
মধ্যনগরে প্রতি গ্রাম পুলিশের ১ লাখ ২৯ হাজার ৩৫০টাকা বকেয়া রয়েছে। এর মধ্যে ইউপি অংশের উনিশ মাসের বেতন ভাতা ৬১ হাজার ৭৫০ টাকা, দুই মাসের সরকারি অংশের বেতন ভাতা ৬ হাজার ৫০০ টাকা, তিনটি উৎসব ভাতা ৯ হাজার ৭৫০ টাকা এবং থানায় তেতাল্লিশ মাসের যাতায়াত ও দৈনিক হাজিরা ভাতা ৫১ হাজার ৬০০ টাকা।
অন্যদিকে ধর্মপাশায় একেকজন গ্রাম পুলিশের ১ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা বকেয়া রয়েছে। এর মধ্যে ইউপি অংশের এগার মাসের বেতন ভাতা ৩৫ হাজার ৭৫০ টাকা,এক মাসের সরকারি অংশের বেতন ভাতা ৩ হাজার ২৫০টাকা,দুটি উৎসব ভাতা ৬ হাজার ৫০০ টাকা এবং থানায় ষাট মাসের যাতায়াত ও দৈনিক হাজিরা ভাতা ৭২ হাজার টাকা।
সে হিসেবে ধর্মপাশায় ৫৬ জনের ৬৫ লাখ ৮০ হাজার ও মধ্যনগরে ৩৫ জনের ৪৫ লাখ ২৭ হাজার ২৫০ টাকাসহ মোট ১ কোটি ১১ লাখ ৭ হাজার ২৫০ টাকা বকেয়া রয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার ধর্মপাশার গ্রাম পুলিশদের ইউপি অংশের এক মাসের,সরকারি অংশের এক মাসের ও একটি উৎসব ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন।
বাংলাদেশ গ্রাম পুলিশ কর্মচারী ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ধর্মপাশা সদর ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ আশিক মিয়া জানান, তাঁর লাখ টাকার ওপরে বেতন ভাতা বকেয়া থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন তিনি। সংসার চালাতে ও সন্তানদের লেখাপড়া করাতে ধারদেনা করতে হয়েছে। পাওনাদারদের টাকা সময়মতো পরিশোধ করতে পারছেন না তিনি। অধিকাংশ গ্রাম পুলিশেরই তাঁর মতো অবস্থা।
মধ্যনগর ইউপি চেয়ারম্যান সঞ্জিব রঞ্জন তালুকদার টিটু বলেন,বেতন ভাতা বকেয়া থাকায় গ্রাম পুলিশেরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাদের বেতন পরিশোধের জন্য সমন্বয় সভাতেও বিষয়টি একাধিকবার উত্থাপন করেছি।
সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেন বলেন, সময়মতো বেতন ভাতা না পেলে কাজের আগ্রহ কমে। তবুও গ্রাম পুলিশেরা উৎসাহের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। দ্রুত বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের ব্যবস্থা করা উচিত।
মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অতীশ দর্শী চাকমা বলেন, সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের আয়ের ওপর গ্রাম পুলিশের বেতন ভাতা নির্ভর করে। আয় কম হওয়ায় বকেয়া জমেছে। সরকারি অংশের বকেয়া দ্রুত পরিশোধ করা হবে।
ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন বলেন,রাজস্ব খাতে পর্যাপ্ত আয় না হওয়ার কারণে ইউপি খাতের বেতন ভাতা দেওয়া সম্ভব হয়না। তবুও বৃহস্পতিবার কিছু বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি বকেয়া পরিশোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর