
ভারী বৃষ্টি ও ভারতীয় ঢলের পানিতে খাগড়াছড়ির বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রায় ৫০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছেন। বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ঘর-বাড়ি। তীব্র মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে প্রায় দুই লাখ মানুষ। চতুর্দিকে বাড়ছে হাহাকার। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব।
দেড় মাসের ব্যবধানে চতুর্থ দফার এ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, দীঘিনালা, মাটিরাঙ্গা, পানছড়ি, রামগড় ও মহালছড়ি উপজেলার ২ লক্ষাধিক মানুষ। এতে ৬ উপজেলার রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সর্বস্বান্ত হয়েছেন অনেকে। নিম্নাঞ্চলে এখনো ঘরবন্দি হয়ে আছেন দেড় লাখেরও বেশি মানুষ। উপজেলার নিকটবর্তী কিছু এলাকায় ত্রাণ পৌঁছালেও দুর্গম অনেক এলাকায় এখনো পৌঁছেনি কোন ত্রাণ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাগড়াছড়ি সদরের ৩০টি গ্রাম, দীঘিনালায় ৫০টি, মাটিরাঙ্গায় ৩০টি, পানছড়িতে ২০ টি, রামগড়ে ৩০টি এবং মহালছড়িতে ১৫টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাট, পুকুর ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। কিছু কিছু এলাকায় মানুষের ঘরের চালের উপর দিয়ে গেছে বন্যার পানি। এমন পরিস্থিতিতে আশ্রয় কেন্দ্রে ছিল উপচে পড়া ভিড়। কিছু আশ্রয় কেন্দ্রে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন বন্যার্তরা। বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণসহায়তা ও উদ্ধার কার্যক্রমে মাঠে ছিলেন স্থানীয় প্রশাসন, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা। তবে নিজ কার্যালয়ে পানি উঠার অজুহাতে উদ্ধার কাজে মাঠে নামেনি খাগড়াছড়ি ফায়ার সার্ভিস ইউনিট। এছাড়া বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের লোকজন উদ্ধার তৎপরতায় অংশগ্রহণ করেছে। এসময় জেলা ব্যাপী সক্রিয়ভাবে কাজ করতে দেখা গেছে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের।
এদিকে পাহাড় ধস এবং পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় খাগড়াছড়ির সাথে ঢাকা, চট্রগ্রামের সড়ক যোগাযোগ সাময়িক ভাবে বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি সড়ক, খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়ক এবং দীঘিনালা উপজেলার সাথে রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলার আঞ্চলিক সড়কে যান চলাচল।
খাগড়াছড়ি জেলা সদরের গঞ্জপাড়ার বাসিন্দা আব্দুল আজিজ বলেন, 'আমার চালের উপর দিয়ে গেছে বন্যার পানি। ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারিনি। আমাদের পরিবারের ৫জন সদস্য। আমাদের পরনের কাপড় ছাড়া কিছুই নেই। বন্যা পরিস্থিতি এমন হবে, কেউ বুঝতে পারিনি।' মোবাইল ফোনে দীঘিনালার মেরুং থেকে শফিকুল ইসলাম জানান, মেরুংয়ের প্রায় ৩০টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। বুক সমান পানি দিয়ে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় এক আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। তিনি এখনো কোন ত্রাণ বা সরকারি সহযোগিতা পাননি।'
খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাকসুদ আহমেদ বলেন, 'বন্যায় এবং পাহাড় ধসে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তা স্থায়ীভাবে মেরামত করতে সময় লাগবে। তবে সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক রাখতে আমাদের লোকজন কাজ করছে। সড়কে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পরে জানানো হবে।'
খাগড়াছড়ি সদর জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল হাসনাত বলেন, 'বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নৌকা ও ট্রলারের মাধ্যমে পানিবন্দি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়স্থানে পৌঁছে দিচ্ছে। এর পাশাপাশি উদ্ধার করা জনসাধারণের মাঝে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও জরুরি শুকনো খাবারও বিতরণ করছে। আমরা যেকোনো দুর্যোগে যেকোনো প্রয়োজনে সব সময় দেশের মানুষের পাশে আছি। আমাদের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।'
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, ‘পর পর ৩বার বন্যার কবলে পড়ায় খাগড়াছড়ি সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার্ত অসহায় মানুষদের পাশে আমরা সার্বিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। তাদের মাঝে শুকনা খাবারের পাশাপাশি ত্রাণ সামগ্রীও বিতরণ করা হচ্ছে। পুরো জেলায় ৫০২ ম্যাট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, ভেঙে গেছে। ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর