ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৩০তম উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান। যোগদানের দিনেই বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবেন। এর মাঝে কোন লুকোচুরি থাকবে না এবং কোন ভুল হলে অকপটে স্বীকার করবেন। এছাড়া উপাচার্য পদে কোন লম্বাচওড়া পরিকল্পনা করেও আসেননি, সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে চেষ্টার কমতি থাকবে না বলে জানিয়েছেন ঢাবি সদ্য নিয়োগ পাওয়া এই উপাচার্য।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বিডি২৪লাইভসহ কয়েকটি গণমাধ্যমকে দেওয়া একান্ত এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান এ কথা বলেন।
সদ্য নিয়োগ পাওয়া ঢাবির এই উপাচার্য বলেন, ‘আমি এটি আন্তরিকতার সঙ্গে বিশ্বাস করি এ বিশ্ববিদ্যালয় যতটুকু নেয়ার আহমেদ খানের বিশ্ববিদ্যালয় ঠিক ততটুকু রিকশা চালকের বিশ্ববিদ্যালয়, ততটুকুই আপামর জনতার বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে আমাদের দায় আছে, কেন না তারা আমাদের সঙ্গে সংযুক্ত। আমি লুকোচুরি করব না চেষ্টা করতে থাকবো। ভুল ত্রুটি থাকবে, ভুল হলে আমি তা স্বীকার করব এবং চেষ্টা করতে থাকবো। যখন আমার মনে হবে চেষ্টা করার ফলেও তেমন কিছু করতে পারছি না, আমি কথা বলে বিদায় হব। এখানে বিরাট কোন লম্বা চওড়া পরিকল্পনা করে এখানে আসেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভুল-ত্রুটি কিছু জানানো হলে, কিছু না কিছু করব। ৫০ ভাগ তো করতে পারব, ধীরে ধীরে হয়ত তা বাড়িয়ে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ পর্যন্ত নেবো। আমি ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে চাই, তারা কি ভাবে? পারফেক্ট সমাধান বলে তো কিছু নেই। এখন যদি পার্ফেক্টের জন্য বসে থাকি, তাহলে তো আমার দিন শেষ হয়ে যাবে। এখন কিছু একটা দিয়ে শুরু করতে চাই কিন্তু সেটি যদি কোন কারণে ইমপার্ফেক্ট হয় হোক, ১০০ ভাগের জন্য অপেক্ষা না করে কোনোভাবে যদি ৬০ থেকে ৭০ দিয়ে শুরু করতে পারি, হয়ত ধীরে ধীরে উন্নতি করতে থাকবো। সর্বোপরি চেষ্টা করতে থাকব।’
নিজের রাজনীতির সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ‘আমার ছাত্র জীবন থেকে এখন পর্যন্ত কোন দলীয় রাজনীতিতে অংশ নেইনি। তার মানে এই না যে রাজনীতিবিদদের হেয় করছি, তাদেরকে আমি সম্মান করি কিন্তু দল কেন্দ্রিক রাজনীতিতে আমার আগ্রহ শূন্য। আমি রাজনীতিবিদদের সম্মান করি, তাদের দলীয় কর্মকাণ্ডে আমার সম্পৃক্ততা নাই। আমার সম্পর্কে যে কেউ, যেকোনো ধরনের কথা বলার স্বাধীনতা সকলেরই রয়েছে। কিন্তু প্রত্যেকটা বিষয়বস্তু ধরে উত্তর দেবার সময় এবং প্রয়োজন কোনটিই প্রয়োজন মনে করছি না। ব্যক্তি হিসেবে যে যার মত করে মত দিবেন, আমি আমার জায়গাটি স্পষ্ট করলাম। কোন রকম দলীয় রাজনীতিতে আমার শুধু অংশগ্রহণ নেই শুধু তাই না আমার আগ্রহও নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম কবে শুরু হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘জটিলতা অনেক রয়েছে, তবে উঠেপড়ে চেষ্টা করতে থাকব। সারাদিন কনফ্লিক্ট জিইয়ে রেখে তা তো কঠিন। আমরা জাতি হিসেবে চূড়ান্তভাবে বিভাজিত হয়ে গেছে, দীর্ঘ দিনের এক প্রশাসনিক কারণে। একসঙ্গে করার প্রক্রিয়াটি অনেক কঠিন, যতটুকু পারা যায় অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে এনে যদি কিছুটা কাজ করতে পারি। যেগুলো একেবারে গুরুতর অপরাধ, যেগুলো ফৌজদারি অপরাধ হয়েছে। সেগুলো তো মুখের কথাই ঠিক হবে না, আইনগত প্রক্রিয়ায় হবে। যেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কিছুটা ছাড় দিয়ে কর্মকাণ্ড গুলো শুরু করা দরকার। ছাত্ররা আসা শুরু করেছে, তাদেরকে অন্তত সহনীয় পর্যায়ে এসে কিছু সুযোগ-সুবিধা দিয়ে অন্তত কাজটি শুরু করা। এই ধরনের অভিজ্ঞতা তো কারোরই নেই, এক ধরনের ট্রমার মধ্যে গিয়ে সেটিকে মোকাবিলা করে পড়াশোনায় থিতু হওয়া এই প্রক্রিয়ায় কিছু সহনীয়তা দরকার। এ বিষয়ে কাউন্সিলর এবং একটি মিটিং করতে চাই। তাছাড়া আমার টিম যেটি রয়েছে, এটি যত দ্রুত কার্যকর হবে তত আমার জন্য ভালো হবে।’
পড়াশোনা বাস্তবতার মিশেলে থাকা প্রয়োজন এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইন্ডাস্ট্রি এবং প্র্যাকটিসের জগৎ এটি সম্পর্ক বাড়াতে হবে। ইতোমধ্যে কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেগুলো আরো বাড়াতে হবে। সে ক্ষেত্রে অ্যালামনাই যে অ্যাসোসিয়েশন রয়েছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ আরও দৃঢ় করতে হবে। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবকের উপর ভিত্তিতে কমিউনিটি সার্ভিসের ভালো উদাহরণ রয়েছে সেই উদাহরণটিকে আমি অ্যাকাডেমিক কেসে রূপান্তরিত করতে চাই এবং সেটিকে ক্লাস রুমে নিয়ে যেতে চাই। সামাজিকবিজ্ঞান উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে বললাম এটিকে আমরা ক্লাসে নিতে চাই, সেক্ষেত্রে তত্ত্ব এবং বাস্তবতার যে সম্পর্ক সেটি নিয়েও কাজ করা দরকার রয়েছে।’
ছাত্র রাজনীতি এবং ক্যাম্পাসে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো সহাবস্থান নিশ্চিত করা হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাবি উপাচার্য বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক অর্থে বাংলাদেশ। এর উপর তো সার্বিকভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রের বৃহত্তর পরিসরে কেন্দ্রীয়ভাবে কিন্তু সিদ্ধান্তগুলো হয়। মূল যে আদর্শগত বিষয় তা কিন্তু বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মধ্যেই রয়েছে। মোটামুটি যতদূর সম্ভব মানবিক দুর্বলতা ছাড়া ন্যায্যতার ভিত্তিতে কাজ করা। ব্যর্থতার ভিত্তিতে যতটুকু করা যায় এবং মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো তুলে ধরা। যারা আমরা প্রশাসনের দায়িত্বে রয়েছি তারা কিছু ফ্যাসিলেটেট করা, এতদূর যদি করতে পারি আপনা-আপনিই বেশির ভাগ সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। যেহেতু এই বিশ্ববিদ্যালয়টি সমাজের অন্যতম একটি প্রধান প্রতিষ্ঠান সে জন্য এটিও খেয়াল রাখতে হবে যে সমাজের কাছ থেকে কি চাইছে, সেটিও কিন্তু মূল্যবান পয়েন্ট।’
শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে যতটুকু করা যায় ততটুকু করবেন বলে জানান ঢাবির সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ৩০তম উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান।
সবাইকে বিশ্বাস রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এখানে আমার ব্যক্তিগত লাভের কোন বিষয় নেই, এতোটুকু বিশ্বাস আমার উপর রাখতে পারেন। ব্যক্তি লাভ থেকে চেষ্টা করব যতটুকু দূরে থাকা যায় যতদূর সম্ভব। কথা শুনতে আমার কোন আপত্তি নেই। যারা সমালোচনা করছেন, তাদের ও আমার একটি কমন পয়েন্ট হলো সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো চাইছেন। ওই বিশ্বাস নিয়ে যতদূর পারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ভালো রাখব।’
এর আগে দেশের রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ, ১৯৭৩-এর আর্টিকেল ১১ (২) ধারা অনুযায়ী অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানকে উপাচার্য হিসেবে ২৭ আগস্ট নিয়োগ প্রদান করা হয়।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর