সাভারের আশুলিয়ায় গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় মো. সুজন ইসলাম (২৫) ও সাব্বির ইসলামের (৪৪) নিহতের ঘটনায় আশুলিয়া থানায় পৃথক দুটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বুধবার (২১ আগস্ট) দুটি পৃথক হত্যা মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে নিহত সুজনের বাবা মো. সহিদুল ইসলাম বাদি হয়ে হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় লালমনিরহাট-১ ( হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম) আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. মোতাহার হোসেনসহ আওয়ামী লীগের ১২৮ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। অপর মামলাটি করেছেন নিহত সাব্বিরের মেয়ে মোছা: লিজা আক্তার (২০)। এ মামলায় ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. সাইফুল ইসলামসহ আওয়ামী লীগের ৭৬ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
নিহত মো. সুজন ইসলাম লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের পশ্চিম সারডুবি এলাকার বাসিন্দা। হাতিবান্ধা এলাকায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ায় ওই সময়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হুমকির কারণে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় মামাতো ভাইয়ের ভাড়া বাসায় আশ্রয় নিয়ে ৫ আগস্ট বাইপাইলের আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। অপরদিকে সাব্বির ইসলাম নেত্রকোণা জেলার আটপাড়া থানার বানিয়াজান এলাকার শুক্কুর আলীর ছেলে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বর্তমানে গাজীপুরের সারদাগঞ্জ এলাকায় বসবাস করছিলেন। তিনি আশুলিয়ার বুড়ির বাজার এলাকায় তেলের মিলে চাকুরি করতেন।
মো. সহিদুল ইসলামের দায়ের করা মামলায় লালমনিরহাট-১ (হাতিবান্ধা-পাটগ্রাম) আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. মোতাহার হোসেন (৬০), লালমনিরহাট-৩ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও লালমনিরহাট জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মতিয়ার রহমান (৬৬), জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সফুরা বেগম রুমি (৪৫), হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বাচ্চু (৫০), পাটগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন বাবুল (৪৮), হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা জামাল সোহেল (৫০), হাতীবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান সোহাগ (৪২), হাতীবান্ধার পশ্চিম বেজ গ্রামের মো. সেলিম হোসেন (৪৪), উপজেলার বড়খাতা এলাকার মো. আলমগীর হোসেন রন্টু (৫৫), মো. কবির হোসেন (৪২), দিলীপ কুমার সিংহ (৪২), লালমনিরহাট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. রাশেদ জামান বিলাশ (২৭), জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমন খান (৪৭), আমিনুল খান (৪৮), মো. সুলতান আহমেদ রাজন (৪০), মো. স্বাধীনকে (৩৩) এ হত্যা মামলায় পরিকল্পনা করার অভিযোগে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া মামলায় আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন ভুঁইয়া (৪৫), সাভার উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন খান (৫০), আশুলিয়া থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কবীর সরকার (৪৫), শাজাহান মন্ডল (৪৮), এনামুল হক মুন্সি (৪৭), মুঞ্জ দেওয়ান (৫৮), মো. মোয়াজ্জেম হোসেন (৫৫), মোতালেব ব্যাপারী (৫৫), শাহাবুদ্দিন মাদবরসহ (৫৮) আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বমোট ১২৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০০-২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজহারে বলা হয়েছে, সুজন ইসলাম গত জুন ও জুলাই মাসে হাতিবান্ধা এলাকায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। এ কারণে ১-১৬ নম্বর আসামি আন্দোলন বন্ধে তাকে চাপ দেন এবং মাহমুদুল হাসান সোহাগের বাসায় যোগসাজশ ও শলাপরামর্শ করেন। তাদের ভয় ও চাপে সুজন গত ৩০ জুলাই হাতিবান্ধা থেকে আশুলিয়ার বাইপাইলে মামাতো ভাই গোলাম মোস্তফার ভাড়া বাসায় চলে আসেন। সেখানে অবস্থানকালে গত ৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বাইপাইল এলাকায় চলমান বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। এসময় আগ্নেয়াস্ত্র, পিস্তল, লোহার রড, বাঁশ, হকিস্টিক ও লাঠিসোটাসহ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মামলায় উল্লিখিত আসামিরা সেখানে পৌঁছে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালান। একপর্যায়ে অজ্ঞাত আসামিরা ঘটনাস্থলে থাকা সুজনকে মাথায় গুলি করে। গুলি কানের এক পাশ দিয়ে ঢুকে মাথার খুলির মাঝখান দিয়ে বের হয়ে যায়। এরপর আসামিরা একইভাবে আরও প্রাণহানি ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। আহত সুজনকে স্থানীয়রা গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে মোছা: লিজা আক্তারের দায়ের করা মামলায় আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, মামলায় সাভারের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ও আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম (৫৫), আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য রাজন ভুঁইয়া (৩৮), শাহাবুদ্দিন মাদবর (৫৮), ইয়ারপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন ভুঁইয়া (৫০), আতাউর রহমান (৫০), এনামুল হক মুন্সি (৪৭), সাদেক ভূঁইয়া (৬০), রাজু দেওয়ান (৪৫), মোশাররফ হোসেন মুসা (৫১), হাসান কবির (৫৫), মীলন মীর (৫০), আরিফ মাদবর (৪৫), সানি ভূঁইয়া (৪৫), উজ্জ্বল ভূঁইয়া (৩৫), হেলাল মাদবরসহ (৫৫) নামীয় ৭৬ জন। এছাড়া অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট সাব্বির ইসলাম বাসা থেকে কাজের উদ্দেশ্যে বের হন। দুপুর ২ টার দিকে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন আশুলিয়ার বাইপাইল মোড়ে করিম সুপার মার্কেটের সামনে তাঁর মৃতদেহ পরে আছে। পরে পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সাব্বিরের মাথার পেছনের দিকে গুলিবিদ্ধ ও মৃত অবস্থায় পরে থাকতে দেখেন। পরে মরদেহ নেত্রকোণায় গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
এজহারে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, পরে খোঁজ নিয়ে নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, মামলায় উল্লিখিত ১ থেকে ১০ নাম্বার নামীয় আসামিদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ঘটনাস্থলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সকলের উপর হামলা চালায়। পালানোর চেষ্টা করলে তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় হামলাকারীরা। ওই সময় গুলিতে সাব্বির ইসলাম নিহত হন।
এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, গতকাল মঙ্গলবার দুটি পৃথক হত্যা মামলা হয়েছে। এদুটি মামলায় ২০৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর