হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চল খ্যাত দিনারপুরে পাহাড় কাটা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর অভিযুক্ত দুই জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) দুপুরে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. মাসুক আলী।
হবিগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. মমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে পাহাড় কাটায় জড়িত শতক গ্রামের মরছত উল্লার ছেলে আব্দুর রহিম (৫২) ও বাহুবলের পুটিজুড়ি গ্রামের সোহেল মিয়া (৩৮) আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
১৬ আগস্ট দৈনিক সমকাল সহ বিভিন্ন পত্রিকায় নবীগঞ্জে পাহাড় কাটা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদে উল্লেখ করা হয়- উপজেলার দেবপাড়া, গজনাইপুর ও পানিউমদা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত দিনারপুর পরগনা। এটি উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। ২০১৭ সালে জেলার সব পাহাড় ও টিলা সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে বছরের অধিকাংশ সময়জুড়ে দিনারপুর এলাকার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কেটে মাটির রমরমা ব্যবসা করছে একটি অসাধু চক্র। সম্প্রতি ওই এলাকায় গিয়ে জানা যায়, গত (১১ আগস্ট) রোববার থেকে উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের শতক গ্রামে একটি পাহাড় কাটা শুরু হয়। বাহুবল উপজেলার পুটিজুরি এলাকার ঠিকাদার সোহেল মিয়ার তত্ত্বাবধানে স্থানীয় একটি চক্র এস্কাভেটর দিয়ে মাটি কাটছে। পরে ট্রাক ভর্তি করে সেই মাটি বিক্রি করা হচ্ছে পাশের মৌলভীবাজারের সদর উপজেলার আথানগিরি এলাকায়। পাহাড় কাটার ফলে আশপাশের বাড়িঘর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাহাড় কাটা বন্ধে প্রতিকার চেয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয়রা। শতক গ্রামের বাসিন্দা অলি মিয়া, মুবেদ মিয়া, আমিনুর রহমান ও পাবেল আহমেদ যৌথভাবে এই অভিযোগ দেন।
সংবাদ প্রকাশের পর বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় হবিগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. মমিনুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পরে হবিগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. মমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে পাহাড় কাটায় জড়িত শতক গ্রামের মরছত উল্লার ছেলে আব্দুর রহিম (৫২) ও বাহুবলের পুটিজুড়ি গ্রামের সোহেল মিয়া (৩৮) বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশ অমান্য করে পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণ ব্যতিরেকে পাহাড় কর্তনের অভিযোগে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে নবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তভার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কার্যালয়কে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য তোফাজ্জল সোহেল বলেন- পরিবেশ অধিদপ্তর মামলা দায়ের করলেই দায়িত্ব শেষ নয়, কর্মকর্তারা বদলি হলে নতুন কর্মকর্তা যোগদান করলে পুরোনো ফাইল নিয়ে নাড়াচাড়া বন্ধ হয়ে যায়, এমনটা যেন না হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর মামলা দায়েরের পর যেন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে পরিবেশ ধ্বংসে জড়িত ব্যক্তির যাতে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা যায় সে ব্যবস্থা করে। পরিবেশ রক্ষায় যেহেতু তারা চাকুরি করেন কর্মকর্তাগণ যেন পরিবেশ রক্ষায় মনোযোগী হন সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুক আলী বলেন- পাহাড় কাটার ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলা নং-০২ নবীগঞ্জ থানায় রুজু করা হয়েছে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর