রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) কার্যক্রমে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকানোর পাশাপাশি দেশের নাগরিকদের ভোটার হওয়ার কার্যক্রম সহজ করতে দু'টি বিশেষ কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একটি কমিটি কাজ করবে উপজেলা পর্যায়ে, অন্যটি কাজ করবে মেট্রোপলিটন এলাকায়।
ইসির উপসচিব মো. মাহবুব আলম শাহ স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
ইসি কর্মকর্তারা জানান,দেশের নাগরিকদের জন্য ভোটার হওয়ার যে প্রচলিত নিয়ম আছে তা পূরণ করে দেশের দেশের সকল নাগরিক ভোটার হবে তবে কেউ যদি এ নিয়ম বা শর্ত পূরণ করতে না পারে তাহলে ওই আবেদন চলে যাবে বিশেষ কমিটিতে।কমিটি যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দিলেই কেবল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ভোটার তালিকায় যুক্ত হবেন এবং এনআইডি পাবেন।
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, উপজেলা বিশেষ কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সদস্য সচিব হবেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। এছাড়া অফিসার ইন-চার্জ/পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত/অপারেশন)/সেকেন্ড, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি (কর্মকর্তার নিচে নয়), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি (কর্মকর্তার নিচে নয়), হেড ম্যান/কারবারি (পার্বত্য জেলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য), সংশ্লিষ্ট পৌরসভার মেয়র/মেয়র কর্তৃক মনোনীত একজন কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অথবা প্যানেল চেয়ারম্যান সদস্য হিসেবে থাকবেন।
অন্যদিকে সিটিকর্পোরেশন/মেট্রোপলিটন থানা নির্বাচন অফিসের ক্ষেত্রে গঠিত বিশেষ কমিটি আহ্বায়ক করা হয়েছে সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসারকে, আর সদস্য সচিব হচ্ছে থানা নির্বাচন অফিসার৷ অন্যদের মধ্যে অফিসার-ইন-চার্জ/পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত/অপারেশন)/সেকেন্ড অফিসার, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি (কর্মকর্তার নিচে নয়), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি (কর্মকর্তার নিচে নয়) ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে সদস্য করা হয়েছে।
বিশেষ কমিটির কার্যপরিধি:
১। বিশেষ তথ্য ফরমে প্রদত্ত সকল জাতীয় পরিচয়পত্রের NID নম্বরসমূহ Online এ যাচাই করতে। যাচাইকালে নিম্নলিখিত বিষয়াদি পর্যবেক্ষণ খেয়াল রাখতে হবে-
(ক) ভাই/বোনের জাতীয় পরিচয়পত্রে উল্লিখিত পিতা/মাতার নামের সাথে আবেদনকারীর উল্লিখিত পিতা/মাতার নামের মিল থাকতে হবে।
(খ) চাচা/ফুফুর ডাটাবেজে তাদের পিতার নাম ও ঠিকানার সাথে আবেদনকারীর বিশেষ তথ্য ফরমে প্রদত্ত পিতামহের নাম ও ঠিকানার মিল থাকতে হবে।
(গ) প্রয়োজনে নিকট আত্মীয়ের মোবাইল নম্বরে কথা বলে তাদের পরিচিতি/তথ্য সম্পর্কিত বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে।
২। ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ অনুযায়ী ভোটার হতে ইচ্ছুক উপযুক্ত ব্যক্তিকে বাংলাদেশের কোথাও “সচরাচর নিবাসী” হতে হবে। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জারিকৃত পরিপত্রে উল্লিখিত জেলাসমূহের যদি কেউ সচরাচর নিবাসী দাবি করে, তবে সেই দাবির যথার্থতা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসন্ধান করতে হবে। শুধু একটি নিবাসের ঠিকানাই এ জন্য যথেষ্ট হবে না। নিবাসের প্রমাণস্বরূপ তাকে এ সংক্রান্ত প্রণীত অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ ফরম অনুযায়ী চাহিত সব তথ্য প্রদান করতে হবে।
৩। যদি বর্ণিত জেলাসমূহে এই সমস্ত ব্যক্তি নিজস্ব সম্পত্তির সূত্রে তালিকাভুক্তির দাবি করে তবে তাদের সম্পত্তির মালিকানা ও এতদসংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য সংশ্লিষ্ট দলিলাদি তথ্য সংগ্রহকারীকে প্রদান করতে হবে।
৪। যারা বাংলাদেশি কোনো নাগরিকের সাথে বৈবাহিক সূত্রে ভোটার তালিকাভুক্তির দাবি করবেন তাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত নাগরিক সনদপত্রসহ দলিলাদি তথ্য সংগ্রহকারীকে প্রদান করতে হবে এবং অন্য কোন সূত্রে কেউ ভোটার হওয়ার উপযুক্ত দাবি করলে তাদেরকে এতদসম্পর্কিত প্রমাণাদি তথ্য সংগ্রহকারীকে প্রদান করতে হবে।
৫। তথ্য সংগ্রহকারীগণ বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফরম-২ এর সাথে এ কার্যক্রমের আওতায় অতিরিক্ত তথ্য ফরম মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় দালিলিক কাগজপত্রসহ প্রতিটি কেস উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসারের নিকট জমা দিবেন। উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসার আবেদন / কেসসমূহের সারসংক্ষেপ প্রস্তুত করে সকল কাগজপত্রাদি বিশেষ কমিটির নিকট উপস্থাপন করতে হবে।
৬। বিশেষ কমিটি প্রতিটি ফরম পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই বাছাইপূর্বক সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন। বাছাইকৃত কেসগুলিতে বিশেষ কমিটির ইতিবাচক সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসারকে অবহিত করার পর তিনি ঐ সমস্ত নাগরিকদের ভোটার তালিকাভুক্ত করার জন্য দিনক্ষণ নির্ধারণপূর্বক নিবন্ধন কেন্দ্রে তাদের আগমনের জন্য নোটিশ জারি করতে হবে। যাদের কেস গ্রহণ করা হবে না, কি কারণে গ্রহণ করা হলো না, তা নোটশিটে লিপিবদ্ধ করে বিশেষ কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর করতে হবে। এছাড়া নিষ্পত্তির বিষয়টি প্রতিটি বিশেষ তথ্য ফরম (ফরম-২ এর অতিরিক্ত তথ্য)-এর ১৬নং ক্রমিকে বিশেষ কমিটির সিদ্ধান্ত উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসার লিপিবদ্ধ করতে হবে।
৭। বিশেষ কমিটি যাদের আবেদন বাতিল করবে, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর উক্ত বিষয়ে বিশেষ কমিটির সিদ্ধান্তের অনুলিপি নিয়ে সংশোধনকারী কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করে পারবেন।
৮। রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার বিষয়ে যদি কেউ তাদের সহযোগিতা অথবা মিথ্যা তথ্য প্রদান অথবা মিথ্যা/জাল কাগজপত্র সরবরাহ করেন অথবা সংশ্লিষ্ট কারো গাফিলতি পরিলক্ষিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০১০ এবং প্রচলিত অন্যান্য আইন অনুযায়ী ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে হবে।
এরে আগে বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বিডি২৪লাইভকে জানান,বাংলাদেশে যারা ওয়ান থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে, এ দেশে জন্ম নিয়েছে, তারা সমতলের মতো আমলযোগ্য হবেন। সোজা হিসাব।
তিনি বলেন, আমরা আলোচনায় রেখেছি, তিনটা ক্যাটাগরির আবেদন থাকবে। ক, খ ও গ। শুধু গ ক্যাটাগরির যেটা থাকবে, ৩০ শতাংশ আবেদন বিশেষ কমিটিতে যাবে। আর সব সমতলের মতো হবে।
অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ৭০ শতাংশ আবেদন এমনিতেই নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। আবেদন পাওয়ার পর প্রথমে বাছাই হবে। যারা এই দেশে পড়াশোনা করেছেন, জন্ম নিয়েছেন, বাবা-মা সরকারি চাকরি করে বা বাংলাদেশেই আছে, এনআইডি আছে, তার ভাই বোনের সব এনআইডি আছে, তারা এই সমতলের মতোই হবে৷ অনলি সি (গ) ক্যাটাগরির যারা, তাদের আবেদন বিশেষ কমিটিতে যাবে৷ যারা বয়স্ক এবং যাদের বাবা মা নেই, এগুলো বিশেষ কমিটিতে যাবে। এখন কমিশন এটা অনুমোদন দিলে সেভাবে হবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন,রোহিঙ্গাদের কারণে চট্টগ্রামের ৩২ টি এলাকাকে নির্বাচন কমিশন ২০১৯ সালে বিশেষ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এক্ষেত্রে দেশে বসবাসরত ওইসব এলাকার নাগরিককে এনআইডি পেতে বা ভোটার হওয়ার জন্য বিশেষ ফরম পূরণ করতে হতো একই সঙ্গে এতে দিতে হতো বাড়তি বেশি কিছু তথ্য। পরবর্তীতে যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠিত বিশেষ কমিটির যাচাইয়ে সঠিকতা মিললে অনুমোদন দেওয়া হতো।কিন্তু বর্তমানে নতুন এ সিদ্ধান্তের কারণে শুধু যে-সব নাগরিক ভোটার হতে এসে শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হবে তাদের আবেদন গুলো বিশেষ কমিটিতে যাবে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জাতীয় এর সর্বশেষ খবর