বরগুনার আমতলীতে সেনাবাহিনীর চাকুরী ও শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদের তথ্য গোপন করে তেফাজ্জেল হোসেনের নামের এক মুক্তিযোদ্ধা'র গেজেটভুক্ত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তোফাজ্জেল হোসেনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন অভিযোগকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা এটিএম রফিকুল ইসলাম।
তোফাজ্জেল হোসেন আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের কালিবাড়ী এলাকার মৌলভি আয়নুদ্দিন কাজীর ছেলে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা এটিএম রফিকুল ইসলামের অভিযোগ, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তোফাজ্জেল হোসেন ছিলো মাত্র ৯বছর বয়সী প্রাথমিকে পড়া একজন শিশু। ২০০৫ সালে তোফাজ্জেলের স্ত্রীর ভাই সাবেক উপজেলা কমান্ডার একেএম সামসুদ্দিন শানু প্রভাব খাটিয়ে তাকে অনৈতিকভাবে মুক্তিযোদ্ধা গেজেটভুক্ত করতে যাচাই-বাছাই থেকে শুরু করে পরবর্তী সকল কার্যক্রমে সহযোগিতা করেছেন। এসএসসি পাশের সনদ অনুসারে ১৯৬২ সালের দুই এপ্রিল তারিখ জন্ম নেওয়া তোফাজ্জেল হোসেন স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ৮ বছর ১১ মাস ২৫ দিন বয়সী প্রাথমিকের ছাত্র ছিলেন। এসএসসি পাশের সনদে সেনাবাহিনীতে চাকুরী করা তোফাজ্জেল হোসেন ২০০৫ সালে অবসরে যান।
২০০৫ সালে আমতলী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের দায়িত্বে থাকা তোফাজ্জেল হোসেনের স্ত্রীর বড় ভাই একেএম শামসুদ্দিন শানু প্রভাব খাটিয়ে ও কারসাজির মাধ্যমে ৮ম শ্রেণি পাশের শিক্ষা যোগ্যতা সনদ দেখিয়ে তোফাজ্জেল হোসেনকে মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করেন।( গেজেট নং-৪৭০)। গ্যাজেটের তথ্যানুসারে তোফাজ্জেল ২০০৯ সালে থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রাপ্ত হয়ে ১৫ বছর যাবৎ অনৈতিকভাবে সম্মানী ভাতাসহ রাষ্ট্রীয় অন্যান্য সুবিধা ভোগ করে আসছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা এটিএম রফিকুল ইসলাম আরো অভিযোগ করে বলেন, এসএসসি পরীক্ষা পাশ থাকা সত্ত্বেও তিনি কিভাবে অষ্টম শ্রেণি পাশ দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন?এছাড়াও ক্যাপ্টেন মেহেদী হাসানের স্বাক্ষর জাল করে তোফাজ্জেল ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ তৈরি করেছেন।
চুনাখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুব উল আলমের স্বাক্ষরিত এক প্রত্যায়ন পত্রে দেখা যায়, তোফাজ্জেল হোসেন ১৯৭৮ সালে আমতলী উপজেলার চুনাখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তৃতীয় বিভাগে কৃতকার্য হন। তার এসএসসি পরীক্ষা পাশের রোল নং-১১৩, নিবন্ধন নং-২৩৪৩৫ ও শিক্ষাবর্ষ ১৯৭৬-৭৭। তার জন্ম তারিখ-১৯৬২-০৪-০২।
কয়েকজন স্থানীয়দের সাথে কথা হলে তারা জানান, ১৯৭১ সালে মৌ. আয়নুদ্দিন কাজীর ছেলে তোফাজ্জেল হোসেন প্রাইমারি স্কুলে লেখাপড়া করতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন শিশু। সেনাবাহিনীর চাকুরী থেকে অবসরে আসার কিছুদিন পর শুনতে পাই তিনি মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন। কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন তা আমাদের বুঝে আসে না। এ বিষয়টি তদন্ত করলেই আসল রহস্য বেড়িয়ে আসবে।
তোফাজ্জেল হোসেনের সাথে কথা হলে বলেন, চুনাখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করিনি এবং সেনাবাহিনীতে চাকুরী করি নাই। আমি অষ্টম শ্রেণি পাশের সনদ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছি। তবে কিভাবে আপনি সেনাবাহিনীর অবসরভাতা তুলছেন এমন প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান।
আমতলী উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার একেএম সামসুদ্দিন শানু বলেন, তোফাজ্জেল আমার ভগ্নিপতি। যারা যাচাই বাছাই করেছেন তারা বলতে পারবেন কিভাবে তোফাজ্জেল মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন?
তবে আপনীওতো তার পক্ষে প্রত্যায়ন দিয়েছেন তা দিলেন কিভাবে এমন প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান। তিনি আরো বলেন, আমার ভগ্নিপতি সেনাবাহিনীর চাকুরী শেষে অবসর নিয়েছেন।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর