বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতাকারী বিতর্কিত শিক্ষক যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) কেমিকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সুজন চৌধুরীকে নিজ বিভাগ থেকে অপসারণ চায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৪র্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, এমন একজন শিক্ষক এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করে কি করে?! সে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার মদদপুষ্ট এবং তার সহযোগী। তার হাতে এখনো সাধারণ শিক্ষার্থীদের রক্তের দাগ লেগে আছে। আমরা চাই সে চাকরি থেকে দ্রুত ইস্তফা নিয়ে সসম্মানে চলে যাবে। না হলে আমরা তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবো।
তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষক সমাজ আমাদের ন্যায়পাল। আমরা ছাত্রসমাজ আশা করি উনারা সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবেন, বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখবেন। কিন্তু উনি(সুজন স্যার) কোটা সংস্কারের মত যৌক্তিক আন্দোলনে ছাত্র সমাজের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। "আমি কে তুমি কে রাজাকার,রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার.. ছাত্রদের এই স্লোগান কে সম্পূর্ণ মিসলিড করে তাদের রাজাকার উপাধি দিয়েছেন। আমরা তাকে অনেক আগেই অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৪র্থ বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, স্বৈরাচারী হাসিনা যখন আমাদের ভাই-বোনদের কে তার পালিত সন্ত্রাসী বাহিনী এবং পুলিশ এর দ্বারা অসহনীয় নির্যাতন করছিল তখন তিনি রীতিমতো বিদ্রুপ করেন এবং নির্যাতনের স্বপক্ষে অবস্থান নেন এবং উল্লাসে মত্ত হন । এতকিছুর পরেও তিনি এখন পর্যন্ত কোন অনুশোচনা প্রকাশ করেননি কিংবা তার বক্তব্য ফিরিয়ে নেননি। তার মত একজন প্রমাণিত হাসিনার দোসর কীভাবে একাডেমি কাউন্সিলের মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেন এটা আমার প্রশ্ন ? অনতিবিলম্বে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। আমরা চাইনা যার হাত আমাদের ভাই-বোনদের রক্তে রঞ্জিত সে আমাদের ডিপার্টমেন্টে অবস্থান করুক । কেমিকৌশল বিভাগ সব সময় সত্য এবং ন্যায়ের পক্ষে।
তৃতীয় বর্ষের অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, ন্যায্য দাবিতে আমরা যখন রাজপথে, ক্রমাগত হুমকি ধামকির সম্মুখীন হচ্ছি, তখন আমাদের ছায়ার দরকার ছিল। ওই ক্রান্তিলগ্নে শিক্ষকরা হতে পারত বটবৃক্ষের মত। কিন্তু আমাদের উপর যখন ভয়াবহ হামলা নির্যাতন নেমে আসে কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষক সুজন চৌধুরি পাশে দাঁড়ানো দূরের কথা আমার ভাই বোনের উপর পাশবিক নির্যাতন কে সে সমর্থন যোগায়। শিক্ষার্থীদের সমর্থন জোগানো অন্যদের উপর চড়াও হয়। এছাড়াও সে সহকারী প্রভোস্ট থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে হলে ফ্রি খাওয়া, প্রশ্ন ফাঁস সহ অনেক অভিযোগ রয়েছে। যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের রক্ত দেখে বিচলিত হওয়ার পরিবর্তে আরো রক্ত ঝরাতে চায় সে কোনোভাবেই শিক্ষক হওয়ার যোগ্য নয়।
তৃতীয় বর্ষের অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি কেমিকৌশল বিভাগের একজন শিক্ষার্থী। দেশের ক্রান্তিলগ্নে যখন ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আমার ভাই বোনেরা বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের জীবন দিয়েছে তখন কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষক সুজন চৌধুরি এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে ছিলেন। তিনি ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষ নিয়ে আমাদের রাজাকার বলে কটূক্তি করেন। আমরা পুরো ডিপার্টমেন্টসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী মিলে এর বিরোধিতা করি এবং তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করি। তিনি এর আগেও প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রম করে সাধারণ শিক্ষার্থীর ক্রোধের মুখে পড়েছিলেন।এছাড়াও তিনি আরো অনেক নীতিবিরোধী কাজের কাজে জড়িত।ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে কথা বলা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে কথা বলা কাউকেই আমরা এই ডিপার্টমেন্টে চাই না। আমরা সকলে মিলে তার পদত্যাগ চাই।
গত ১৬ই জুলাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ শিক্ষার্থীদের রাজাকার সন্মোধন করা বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিতর্কিত মন্তব্য করেন সুজন চৌধুরি। তিনি লিখেন, "কেন? যে নিজেকে রাজাকার ঘোষণা করবে তাকে কি আমরা জামাই আদর করবো?"
নিজ বিভাগের শিক্ষকের এমন বিতর্কিত মন্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিবৃতি দেন বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা, তারা লিখেন দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আমার ভাই বোনের রক্তে যখন রাজপথ রঞ্জিত, হামলাকারী বর্বর দের প্রতি সমর্থন জোগানো ও কটূক্তির জন্য কেমিকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুজন চৌধুরি কে আমরা কেমিকৌশল বিভাগে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম।
আমরা একতাবদ্ধ
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করে সুজন চৌধুরি বলেন তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই ছাত্রদের পক্ষ ছিলেন। তিনি আরো বলেন, আমিই সবার প্রথমে শিক্ষার্থীদের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছি। আমি মনে করি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হতে পারে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর