
ভোলার চরফ্যাসনে ভূমি মালিকের দেয়া পাকা সীমানা প্রাচীরে ৬ মাস অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন ৪ শিক্ষার্থীসহ তিন পরিবারের ১৫ সদস্য।
অবরুদ্ধ পরিবারের সদস্যরা সমাজপতিদের ধারে ধারে ঘুরেও কোন সুরাহ না পেয়ে তিন পরিবারের সদস্যরা ৬ মাস হাঁটু পানি ভেঙে ও সীমানা প্রাচীর দিয়ে মই বেয়ে চলাচল করলেও টনক নড়েনি ভূমি মালিক প্রভাবশালী সাবিনা আক্তারের। বহাল আছে তিন পরিবারের বসত বাড়ি ঘিরে নির্মিত সীমানা প্রাচীর। জিন্নাগড় ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে উত্তর মাদ্রাজ গ্রামে জামাল উদ্দিনের পরিবারসহ তিন পরিবারকে ঘিরে ঘটছে এমন নির্মমতা। যার নেপথ্যে রয়েছে বসতভিটা ও জমি জবর দখলের প্রচেষ্টা।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) এ ঘটনায় ভুক্তভোগী জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বারবারে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগটি খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী মো. জামাল উদ্দিন জানান, ১০ বছর আগে জিন্নাগড় ইউনিয়নের উত্তর মাদ্রাজ মৌজায় বিএস ১৯২৯ নম্বর খতিয়ানে তিনি ওই গ্রামের আবদুস সালাম মাস্টার মেয়ে সাবিনা আক্তারের কাছ থেকে ৪৮ শতাংশ জমি খরিদ করে বসত বাড়ি নির্মাণ ও পাকা ঘর নির্মাণ করে পরিবার নিয়ে ভোগদখলে আছেন।
সম্প্রতি সময়ে সাবিনা আক্তার ওই জমি তার কাছে বিক্রি করার জন্য প্রস্তাব দেন। এতে তিনিসহ অপর অংশিদাররা রাজি না হলে তিনি ক্ষিপ্ত হন । পরে ৬ মাস আগে তিনি চলাচলের সড়কসহ তার জমির অংশে সীমানা প্রাচীর তুলে তার পরিবারকে অবরুদ্ধ করে দেন। সীমানা প্রাচীর তুলে দেয়ার জন্য তার কাছে একাধিকবার ধর্ণা ধরেও কোন সুরাহ হয়নি।
তিনি আরো জানান, তাদেরকে দেয়া দলিলে চলাচলের সড়ক উল্লেখ থাকলেও সাবিনা আক্তর প্রভাব খাটিয়ে তাদের বসত বাড়ি হাতিয়ে নিতে জোরপূর্বক সীমানা প্রাচীর তুলে অবরুদ্ধ করে দেন। এতে তাদের তিন পরিবারের ৪ শিক্ষার্থীসহ বিপাকে পরেছেন ১৫ সদস্য। চলতি বর্ষার মৌসুমে অন্যের আবাদি জমি দিয়ে হাঁটু পানি ভেঙে যাতায়াত করতে হচ্ছে স্কুল ও কলেজ গামী ৪ শিক্ষার্থীসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের। এমন নির্মমতার শিকার হলে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।
কলেজ শিক্ষার্থী মোসাম্মদ ইমু আক্তর জানান, তিনি একটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়রনরত আছেন। সীমানা প্রাচীরের কারণে চলাচলের পথ বন্ধ থাকায় কলেজে যাওয়া বন্ধ করেছে তার। অন্যের আবাদি জমি দিয়ে হাঁটু পানি দিয়ে কলেজে যেতে হলে ভিজে যেতে হয় তার। এমন নির্মমতার শিকার হয়ে কলেজ যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে তার। এতে তার লেখা পড়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখে দিয়েছে। বিশেষ প্রয়োজনে কলেজ যেতে হয়ে সীমানা প্রাচীরের ওপর দিয়ে মই দিয়ে পারাপার হচ্ছেন তারা।
এসএসসিতে পড়–য়া শিক্ষার্থী লামিয়া বেগম জানান, হাঁটু পানি দিয়ে স্কুলে যাওয়ার পথে একাধিক বার ডোবায় পরেছেন তিনি। তাই প্রায় ৩ মাস স্কুলে যাননি তিনি। বর্ষার মৌসুমে স্কুলে যেতে হলে তিনিসহ অপর শিক্ষার্থীরা সীমানা প্রচীরের ওপর মই দিয়ে পারাপার হন তারা।
ভুক্তভোগী জামাল উদ্দিনের স্ত্রী রুমা বেগম জানান, চার সন্তান ও স্বামী- বৃদ্ধা শাশুড়িকে নিয়ে তার ৬ মাস বাড়িতে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন। অসুস্থ শাশুড়ি হালেমা বেগম দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ হয়ে শয্যসহি হয়ে আছেন। সমীনা প্রাচীরে অবরুদ্ধ থাকায় তাকে চিকিৎসা করাতে পারছেন না তারা।
বিক্রিত ভূমি মালিক সাবিনা আক্তার জানান, আমার জমিতে আমি সীমানা প্রাচীর দিয়েছি। তার কিভাবে বাড়ি থেকে বের হবে সেটা তাদের ব্যাপার। দলিলে চলাচলের পথ লেখা থাকলেও তিনি কেন চলাচলের পথ ঘিরে প্রাচীর দিয়েছেন এমন প্রশ্নে তিনি এড়িয়ে যান।
স্থানীয় জিন্নাগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন জানান, ঘটনাটি শুনেছি। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসবো।
চরফ্যাসন থানার ওসি মো. শাখাওয়াত হোসেন জানান, এ ঘটনায় কোন অভিযোগ পাইনি অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নওরীন হক জানান, অবরুদ্ধ পরিবারের পক্ষ থেকে একটি লিখত অভিযোগ পেয়েছি। তবে এমন নির্মম ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সহকারী কমিশনার(ভূমি) মুহাম্মদ সালেক মুহীত জানান, অভিযোগটি এখনও হাতে পাইনি। অভিযোগটি পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর