• ঢাকা
  • ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • শেষ আপডেট ৬ ঘন্টা পূর্বে
রাশেদুল ইসলাম রাশেদ
গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ৩১ আগস্ট, ২০২৪, ০৫:২১ বিকাল
bd24live style=

গাইবান্ধায় ভুল সিজারিয়ান অপারেশনে প্রসূতির মৃত্যু

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

গাইবান্ধা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকের অবহেলায় ভুল সিজারিয়ান অপারেশনে বিপাশা আক্তার (২৮) নামের এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। 

শুক্রবার (৩১ আগস্ট) দিনগত ভোররাত ৪ টার দিকে রংপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ওই প্রসূতি। এর আগে গত ২৩ আগস্ট রাতে গাইবান্ধার "গাইবান্ধা ক্লিনিক" বিপাশার দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার করে। সেখানে একটি কন্যা সন্তান প্রসব হয়। সেদিনের পর থেকেই দীর্ঘ ৯ দিন মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করছিলো নিহত বিপাশা।

নিহত প্রসূতি বিপাশা আক্তার গাইবান্ধা সদর উপজেলার পশ্চিম রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামের আব্দুল বাকি শেখের মেয়ে এবং শহরের পূর্বপাড়ার ব্যবসায়ী আপনের স্ত্রী।

নিহত বিপাশার স্বজনদের অভিযোগ, গাইবান্ধা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা ও চিকিৎসকের ভুল সিজারিয়ান অপারেশনে কারণে মৃত্যু হয়েছে প্রসূতির। তারা অবিলম্বে দায়ী চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নেওয়া, একই সাথে ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানান। 

নিহতের স্বজন ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যার দিকে বিপাশাকে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য গাইবান্ধা ক্লিনিকে নিয়ে যায় তার শাশুড়ি। সেদিন রাত ৮ টায় অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল। প্রসূতির রক্তের সন্ধানে ছিল বিপাশার স্বামী আপন। কিন্তু স্বামী আপন ক্লিনিকে আসার পূর্বেই বিপাশাকে তড়িঘড়ি করে ৮ টার দিকে অপারেশন থিয়েটারে নেয় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। আপন ক্লিনিকে পৌঁছানোর পূর্বেই বিপাশার অস্ত্রোপচার করা হয়।

সূত্র জানায়, অপারেশনের পর প্রচণ্ড বেগে প্রসূতির রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। দীর্ঘ চার ঘণ্টা রক্তক্ষরণের পরও রক্ত বন্ধে ব্যর্থ চেষ্টা চালায় গাইবান্ধা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। পরে সফল না হতে পেরে ও দিনই রাত ১ টার দিকে প্রসূতির স্বজনদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দ্রুত রংপুরের ডক্টরস ক্লিনিকে রেফার করেন। সেখানে পরদিন আরো একটি অস্ত্রপচারে বিপাশার জরায়ু কেটে ফেলা হয়। কিন্তু ততক্ষণে রোগীর অবস্থা আরো অবনতি হলে রোগীকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে রোগীর অবস্থা আরো সংকটাপন্ন হলে দুইদিন পর তারাও প্রসূতিকে রংপুরের অপর একটি বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র গুড থেলথ নামক হাসপাতালে রেফার করেন। সেখানে ভর্তি নিয়েই তারা প্রসূতি বিপাশাকে আইসিইউ বিভাগে চিকিৎসা শুরু করেন।

নিহত বিপাশার স্বামী আপন জানান, আমার সোনার সংসার লন্ডভন্ড করে দিলো গাইবান্ধা ক্লিনিকের লোকজন। আমি ক্লিনিকে পৌঁছানোর আগেই তারা তড়িঘড়ি করে সিজার (অস্ত্রোপচার) করেছে। সিজারের আগে তারা আমার সাথে কোনও পরামর্শ বা কথাবার্তা বলেনি এমনকি আমার স্বাক্ষরও নেওয়া হয়নি। আমি গিয়ে দেখি নবাগত বাচ্চা আমার মায়ের কোলে। আমার স্ত্রী তখন অপারেশন রুমে।

আপনের দাবি, আমরা যার কাছে সিজার করাবো সেই ডাক্তার ছিল না। কারা অপারেশন করলো আমাকে সেটাও জানানো হয়নি। সেদিন হয়ত নার্সরাই সিজার করেছে। রক্তক্ষরণ বন্ধ না হলে আমি ক্লিনিকের ম্যানেজারকে জানাই। তিনি ডাক্তার ডেকে আনার কথা বলে বের হয়ে যায়। পরে তাকে ফোন করা হলে তিনি ফোন বন্ধ করে রাখেন। আমার স্ত্রীকে তারা একেবারে শেষ মুহূর্তে রংপুরে পাঠিয়েছে। এ মৃত্যুর দায় গাইবান্ধা ক্লিনিকের।

নিহত বিপাশার মা শেলী বেগম জানান, অস্ত্রপচারে অন্তত দুই ঘণ্টা পরে আমার মেয়েকে বেডে দেওয়া হয়। যখন বেডে দেওয়া হয় তখনও আমরা দেখি প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। রক্তে বেড ভিজে যাচ্ছে। তখন কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা আবারো অপারেশন থিয়েটারে নেয়। তখন থেকে আরও দুই ঘণ্টা পর তারা আমার মেয়েকে রংপুরে পাঠাতে হবে বলে জানান। এরপর তাদেরই ঠিক করা একটি ক্লিনিকে আমরা রংপুরে যাই। সেখানেও রক্ত বন্ধ না হলে দ্বিতীয়বার তারা আবার অপারেশন করে।

তিনি বলেন, গাইবান্ধা ক্লিনিকের ভুল চিকিৎসা আর অবহেলার কারণে আমার মেয়ে ধুকে ধুকে মারা গেলো।

পরিচয় গোপন রেখে গাইবান্ধা ক্লিনিকের এক নার্সের বরাতে প্রসূতির বড় আম্মা আঙ্গুরানী বলেন, "আমার ভাতিজির রক্তক্ষরণ দেখে আমি নার্সকে জিজ্ঞেস করি। মা (নার্স) আমার বিপাশা ভাল হবে তো। তখন ওই নার্স আক্ষেপ করে বলেন, "এতোদিন থেকে ক্লিনিক চালায় সিজারের আগে কি কি পরীক্ষা করতে হয় জানেনা না ?" রোগী আসলেই সিজারের জন্য পাগল হয়ে যায়!

আঙ্গুরানী বলেন" ওই নার্সের কথায় মনে হয়েছে সিজারের আগে তারা তড়িঘড়ি করে কোনো পরীক্ষানিরীক্ষা ছাড়াই অপারেশন করেছে। যার জন্য আজ আমার ভাতিজি মারা গেল।

রংপুরের গুড থেলথ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সাজ্জাত হোসেন বলেন, " আমরা রোগীকে খুব ক্রিটিক্যাল অবস্থায় পেয়েছি। যখন আমাদের কাছে রোগীকে নিয়ে আসা হয়। তখন তার অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন ছিল। তিনি বলেন, রোগীর প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে, জরায়ু কেটে ফেলা আমাদেরকে এসব রিপোর্ট করেনি রেফার করা ক্লিনিক। এর বাহিরে আর কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

এসব বিষয়ে গাইবান্ধা ক্লিনিকের ম্যানেজার কাঞ্চন বলেন, " স্যার (গাইবান্ধা ক্লিনিকের মালিক ডা.একরামুল) আমেরিকায় আছেন। আমরা ওই রোগীর চিকিৎসার জন্য এ পর্যন্ত ৭৮ হাজার টাকা দিয়েছি। আপনারা ডা. সেকেন্দারের সাথে কথা বলেন বলে ফোন কেটে দেন।

বিপাশার সিজারিয়ান অপারেশনের আ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসক ডা. সেকেন্দার আলী বলেন, " ওই রোগীর সিজারিয়ান অপারেশন করেছে ডা.আব্দুর রহিম। অপারেশনের পর রোগীর রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছিলনা। পরে ওই রোগীকে রংপুরের কমিউনিটি মেডিকেলে রেফার করা হয়। সেখানেও রক্ত বন্ধ না হওয়ায় তার জরায়ু কেটে ফেলা হয়। 

তিনি আরও বলেন, আমি ওই রোগীকে রংপুরে দেখতে গিয়েছিলাম। রোগীর চিকিৎসার সমস্ত খরচ গাইবান্ধা ক্লিনিক বহন করছে। ঘটনার পর থেকে গাইবান্ধা ক্লিনিকে অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে। 

নিহত বিপাশার অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক ডা.আব্দুর রহিমের সাথে বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। আর ক্লিনিকের মালিক ডা.একরামুল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশের বাহিরে থাকায় তার মন্তব্য জানতে পারেনি। তিনি জাসদের রাজনীতির সাথে জড়িত।

মুনতাসির/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com