ঢাকার আশুলিয়ায় ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং আ্যান্ড রিসার্চের (নিটার) সাবেক অ্যাডভাইজার ড. মিজানুর রহমানের অনুসারী শিক্ষক ও কর্মচারীদের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই শুরু হওয়া আশুলিয়ার কহিনুর গেট এলাকায় ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হয়ে তারা এ বিক্ষোভ করেন। এর আগে, রবিবার বিকেল ৩টা থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে তারা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযোগ করা ভুক্তভোগীদের ডেকে তাদের বিভিন্নভাবে চাপ দিয়ে মিজানুর রহমানের নামে ওঠা অভিযোগ প্রত্যাহারে বাধ্য করে ক্যাম্পাসে থাকা তার অনুসারী শিক্ষক-কর্মচারীরা। এসব বিষয়ে নানা সময় শিক্ষার্থীরা কোনো কথা বলতে চাইলেও প্রশাসন তাদের সঙ্গে কোনো কথা বলেনি। সম্প্রতি সরকার পতনের পর গত ৩১ আগস্ট ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া হয়। এর পরেরদিনই নানা দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, গত কয়েক বছর ধরে সাবেক অ্যাডভাইজার ড. মিজানুর রহমান নানা অনিয়ম করেন। এরই জেরে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ২০২১ সালে নভেম্বরে তার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। দুই দিনের আন্দোলনের মুখে তিনি পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের পরও তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এ সময় তারা ১৪ শিক্ষক-কর্মচারীর পদত্যাগ, আবাসন সঙ্কট নিরসন, শিক্ষক নিয়োগ, ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনাসহ ক্যাম্পাস পুনর্গঠনে নানা দাবি তুলে ধরেন।
তারা আরও জানান, রাতের দিকে অভিযুক্ত ১৪ শিক্ষক-কর্মচারীর নামসহ একটি তালিকা কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেন শিক্ষার্থীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ একটি নোটিশ প্রকাশ করে। যেখানে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ওই অভিযুক্তদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করে অভিযোগ স্বীকার করে তাদের পদত্যাগ করতে হবে বলে দাবি জানায়। এর মধ্যে সোমবার বেলা ১২টার দিকে ক্যাম্পাস পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশনের (বিটিএমসি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল হক প্রতিষ্ঠানটিতে আসেন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে এরপরও থেকে টানা (দুপুর ২টা ৪০ পর্যন্ত) আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
নিটারের টেক্সটাইল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজ্জাদুল ইসলাম রাকিব বলেন, শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় তাদের ছোটখাটো নানা দাবি প্রশাসনকে জানাতে চেয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদের কোনো কথাই কখনও গুরুত্ব দেয়নি। বরং তাদের অভিভাবককে হয়রানিসহ নানাভাবে অপদস্ত করে আসছিল। এ কারণেই বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। আমরা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সব শিক্ষক-কর্মচারীর পদত্যাগের দাবি জানিয়েছি। তারা পদত্যাগ করার পর আমরা ক্যাম্পাস পুনর্গঠনে যেসব দাবি রয়েছে সেসব কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরবো।
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, ছোট একেকটি কক্ষে আটজন করে রাখা হয়। একটি ছোট বিছানায় দুজনকে থাকতে হয়। ছাত্রী হলের ভেতরে পুরুষ শিক্ষকদের কোয়ার্টার রয়েছে। নারী শিক্ষকরা সেখানে পরিবারসহ থাকেন। এতে নারী শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নষ্ট হয়। অভিভাবক কিংবা কোনো স্বজন এসে থাকতে পারেন না। এমনকি আমাদের সহপাঠীরাও হলের ভেতরে ঢুকতে পারেন না। তুচ্ছ ঘটনাতে আমাদের হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। অভিভাবক ডেকে অপমান করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ছোটখাটো ঘটনায় অভিভাবককে ফোন করে চারিত্রিক বিষয়ে কটুকথা বলা, পোশাক নিয়ে কুমন্তব্য করাসহ মানসিক নির্যাতন করা হয়। এসবের জেরেই আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছি।
এ ব্যাপারে নিটারের রেজিস্ট্রার ইকবাল রেজা বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে রবিবার রাতে ওই ১৪ শিক্ষক-কর্মচারীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। তবে শিক্ষার্থীরা তা মানেননি। তারা আরও অনেক দাবিদাওয়া জানিয়েছেন। আমরা শুনছি। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর