সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলার তিনটি বিদ্যালয়ের তিন জন প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন। তবে তিনজন শিক্ষক বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
পদত্যাগকারী তিন শিক্ষক হলে, ধর্মপাশা উপজেলার গাছতলা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং মধ্যনগর উপজেলার মধ্যনগর পাবলিক বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক। এছাড়া এক সহকারী শিক্ষককে দুই মাসের জন্য সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। রবিবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে ওই দুটি বিদ্যালয়ে ঘটনা ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০০ সালে ধর্মপাশা উপজেলার গাছতলা উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে সুমিতা বালা তালুকদার ও সহকারী শিক্ষক পদে মো. দীন ইসলাম যোগদান করেন। বর্তমানে সুমিতা বালা প্রধান শিক্ষক ও দীন ইসলাম সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক,বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,গত রবিবার(২৫ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাছতলা উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় কয়েকজন বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষে ঢুকে শিক্ষার্থীদের কক্ষ থেকে বের করে মাঠে জড়ো করেন। এরপর প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করে মিছিল বের করেন। খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ধর্মপাশা ও বাদশাগঞ্জ এলাকার ১০ থেকে ১৫ শিক্ষার্থী সেখানে গিয়ে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনেন।
পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী,এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের নিয়ে সভায় বসেন। সভায় প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিষয়টি প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষককে জানানো হয়। একপর্যায়ে বেলা একটার দিকে ওই দুই শিক্ষক পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অভিভাবক বলেন,ওই দুই শিক্ষক বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের প্রভাব খাটান। বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের বিশ্রামাগারে (কমন রুম) বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণকাজের ঠিকাদারের লোকজনকে থাকতে দিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুমিতা বালা তালুকদার বলেন,নিরুপায় হয়ে চাপের মুখে পড়ে আমরা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। আমাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। বিদ্যালয়ে যা সিদ্ধান্ত হয়,তা ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক হয়।
অপর দিকে মধ্যনগর পাবলিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শরীফ উদ্দিনের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে আরেক শিক্ষক তিতাস মাহমুদের কথা কাটাকাটি হয়। রবিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে শিক্ষকদের মধ্যে বিরোধের অবসান চেয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাঠদান বর্জন করে। পরে বেলা ১১টার দিকে মধ্যনগর উপজেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী,বহিরাগতসহ ১০ থেকে ১৫ জন বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিলনায়তনে আসেন। একপর্যায়ে তাঁরা বিভিন্ন অভিযোগে সহকারী শিক্ষক শরীফ উদ্দিনকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে এবং ওই শিক্ষকের বন্ধু হয়ে তাঁকে নানা কাজে পরোক্ষভাবে সহায়তা করায় আরেক সহকারী শিক্ষক শামীম আহমেদকে দুই মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করার জন্য প্রধান শিক্ষককে বলেন।
এ সময় প্রধান শিক্ষকসহ সব শিক্ষক ওই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করার জন্য অনুরোধ করেন।
এক পর্যায়ে শরীফ উদ্দিন পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং সহকারী শিক্ষক শামীম আহমেদকে দুই মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করেন প্রধান শিক্ষক।
সহকারী শিক্ষক শরীফ উদ্দিন বলেন,যারা এখানে এসেছিল, অধিকাংশই শিক্ষার্থী নয়, তারা আমাকে মারধর করার ভয় দেখিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বী বলেন,আমাদের পক্ষ থেকে কোনো চাপ দেয়া হয়নি। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দাবির মুখেই সহকারী শিক্ষক শরীফ উদ্দিন পদত্যাগ করেছেন। আর সহকারী শিক্ষক শামীম আহমেদ তাঁর বন্ধু হয়ে তাঁকে পরোক্ষভাবে বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করায় প্রধান শিক্ষক ওই শিক্ষককে দুই মাসের জন্য বহিষ্কার করেছেন।
মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অতীশ দর্শী চাকমা জানান, শিক্ষক পদত্যাগের ঘটনাটি শুনেছেন। তবে তিনি উপজেলার বাইরে আছেন।
ধর্মপাশা ইউএনও মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন বলেন, দুই শিক্ষকের পদত্যাগপত্র পেয়েছি। এ নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজারকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে বলেছি।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর