![BD24LIVE.COM](https://www.bd24live.com/bangla/public/logo-bd24live.png)
আদালতের নির্দেশ অমান্য করে শুধু ক্ষমতার জোরে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর এমন ঘৃণ্য কাজের বিচার দাবি করে ফুঁসে উঠছে স্থানীয়রা, অনতিবিলম্বে এই অবৈধ নিয়োগ বাতিলের দাবি জানান তারা। ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভেলাজান আনছারিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসায়।
অভিযোগে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আ.লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য, সাবেক পানি সম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন এর যোগসাজশে এবং তার রাজনৈতিক সচিব ও জেলা আ.লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন ওরফে ল্যাংরা স্বপনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয় নিয়োগ পরীক্ষা। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে স্বপন তার নিজ এলাকার একজন প্রার্থীকে এই পদে নিয়োগ সম্পন্ন করতে মরিয়া হয়ে উঠেন। আইনের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শুধু ক্ষমতার মোহে অবৈধ নিয়োগ সম্পন্ন করেন। এতে বেশির ভাগ প্রার্থী প্রবেশপত্র না পেয়ে এই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। এতে মোট প্রার্থী ছিল ৩১ জন, এর মধ্যে পীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৮ জন। গত ২৬ এপ্রিল ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজে অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে এ নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভেলাজান আনছারিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসায় অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগের জন্য ২০২২সালে মাদ্রাসা কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়। সে অনুযায়ী একই বছরের ২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় এক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে ওই পদে ৩১ জন চাকরি প্রার্থী আবেদন করেন। পরবর্তীতে গোপনে নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করলে মো. মোসাদ্দেক আলী নামে এক চাকরি প্রার্থী নিয়োগ পরীক্ষায় অসচ্ছলতা ও স্বজনপ্রীতি হওয়ার আশঙ্কায় ওই মাদ্রাসার সভাপতি সুলতান আলী চৌধুরীসহ ১৭জনকে বিবাদী করে জেলার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন। এতে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। পরে আদালত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা জন্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে একটি নোটিশ দেয়। এতে বলা হয়েছে বাদিরসহ বাকি যে প্রার্থীগুলো রয়েছেন তাদের কাছে অবশ্যই প্রবেশপত্র ইস্যু করতে হবে। ইস্যু বলতে প্রবেশপত্র হাতে পেয়েছেন এমন নিশ্চিত করতে হবে এবং এবং সকল বৈধ প্রার্থীদের অংশগ্রহণ করে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য বলা হয়েছে।
কিন্তু আদালতের এই নির্দেশনা ভঙ্গ করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ অন্য প্রার্থীদের প্রবেশপত্র না দিয়ে অল্প সময়ে তড়িঘড়ি করে নিয়োগ নিয়ে নেন বলে অভিযোগ করেন চাকরি প্রার্থীরা। তবে অনেকেই নিয়োগ পরীক্ষার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে প্রবেশপত্র হাতে পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মোসাদ্দেক আলী জানান, ভেলাজান আনছারিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে আমি আবেদন করেছি। মাদ্রাসার সভাপতি ও ম্যানেজিং কমিটি গোপনে অবৈধ ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে গত ১৬/০৯/২৩ নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেন। আমি অধ্যক্ষের কাছে প্রবেশপত্র চাইলে তিনি বলেন, পরীক্ষা হয়ে গেছে এবং ওই পদে নিয়োগ দিয়ে দিয়েছি। পরবর্তীতে সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করেন। তিনি আরো বলেন, গত ২৬ এপ্রিল বেলা ১২টায় শুনি যে ওই পদে পরীক্ষা ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজে চলছে। অথচ আমার কাছে কোনো ধরনের প্রবেশপত্র আসেনি। অন্যান্য চাকরি প্রার্থীরা বলছেন, আমাদের না জানিয়ে ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজে অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে পরীক্ষার জন্য তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ডেকে নেয়া হয়। এতে ৮ জন প্রার্থী অংশ নেয়। বাকি ২৩ জনকে জানানো হয়নি। শুধুমাত্র অর্থের বিনিময়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ সাবেক এমপি, তার অবৈধ আয়ের সহযোগী নজরুল ইসলাম স্বপন ও মাদ্রাসার সভাপতি সুলতান আলী চৌধুরি এই ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানান তারা।
এ ব্যাপারে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ খোরসেদ আলম এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সেসময় আমি ছিলাম পুতুলের ন্যায়, আমার কোনো ক্ষমতা ছিল না এ নিয়োগ আটকানোর।
এ বিষয়ে জানতে মাদ্রাসার সভাপতি সুলতান আলী চৌধুরীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
জানা যায়, ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। এদিকে অভিযুক্ত এমপি কারাগারে এবং অভিযুক্ত তার রাজনৈতিক সচিব ও জেলা আ.লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আত্মগোপনে থাকায় তাদেরও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এলাকাবাসি ও চাকরি প্রার্থীরা দ্রুত এই অবৈধ নিয়োগ বাতিল সহ দুর্নীতিবাজ এসব ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে বিচারের জোর দাবি জানান।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর