বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতাকে নির্বিচার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে দলটির নিবন্ধন বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে এমনটি বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশিত হয়েছে।
সোমবার(১৯ আগস্ট) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় মানবাধিকার সংগঠন সারডা সোসাইটি এই রিট করে।
বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে বলে জানা গেছে।
সূত্রমতে, রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জন বিভাগের সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, আইনসচিব, নির্বাচন কমিশন সচিব, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বিএফআইইউর প্রধান এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বায়ক ও সহসমন্বয়কদের বিবাদী করা হয়েছে।
জনমনে প্রশ্ন যে আওয়ামী লীগ কি আদৌও নিষিদ্ধ হবে অথবা প্রশ্নটা এভাবেও আসছে যে আওয়ামীলীগের মত বড় এবং জনসমর্থনপুষ্ট একটি দলের নিবন্ধন বাতিল করে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা কি আদৌও সম্ভব বা বাস্তব সম্মত?
এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে আমরা একটু পেছনে ফিরে যায়, একটি নির্দিষ্ট দলের নিবন্ধন বাতিল এবং পরবর্তীতে তাদেরকে নিষিদ্ধ করার ঘটনা প্রবাহ আরেকবার স্মরণ করা যাক,
আদালতের রায়ে নির্বাচন কমিশন ২০১৩ সালে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে। জামায়াতের পক্ষ থেকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছিল। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের পক্ষের আপিল খারিজ করে দিয়েছেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের নেতিবাচক ভূমিকা এর প্রধান কারণ বলে ধরা হয়।
চলতি বছরের ১ আগস্ট বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জামায়াতে ইসলামি ও ইসলামি ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। সরকারের নির্বাহী আদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামি, ছাত্রশিবির ও তাদের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী হিসেবে দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ হয়েছে।
এখন এই নিবন্ধে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ নিয়ে আলোচনায় আগের প্রশ্নটি আরেকবার আনা যাক যে, আওয়ামীলীগের মত বড় এবং জনসমর্থনপুষ্ট একটি দলের নিবন্ধন বাতিল করে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা কি আদৌও সম্ভব বা বাস্তব সম্মত? এখানেই পালটা প্রশ্ন আসতে পারে যে জামায়াতে ইসলামি কি এদেশের বড় একটি জনগোস্টির জনসমর্থনপুষ্ট নয়?, জামায়াতে ইসলামি কি জনসমর্থন এবং সাংগঠনিক পরিধিতে বড় রাজনৈতিক দল নয়। জামায়াতে ইসলামি ঠিক এ মুহূর্তে কতটুকু জনপ্রিয় সেটি নিয়ে একটি সাম্প্রতিক জরিপ দেখে নেওয়া যাক, সম্প্রতি জবিয়ানস নামক ফেসবুক পেজে একটি অনলাইন জরিপে জানতে চাওয়া হয়, এই মুহূর্তে দেশের কোন রাজনৈতিক দলকে আপনি সবচেয়ে সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল ও দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে সবচেয়ে বেশি সক্ষম বলে আপনি মনে করেন? সেখানে পোলে কয়েক লাখ মানুষের ভোট পড়েছে এবং এটি উল্লেখযোগ্য যে অবিশ্বাস্যভাবে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে ৭২% ভোট পড়েছে। যেহেতু এটি কোন ছবি নয় সরাসরি ফেসবুকের পোল সামনে এসেছে তাই এখানে এডিট করার সুযোগ নেই, তবে ৭২% ভোট পেলেও ১৮ কোটি মানুষের দেশে এই কয়েক লাখের ৭২% সমর্থন দলটিকে খুব বেশি শক্ত অবস্থান না দিলেও এটা মেনে নিতে বাধা নেই যে জামায়াতে ইসলামের প্রতি যে মানুষের আস্থা আছে এই পোলে সেটি অনেকটাই প্রতিফলিত হয়েছে। জামায়াতে ইসলাম নিয়ে অনেক ইতি-নেতি কথা বলা যায়, করা যায় অনেক আলোচনা সমালোচনা। কিন্তু আজ সেদিকে যাবো না। যে কারণে এ লেখাই দলটিকে জড়ালাম, সেটি হলো একটি জনসমর্থনপুষ্ট দলকে নিষিদ্ধ করা যায় কিনা?
গেছে তো। জামায়াতে ইসলামি এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। তবে কি আওয়ামী লীগকেও নিষিদ্ধ করা যাবে?
তবে কি হবে?
আসুন একটু বিস্তারিত আলোকপাত করি।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ’ এই ধরনের রিট রাজনৈতিক ও আইনি উভয় ক্ষেত্রেই ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। আইনি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে:
১. সাংবিধানিক প্রেক্ষাপট: বাংলাদেশ সংবিধানে রাজনৈতিক দলের অধিকার এবং তাদের কার্যক্রম পরিচালনার স্বাধীনতা সংরক্ষিত। তাই, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার রিটে সংবিধানের কোনো ধারার লঙ্ঘন হচ্ছে কিনা, তা বিবেচ্য হবে।
২. আইনি যুক্তি ও প্রমাণ: রিটে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা কতটা শক্তিশালী ও প্রমাণসম্মত, তা বিচার প্রক্রিয়ায় মূল ভূমিকা পালন করবে। অভিযোগের পক্ষে যদি পর্যাপ্ত প্রমাণ না থাকে, তবে রিট খারিজ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৩. রাজনৈতিক প্রভাব: বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণ একটি বিশাল রাজনৈতিক প্রভাব ফেলবে। ফলে হাইকোর্টের বিচারকরা কেসটি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিচার করবেন এবং সম্ভাব্য রাজনৈতিক অস্থিরতা সম্পর্কে সতর্ক থাকবেন।
৪. সংশ্লিষ্ট পক্ষের অবস্থান: রাষ্ট্রপক্ষ, প্রতিপক্ষ, এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পক্ষের অবস্থান ও যুক্তি বিচারকদের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে।
৫. প্রত্যাশিত ফলাফল: বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর আদালতের রায় কী হতে পারে, তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে রিটের প্রভাব ও আইনগত অবস্থান বিচার করে আদালত একটি ভারসাম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।
দেশ নিয়ে এখন নানান অস্থিরতা, মনে হচ্ছে এদেশ নতুন স্বাধীন একটি রাষ্ট্র, তাই স্বাভাবিক ভাবেই রাষ্ট্রের নানা যজ্ঞের সংস্কার প্রয়োজন, এরই মাঝে আওয়ামী লীগের মত দলের নিবন্ধন বাতিল করে নিষিদ্ধ করা হলে দেশে আরও বেশি অস্থিরতা তৈরি হবে এমনটিই বিবেচ্য। কিন্তু সাময়িক বাস্তবতায় যা হওয়ার কথা নয় বা যেটি মানুষ কখনো কল্পনাও করেনি এমন কিছুও ঘটে যায়, ১৬ বছরের আওয়ামী লীগের শাসনের পর পতনের যে প্রক্রিয়া সেটাও কেউ কল্পনা করেনি। তাই কিছুই যায় না বলা, কিছু সময় থাকে শুধু সময়ের সাথে চলা।
তাই এখন জনমনে প্রশ্ন, ‘কি হবে, তবে!’
লেখক: তাজবীর সজীব
উপদেষ্টা সম্পাদক, বিডি২৪লাইভ ডট কম
সম্পাদক, দৈনিক অধিকার
সহকারী অধ্যাপক, সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি
(খোলা কলাম বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। বিডি২৪লাইভ ডট কম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)
সর্বশেষ খবর