উজানের টানা ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে দেশের পূর্বাঞ্চলের ১২ জেলায় ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৪০ এর অধিকার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার্ত এসব জেলার মানুষের কিছুটা ক্ষত দূর করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) জমা পড়েছে হাজার-হাজার ত্রাণ। সকাল থেকে শুরু হওয়া এই গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি একটি সেকেন্ডের জন্য থেমে নেই। ঢাবিসহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বেশ উৎসাহ নিয়ে অকাতরে কাজ করে চলছেন।
শুক্রবার (২৪ আগস্ট) সকাল থেকে শুরু হয় এই গণত্রাণ কর্মসূচি যা চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত। সরেজমিনে গিয়ে টিএসসি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, লোকজনের উপচেপড়া ভিড়। বন্যার্তদের পাশে থাকতে যে যেভাবে পারে, সেভাবেই পাশে থাকছেন। প্যাকেট-বস্তা ভর্তি চিড়া, মুড়ি, মোয়া বিস্কুটসহ বিভিন্ন শুকনা খাবার নিয়ে আসছেন তারা। খাবার স্যালাইন, পানি, ঔষধ, স্যানিটারি ন্যাপকিনের মতো জরুরি সামগ্রীও আনতে দেখা গেছে। এছাড়া নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী ত্রাণ ও নগদ অর্থ তুলে দিচ্ছেন আন্দোলনের প্রতিনিধিদের হাতে। বুথে বসা শিক্ষার্থীরা খাতায় অনুদানের অঙ্ক লিখে টাকা জমা রাখছেন।
এছাড়া অনেকেই নতুন-পুরাতন প্রয়োজনীয় কাপড়ও ব্যাগ ভর্তি করে আনছেন অনেকেই। সকলের উদ্দেশ্যই এক বন্যার্তদের সহযোগিতা করা, যেই মানবিকতার গল্প লেখার কথা ছিল রাষ্ট্রের, সেই গল্প লিখছেন সাধারণ জনতা আর টিএসসি হয়ে উঠেছে এক মানবিকতার টিএসসি। রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড থেকে মেয়ে-জামাই এবং নাতি নিয়ে পাঁচ ব্যাগ নতুন কাপড় নিয়ে এসেছেন শাহনাজ বেগম।
তিনি বলেন, বন্যায় আমার মা-বোন বৃষ্টিতে ভিজেছে তাদের কোন পরনের কাপড় নেই। এজন্য কিছু নতুন-নতুন কাপড় এনেছি আপাতত। আজকেই প্রথম এসেছি এখানে। আগামীকাল আবার আসব, দেখি অন্য কোন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এনে সহযোগিতা করা যায় কি-না।
এদিকে গুলশানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন কাজী রোকসানা। অনেক যানজট ঠেলে বন্যার্তদের সহযোগিতা করতে বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও ত্রাণ নিয়ে টিএসসি এসেছেন। রোকসানা বলেন, অনলাইনসহ অনেক মাধ্যমেই তো সহযোগিতা করা হয় কিন্তু নিজের হাতে এসে ত্রাণ দিতে পেরে ভীষণ ভালো লাগছে। বলা চলে এক প্রকারের প্রশান্তি কাজ করছে যে বন্যার্তদের জন্য কিছু করতে পেরেছি।
টিএসসি ভেতরে পুরো এলাকা ত্রাণে ছড়িয়ে রয়েছে। থরে-থরে সাজানো নিত্যপ্রয়োজনীয় কাপড় থেকে ওষুধ-শুকনো খাবার পর্যন্ত। সেই সকাল দশটা থেকে কাজ করছেন ঢাবি সয়েল ও ওয়াটার এনভায়রনমেন্টের শিক্ষার্থী আকিব। তিনি বলেন, আমরা সকাল থেকে লাগাতার কাজ করে যাচ্ছি। গত শুক্রবারের তুলনায় অনেক ত্রাণ আসছে। বিকেলের দিকে পর্যন্ত পরিমাণে ওষুধও এসেছে। এভাবে বন্যার্তদের পাশে থাকতে পেরে ভীষণ ভালো লাগছে।
এদিকে টিএসসির মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসিন হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলসহ প্রায় সবকটি হলে একই চিত্র লক্ষণীয়। শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে বন্যার্ত পাশে দাঁড়াতে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। নগদ অর্থ, কাপড় থেকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ থেকে শুরু করে সেগুলো প্যাকেটিং এবং বন্যাদুর্গত এলাকায় পৌঁছানোতে ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। টিএসসিতে ত্রাণ কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার শুধু নগদ অর্থ উঠেছে ১ কোটি ৪২ লাখ ৫০ হাজার ১৯৬ টাকা। এর আগে বৃহস্পতিবার দিন মোট সংগ্রহ করা হয় ২৯ লাখ ৭৬ হাজার ১৭৩ টাকা।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর