• ঢাকা
  • ঢাকা, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • শেষ আপডেট ৬ ঘন্টা পূর্বে
এম. এ. আহমদ আজাদ
হাওরাঞ্চল প্রতিনিধি (সিলেট বিভাগ)
প্রকাশিত : ২৫ আগস্ট, ২০২৪, ০৭:১৬ বিকাল
bd24live style=

কুশিয়ারা ডাইকের মেগা প্রকল্পের ৫৭৩ কোটি লুটপাটের তদন্ত দাবি

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতায় জেলার কুশিয়ারা নদীর তীর প্রতিরক্ষা প্রকল্প নির্মাণ কাজ নিয়ে নয়ছয় হয়েছে। এই মেগা প্রকল্পের ৫৭৩ কোটি টাকার কাজ নিয়ে ভানুমতির খেলা হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের নীরবতার জন্য দায়সারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ হয়েছে। অন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এই মেগা প্রকল্পের দুর্নীতির তদন্ত দাবি করেছেন। এই প্রকল্প থেকে অনেক নেতাই কমিশন গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। বিশাল প্রকল্পের হরিলুট নিয়ে সর্বত্র হইচই হচ্ছে। বিষয়টি তদন্তের দাবি তুলেছেন সচেতন মহল।

কুশিয়ারা প্রতিরক্ষা প্রকল্পের বাঁধটি নড়বড় অবস্থায় আছে। বাঁধের নিম্নমানের কাজ হওয়ার জন্য বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। বর্তমানে চরম আতঙ্কে আছেন হবিগঞ্জ জেলার ভাটি অঞ্চলের মানুষ। বিশাল প্রকল্পে ৫৭৩ কোটি টাকা গেল কোথায় এই প্রশ্ন সবার মাঝে। তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে সচেতন মহলে। বর্তমান সরকারের কাছে এই বিশাল প্রকল্পের দুর্নীতি নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন এলাকাবাসী।

নিম্নমানের মালামাল ব্যবহারের ফলে কাজ শেষ হওয়ার পূর্বেই ৫৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন নদীর তীর প্রতিরক্ষা প্রকল্পের বেশকিছু স্থান দেবে ফাটল দেখা দিয়েছে এই বিষয়টি গত বছরে “তীর রক্ষার প্রকল্প রক্ষা করবে কে” শিরোনামে বিভিন্ন পত্রিকায় সরজমিন রিপোর্ট প্রকাশ হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জোগ সাজসেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেগা প্রকল্পে মেগা দুর্নীতি করেছে বলে অভিযোগ তীরবর্তী মানুষের। প্রভাবশালী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মামলার ভয়ে অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুলেননি তখন এলাকাবাসী।

জানা যায়- হবিগঞ্জের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ “কুশিয়ারা ডাইক” প্রতি বছর বর্ষায় ভেঙে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ, সিলেটের ওসমানী নগর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামসহ ভাটি ও হওরা লের বাড়িঘর ও কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে যায় পানির নিচে। নদীর উভয় তীরের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বর্তমান প্রযুক্তিতে নতুন ভাবে কুশিয়ারা উভয় পাশে বাঁধ নির্মাণের জন্য।

প্রতি বছরে এমন বিধ্বংসী ভাঙন রোধে ও অকাল বন্যা থেকে রক্ষা পেতে জাতীয় সংসদে কুশিয়ারা উভয় তীর রক্ষায় জিও ব্যাগ ও ব্লক দিয়ে প্রতিরক্ষা প্রকল্প নির্মাণের মাধ্যমে কুশিয়ারা ডাইক রক্ষার জন্য এই বিশাল টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কুশিয়ারা নদীর উভয় তীর রক্ষায় প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রতিরক্ষা প্রকল্প নির্মাণে ৫৭৩ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকের সভায় অনুমোদন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দরপত্র আহ্বানের কাজ পায় ৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, সে গুলো হলো, গোলাম রব্বানী কন্টাকশন,এএইচ ট্রেডিং কোং,আরএফএল,নেশন ট্রেক কমিশন ও আবুল কালাম কোং। তারা ১১টি প্যাকেজে কাজ শুরু করেন। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় হবিগঞ্জ জেলার বিবিয়ানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রেসমূহের সম্মুখে কুশিয়ারা নদীর উভয় তীরের প্রতিরক্ষা প্রকল্পের কাজ।

এর মধ্যে এ এই্চ ট্রেডিং কোং, আরএফএল ও নেশন ট্রেক কমিশনের কাজে ফাটল দেখা দিয়েছে। আরএফএল এ পরিচালক রাসেল আহমদ জানান, তাদের কাজের মধ্যে ফাটল দেখা দেয়নি সবার কাজেই ফাটল দেখা দিয়ে নিচে দিয়ে দেবে গেছে। তারা আগামী শুষ্ক মওসুমে সবাই কাজের সংশোধন করার জন্য চেষ্টা করবেন। অন্যান্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে ফোন ধরেননি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কাজ শুরুর পর থেকে কুশিয়ারা নদীর তীর প্রতিরক্ষায় ব্লক নির্মাণে মাটি যুক্ত বালু, নুরি পাথর, ছোট পাথরের জায়গায় বড় পাথর, গোটা পাথর, মরা পাথর ও পাথরের সাথে ধুলোবালিযুক্ত অবস্থায় ঢালাই, ইটের খোয়া মিশ্রন, অধিক স্থানে সিমেন্টের তুলনায় অতিরিক্ত বালি ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে ব্লক নির্মাণ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। তদারকির দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের জোগ সাজসেই আওয়ামী লীগের নেতাদের কমিশন দিয়ে এমন অনিয়ম হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নবীগঞ্জের পাহাড়পুর অংশে সেখানে গুণগত মানের সিমেন্ট ব্যবহার করা হলেও সিমেন্টের তুলনায় মরা পাথর, অতিরিক্ত বালি ব্যবহার করতে দেখা যায়। বন্যার পানি আসার সাথেই কুশিয়ারা ডাইক এসব ব্লক গুলো কোথাও ভেঙ্গে গেছে আবার কোথায় নিচে দিয়ে দেবে গেছে। এ বিষয়ে আব্দুল জব্বার নামে একজন বলেন, সরকারি দলের নেতাদের জন্য কাজে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। তাই এক বছরের মাথায় সব টাকা জলে ভেসে গেছে এই বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ তদন্ত করে থলের বিড়াল বাহির করা প্রয়োজন।

এছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশন টেক ট্রেডিং, আরএফএল ট্রেডিং করপোরেশন নিম্নমানের মালামাল দিয়ে ব্লক নির্মাণের ফলে লামা তাজপুর এলাকার খোয়াজ উল্লাহ, জিলু মিয়া ও বাছিত মিয়ার বাড়ির সামনেসহ বেশ কিছু স্থানে কুশিয়ারা প্রতিরক্ষা প্রকল্পের ভাঙন দেখা গেছে।

শেরপুর এলাকার জুয়েল আহমদ বলেন- বন্যা নিয়ন্ত্রণে প্রতিরক্ষা প্রকল্প নির্মাণ ছিল সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ কিন্তু নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার করার ফলে প্রতিরক্ষা প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার এক বছরের মধ্যে কুশিয়ারা ডাইকটি নড়বড়ে হয়ে গেছে। এসব অনিয়মের তদন্ত করে পিছনের রাগব বোয়ালদের বাহির করা প্রয়োজন।

তাজপুর এলাকার তাজুল ইসলাম জানান- নিম্নমানের বালি ও মরা পাথর দিয়ে শুরু থেকেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো ডাইকে নির্মাণ করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা আসেন সবকিছুই দেখেন কিন্তু কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা ও অফিসাররা মিলেমিশেই দুর্নীতি করেছে। তখন এলাকার মানুষ মামলার ভয়ে প্রতিবাদ করে নাই।

লামা তাজপুরের খোয়াজ উল্লাহ ডাইক নির্মাণে অনিয়মের কথা জানিয়ে তিনি বলেন- প্রতিবাদ কে করবে, কোথায় করবে কেনই বা করবে, ৫শ-৬শ কোটি টাকার প্রকল্প আমরা প্রতিবাদ করলে অল্পকিছু টাকা খরচ করলেই আমাদের মামলা দিয়ে হয়রানি করতো তখনকার সময়ে আওয়ামী লীগের পাতি নেতারা। এছাড়া অফিসাররা সবকিছু জানেন কিন্তু চুপ হয়ে ছিলেন, এখন এসব তদন্ত করে সব কয়টির বিরুদ্ধে মামলা করা প্রয়োজন।

ওই এলাকার জিলু মিয়া বলেন- নিম্নমানের পাথর ব্লক তৈরি করা হয়। কাজে বালু-পাথর ও সিমেন্ট মিশ্রণের সঠিক অনুপাত মানা হয়নি। দায়সারা ভাবে কাজ করে সব টাকা ভাগ বণ্টন করে খেয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আওয়ামী লীগের সব নেতাই তখন ঠিকাদার হয়ে গিয়েছিলেন।

নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মুজিবুর রহমান চৌধুরি সেফু বলেন- কুশিয়ারা ডাইক নির্মাণে অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে তড়িৎগতি কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এই প্রকল্পের ৫৭৩ কোটি টাকা নয়ছয় করা হয়েছে এটা বাহির হওয়া দরকার।

এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন- কুশিয়ারা নদীর উভয় তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ কয়েকটি প্যাকেজের মাধ্যমে কাজ চলমান রয়েছে। এ কাজগুলো মূলত নদী ভাঙনরোধে করা হচ্ছে এটা ভালো অবস্থায় আছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেবে যাওয়া প্রসঙ্গে বলেন আমাদের কাজে কোন অনিয়ম হয়নি। দুই বছর ধরে সাংবাদিকরা শুধু অনিয়ম হয়েছে বলে আসছে” আমরা কোন অনিয়ম পাইনি”। চলমান কাজে আমরা নিয়মিত তদারকি করছি। অনিয়ম হলে আপনারা তদন্ত করেন। কোথাও কুশিয়ারা ভাঙন দেখা দেয়নি বলে তিনি উত্তেজিত হয়ে উঠেন।

শাকিল/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com