
তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুবল চন্দ্র পাল (জয়) এবং তার প্রতিষ্ঠিত 'জিটিসি স্কিল ডেভেলপমেন্ট ক্লাব' -এর বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে গঠিত সাংস্কৃতিক সংগঠন বজ্রকণ্ঠ নিয়েও শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক।
অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রলীগের পদবি ও হলের পরিচয় ব্যবহার করে সুবল কলেজ ক্যাম্পাসে প্রভাব খাটাতেন। এছাড়াও, পুরাতন বিজ্ঞান ভবনের সামনে সদস্য সংগ্রহের নামে বুথ বসানোর সময় কলেজ স্টাফদের সাথে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগের পরিচয় ব্যবহার করে তুচ্ছ ঘটনাতেও প্রভাব খাটাতেন বলে অভিযোগ সুভলের বিরুদ্ধে।
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ক্লাব সূত্রে জানা গেছে, সুবল চন্দ্র পালের নেতৃত্বে গঠিত 'জিটিসি স্কিল ডেভেলপমেন্ট ক্লাব' যথেষ্ট কার্যক্রমের অভাব থাকা সত্ত্বেও, তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রিপন মিয়া এবং সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক জুয়েলের প্রভাবে দ্রুত অনুমোদন লাভ করে। কলেজের অন্যান্য ক্লাবগুলোর তুলনায় এই ক্লাবটির কার্যক্রম কার্যত নেই বললেই চলে, যা শিক্ষার্থীদের মাঝে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
এছাড়াও, ক্লাবের জয়েন্ট সেক্রেটারি বনলতা বিউটিকে নিয়ে ওঠা অভিযোগ আরও গুরুতর। জানা যায়, এক নারী শিক্ষার্থীকে হুমকি দেওয়ার কারণে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছিল। এরপরেও, ক্লাবটি তার বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, যা ক্লাবটির নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বনলতা বিউটি ইতোমধ্যে তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক হিসেবে বিতর্কিত চরিত্র হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন।
তিতুমীর কলেজের একাধিক সূত্রে জানা যায়, 'জিটিসি স্কিল ডেভেলপমেন্ট ক্লাব' শুধু ছাত্রলীগের ছায়ায় নয়, বরং সুবল চন্দ্র পালের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে! এমনকি, ক্লাবের বুথ বসানোর সময় কিছু কার্যক্রমের নামে ফান্ড সংগ্রহ করা হলেও, সেই অর্থের সঠিক হিসাব নেই বলেও অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, শুধু 'জিটিসি স্কিল ডেভেলপমেন্ট ক্লাব' নয়, তিতুমীর কলেজের 'বজ্রকণ্ঠ সাংস্কৃতিক সংসদ' নামের আরেকটি ক্লাবও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অনুমোদন পেয়েছে। যদিও তিতুমীর কলেজে আগে থেকেই 'শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চ' নামে নাচ, গান, কবিতার উপর ভিত্তি করে একটি জনপ্রিয় সংগঠন রয়েছে, তবুও একই ধরনের কার্যক্রম সম্পন্ন বজ্রকণ্ঠের অনুমোদনকে ছাত্ররাজনীতির প্রভাব খাটানোর অংশ হিসেবে দেখছেন শিক্ষার্থীরা।
একাধিক ক্লাব অভিযোগ করে বলেন, বজ্রকণ্ঠের সভাপতি আব্দুল্লাহ-আল-জিয়াদ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীর বর্তমানে ছাত্রত্ব থাকার কথা না। সেখানে একটি সাংস্কৃতিক ক্লাবের সভাপতি হয় কি করে!
এছাড়াও ছাত্রলীগের পদে থেকে আব্দুল্লাহ-আল-জিয়াদ একাধিক সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। জিয়াদের নেতৃত্বে থেকে তার জেলা বাগেরহাটের একাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ক্যাম্পাসে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে। কোটা আন্দোলনে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের উপর হামলার অভিযোগ ও আছে তার বিরুদ্ধে।
জানা যায়, বজ্রকণ্ঠের বর্তমান কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফেরদৌস আরা বেগম। এছাড়াও তিনি বজ্রকণ্ঠের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন। তবে ছাত্রত্ব না থাকলেও জিয়াদ কীভাবে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি হন এই বিষয়ে অধ্যক্ষের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এই বিষয়ে কথা বলতে বজ্রকণ্ঠের সভাপতি ও তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ-আল-জিয়াদ এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে, তিতুমীর কলেজের বেশ কয়েকটি ক্লাব আছে যারা তাদের সক্রিয় কাজের মাধ্যমে কলেজ প্রশাসনের অনুমোদন লাভ করেছে। তবে বিতর্কিত অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফেরদৌস আরা বেগমের কারণে তাদের কার্যক্রমে বাধা এসেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ক্লাবগুলোর সদস্যরা জানান, প্রশাসনিক জটিলতার কারণে তাদের বিভিন্ন কার্যক্রমে বাধা এসেছে এবং পর্যাপ্ত সমর্থন ও সেই সময় পাননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিতুমীর কলেজের একটি ক্লাবের সদস্য বলেন, আমাদের ক্লাবের সদস্যরা আন্তরিকভাবে কাজ করে গিয়েছে, কিন্তু অধ্যক্ষের অনীহা ও তুচ্ছ ব্যবহারে আমাদের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছিল। অন্যদিকে, যারা ছাত্রলীগের প্রভাব ব্যবহার করছে, তারা সহজেই অনুমোদন পেয়েছে এবং নিষ্ক্রিয় থেকেও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। এটি আমাদের জন্য খুবই হতাশাজনক।
আরেকটি ক্লাবের সদস্য জানান, ক্লাবের সুষ্ঠু পরিচালনা এবং শিক্ষামূলক কার্যক্রম চালানোর জন্য আমাদের পরিশ্রম বৃথা গিয়েছে অধ্যক্ষের অনাগ্রহের কারণে। ছাত্ররাজনীতির প্রভাবিত ক্লাবগুলোকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া গুরুতর অন্যায়।
তিতুমীর কলেজে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে এ ধরনের ক্লাবগুলোর কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষার্থী।
জানতে চাইলে জিটিসি স্কিল ডেভেলপমেন্ট ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুবল চন্দ্র পাল (জয়) বলেন, স্কিল ডেভেলপমেন্ট ক্লাব একটি রাজনীতিমুক্ত সংগঠন হিসেবে পরিচালিত হয়েছে এবং ক্লাবের অভ্যন্তরে রাজনীতি চলেনি। তিনি সদস্যদের সাথে ভালো আচরণের পরামর্শ দিতেন এবং বনলতা বিউটি ক্লাবে যোগ দেওয়ার পর ছাত্রলীগে যুক্ত হন, যা ক্লাবের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কলেজ স্টাফদের সাথে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগও তিনি অস্বীকার করেন।
তিনি জানান, অধ্যক্ষ থাকাকালীন ক্যাম্পাসে অনেক কার্যক্রম আমরা করতে পারেনি। অন্যান্য ক্লাবের ও একই অবস্থা। তবে বর্তমানে আমি ক্লাবের দায়িত্বে নেই এবং আমাদের একটি আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।
তিতুমীর কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন বলেন, একটা সময় তিতুমীর কলেজে বিরূপ প্রভাব ছিল। সে সময় তারা অনেকেই নানা উপায়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করত। বর্তমানে নতুন সূর্য উদয় হয়েছে। এখন কোনো বৈষম্য হবে না, যোগ্যরা তাদের যথাযথ মর্যাদা পাবে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর