ঢাকার সাভারের আশুলিয়া থানার সামনে একটি ভ্যানে লাশের স্তূপ করছে পুলিশ, এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় ভিডিওতে থাকা তাদের মধ্যে আরও দুই পুলিশ সদস্য শনাক্ত হয়েছে। এর আগে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেন ও ডিবি'র কনস্টেবল রেজাউল করিমকে শনাক্ত করা হয়।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আশুলিয়া থানার বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ওই দুই জনকে শনাক্ত করেন। এছাড়া তাদের পূর্বের ছবির সাথে মিল পাওয়া যায়। ভিডিওতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য দেখা গেলেও ৪ পুলিশ সদস্যকে স্পষ্ট দেখা যায়।
তারা হলেন- ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত, ডিবি'র কনস্টেবল রেজাউল করিম, আশুলিয়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ রায় ও কনস্টেবল মুকুল। তবে কনস্টেবল মুকুলের ছবিতে এসআই আবুল হাসানের নাম ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন আবুল হাসান।
গত শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সারাদিন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভ্যানে লাশের স্তুপের একটি ভিডিও ব্যাপক ভাইরাল হয়। ভিডিওটি আশুলিয়া থানার সামনের ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে ধারণ করা বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে। দেয়াল, পোস্টার ও ঘটনাস্থল দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ভিডিওতে দেখা যায় লাশের স্তুপ করছে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে। তাদের মধ্যে আরও দুই পুলিশ সদস্য শনাক্ত হয়েছে।
ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, দুইজন পুলিশ সদস্যের একজন হাত ও একজন পা চ্যাংদোলা করে ভ্যানে নিক্ষেপ করছেন। এর আগেই ভ্যানে লাশের স্তূপ করে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয় তারা। সর্বশেষ লাশটি তুলে একটি ব্যানার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। শেষে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত, আশুলিয়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ রায় ও কনস্টেবল মুকুলকে দেখা যায়। ভিডিওর ১ মিনিট ৬ সেকেন্ডে একটি পোস্টার দেখা যায়, যা স্থানীয় যুবলীগের ধামসোনা ইউনিয়ন সভাপতি প্রার্থী ও ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী আবুল হোসেনের ভূইয়ার। সেই পোস্টারটি দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ভিডিওটির ঘটনাস্থল আশুলিয়া থানার সামনে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পুলিশ সদস্য জানান, ভিডিওতে থাকা ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত, আশুলিয়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ রায় ও কনস্টেবল মুকুলকে শনাক্ত করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুকুলের ছবিতে এসআই আবুল হাসানের নাম ব্যবহার করা হয়েছে বলেও জানান তারা।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ ও কনস্টেবল মুকুলের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের পাওয়া যায় নি। তবে এসআই আবুল হাসান বলেন, আমি ৪ আগস্ট রাতে ডিউটি করে সকালে বাসায় চলে যাই। ৫ তারিখে আমি ডিউটিতে ছিলাম না।
এ বিষয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি আমি দেখেছি। এটি অ্যানালাইসিস করা হচ্ছে। একই সাথে ৪ সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। হত্যার সাথে জড়িত কয়েকজনকে শনাক্তও করা হয়েছে। আমরা তারা অল্প সময়ের মধ্যে সবার সামনে তুলে ধরবো।
প্রসঙ্গত, বৈষম্য বিরোধী কোটা আন্দোলনকারীরা গত ৫ আগস্ট নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল এলাকায় জমায়েত হতে থাকেন। পরে শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের খবরে আন্দোলনকারীরা আশুলিয়া থানার দিকে অগ্রসর হয়। এ সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে পুলিশ। এ ঘটনায় ৫ আগস্ট থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত আশুলিয়ায় ২৮ জনের মৃত্যু হয় (ভ্যানে তোলা লাশের হিসাব বাদে)।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর