শিল্পাঞ্চল সাভারের আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে নানা দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিক ও চাকরি প্রত্যাশীরা। কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, হাজিরা বোনাস দেওয়া, শ্রমিক নিয়োগ ও আন্দোলনকারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়াসহ দাবি জানান। তবে এঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষ আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত ৩৫-৪০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করছে বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ টার দিকে আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করে গিল্ডান বাংলাদেশ নামে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এসময় তারা নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের চন্দ্রাগামী লেনের পাশে কারখানার সামনে অবস্থান নেন।
শ্রমিকদের বিক্ষোভের এক পর্যায়ে শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে বাইপাইল থেকে আবদুল্লাহপুর সড়ক থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে দিলে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে আশুলিয়ার ডিইপিজেড সামনের নবীনগর-চন্দ্রা সড়কটি অবরোধ করে রেখেছিলেন চাকুরি প্রত্যাশীরা। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শ্রমিকরা ওই এলাকা ছেড়ে যান।
এদিকে সকাল ১০টার দিকে গিল্ডান বাংলাদেশ কারখানার সামনে গিয়ে দেখা যায়, গিল্ডান বাংলাদেশ কারখানার সামনের ফটকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। নোটিশে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত ঘটনার কারণে বাংলাদেশে আমাদের (গিল্ডান বাংলাদেশ) সকল কারখানা পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এই কারখানার পাশেই পার্ল গার্মেন্টস কোম্পানি লিমিটেডের ফটকে আজ (সোমবার) কারখানা স্ববেতনে ছুটি থাকবে এমন নোটিশ টাঙিয়ে দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
আন্দোলনকারীদের দাবি, কারখানায় বেকারদের নিয়োগ, চাকুরিতে নারী- পুরুষ সমতা, কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ, নারী শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ, ভালোমানের টিফিন পরিবেশন, ঈদের ছুটি বৃদ্ধি, কারখানা স্বজনপ্রীতির নিয়োগ বন্ধ, শ্রমিকদের সাথে খারাপ আচরণকারী কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করা।
আন্দোলনকারী শ্রমিক শারমিন বলেন, কারখানায় চাকরি করি ১০ বছর ধরে। আমরা অসুস্থ হলে কারখানার মেডিকেল সেন্টারে পাঠানো হয়। মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসকদের বলে দেয়া হয় নর্মাল চিকিৎসা দিয়ে ছুটি মঞ্জুর না করতে। এছাড়া কারখানার যে সকল কর্মীরা নারী শ্রমিকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলে কোনো প্রতিকার পাওয়া জানা। আমরা বিষয়গুলো নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে এসকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে একত্রিত হলে তারা খারখানা বন্ধ ঘোষণা করলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গিল্ডান বাংলাদেশের এক শ্রমিক বলেন, আমরা যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করছি। আমাদের ১১ টি দাবি আছে এগুলো মানতে হবে। দাবির মধ্যে রয়েছে যারা আন্দোলন করছে তাদের যেন চাকুরিচ্যুত করা না হয়, যারা চাকুরি করছেন তাদের অন্তত ১০ বছরের চাকুরির নিশ্চয়তা, হাজিরা বোনাস ৩০০ টাকার পরিবর্তে ৮০০ টাকা করতে হবে, প্রমোশনের ক্ষেত্রে চাকুরির বয়স কমপক্ষে ৩ বছর ও যোগ্যতা অনুসারে হতে হবে।
আন্দোলনকারী চাকরি প্রত্যাশী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, আমরা চাকরি চাই। কারখানাগুলোতে আমাদের নেয়া হয় না। নারী শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। আমাদের দাবি আদায়ের সময় এসেছে তাই সড়কে নেমেছি।
আশুলিয়ায় শিল্পাঞ্চল পুলিশ - ১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, হাজিরা বোনাসসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ করেন। ডিইপিজেডের সামনে চাকরির দাবিতে বিক্ষোভ করে সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন বিক্ষুব্ধরা। এ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত ৩৫ টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে। তবে বিকেলের দিকে সড়ক থেকে শ্রমিকরা সরে যান। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর