ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নিক্সন চৌধুরী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শাহাদত হোসেনসহ (বরখাস্ত) ১১০ জন ও অজ্ঞাত আরও ৬০ জনকে আসামি করে ভাঙ্গা থানায় এজাহার দায়ের করেছেন ভাঙ্গা উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদুজ্জামান ওরফে তাসকিন রাজু।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভাঙ্গা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. মামুন আল ইসলাম।
তিনি জানান, সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার আগে একটি অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।তদন্ত সাপেক্ষে মামলা হবে।
অন্যদিকে, এ অভিযোগের পর আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র এমপির সমর্থক উল্লেখযোগ্য আসামিরা কয়েকজন মামলা থেকে বাঁচতে বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বলেও অভিযোগ করেন বৈষম্যবিরোধী একাধিক শিক্ষার্থীরা।
মামলার বাদী মো. রাশেদুজ্জামন ওরফে তাসকিন রাজু ও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের কয়েকজন শিক্ষার্থীরা জানান, থানায় এজাহার দেওয়ার পর আসামিরারা বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এ অভিযোগকে কেন্দ্র করে একটি মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
ওই দিনের ঘটনায় একাধিক ছবি/ভিডিও ফুটেজ আন্দোলনকারীদের কাছে এরই মধ্যে সংরক্ষণ রয়েছে। তাই, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলকারীদের উপরে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর ও অন্যতম আসামি ফরিদপুর-৪ এর সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীসহ তার সহযোগীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত বিচারের দাবি জানান।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আসামি মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী ও ২ নং আসামি মো. শাহাদত হোসেনের নির্দেশে অন্যান্য আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাধারণ মানুষের জীবন নাশের হুমকি-ধমকিসহ নিরীহ মানুষের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতো।
এতে আসামিদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে আসামিরা তার পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেওয়াসহ মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করতো। এছাড়া ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ১ নং আসামি মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী ও শাহাদত হোসেনের হুকুমে অন্যান্য আসামিসহ অজ্ঞাত ৫০ থেকে ৬০ জন বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাড়িতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রাণে মেরে ফেলার ও গুম করার ভয়ভীতি দেখায়।
অভিযোগে বলা হয়, এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩ আগস্ট আনুমানিক বেলা ১২টার দিকে আমি সহ বিভিন্ন স্কুল এবং সরকারি কে,এম কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভাঙ্গা পৌর সভার ৭ নং ওয়ার্ডের কৈডুবি সদরদী গ্রামের রেলসংলগ্ন ক্রসিংয়ের পাকা রাস্তার ওপরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে উল্লিখিত আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫০-৬০ জন একত্রে সংঘবদ্ধ হয়ে ধারালো অস্ত্র সজ্জিত হয়ে আমাদের আন্দোলনকে বাধা দেয়।
এ সময় কয়েকজন আসামি তাদের হাতে থাকা পিস্তল ও শটগান তাকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে প্রতিহত করে। কিন্তু, এতে আমাদের আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার জন্য অসম্মতি জানালে, আসামি শাহাদত হোসেনর হুকুমে আসামিরা কয়েকজন পিস্তল ও শটগান দিয়ে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে।
এক পর্যায়ে, আমরা প্রাণে বাঁচতে ঘটনাস্থল থেকে যার যার দৌড়ে পালাই। এ সময় আসামিরা কয়েকজন আমাদের উদ্দেশ্যে হুমকি দিয়ে বলেন-ভবিষ্যতে আন্দোলন করলে তোদের ঘরে ঘরে গিয়ে গুলি করে খুন করবো।
এ বিষয়ে জানতে ফরিদপুর-৪ এর সাবেক এমপি নিক্সন চৌধুরী ও ফরিদপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেন পলাতক থাকায় ও মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাদের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে ফরিদপুর সদর সার্কেল ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) এর দায়িত্বে থাকা মো. সালাহউদ্দিন জানান, খুব শিগগিরই তদন্তকার্য শেষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর