পাবনার চাটমোহর উপজেলার বিলচলন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আকতার হোসেনের বিরুদ্ধে সহকারী শিক্ষক পদে অবৈধভাবে নিয়োগ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
আক্তার হোসেন উপজেলার চরসেনগ্রামের মৃত. আমজাদ হোসেনের ছেলে। তিনি একাধারে উত্তরসেনগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক, বিলচলন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সক্রিয় আওয়ামী লীগ কর্মী। আওয়ামীলীগ সমর্থিত এ চেয়ারম্যান কাম্য শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে নিয়োগ নিয়ে বছরের পর বছর বেতন ভাতার সরকারি অংশ উত্তোলন করে আসছেন। পাশাপাশি নিয়ম নীতি লঙ্ঘন করে ইউপি চেয়ারম্যানের সম্মানী ভাতাও নিচ্ছেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত থাকায় এবং চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত থাকায় তার স্থলে বিদ্যালয়ে ক্লাস নেন তার বউ। এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা দীর্ঘদিন যাবৎ চলে আসলেও হয়রানির ভয়ে কেউ কখনও মুখ খুলেনি।
জানা গেছে, পাবনা-৩ এলাকার সাবেক এমপি আলহাজ্ব মো. মকবুল হোসেনের ঘনিষ্ঠজন এবং রাজনৈতিক অনুসারী আকতার হোসেন বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিলচলন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছর স্কুলে ক্লাস নেননি তিনি। তার বদলে স্কুলে ক্লাস নিতেন তার স্ত্রী আঞ্জুমানআরা রেবা। মাসের শেষ দিকে স্কুলে গিয়ে বেতন ভাতার শীটে এবং হাজিরা খাতায় সারা মাসের স্বাক্ষর করে এই চেয়ারম্যান তুলতেন বেতন ভাতার সরকারি অংশ। স্থানীয় এমপির সাথে ঘনিষ্ঠতা থাকায় আকতার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পাননি কেউই। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর স্কুলে ক্লাস শুরু হলে ফের ক্লাস নিতে যান আঞ্জুমানআরা রেবা। এসময় স্থানীয়রা আকতার চেয়ারম্যানের স্ত্রীকে ক্লাস থেকে বের করে দেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালের ১৫ মার্চ স্কুলটির স্থানীয় ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে প্রথম নিয়োগ নেন আকতার হোসেন। প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন সভাপতি ২০০০ সালের ২০ জুন একটি জাতীয় পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন এবং ২০০০ সালের ১০ আগস্ট পত্রিকায় নিয়োগ বৈধকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সহকারী শিক্ষক পদে কাম্য যোগ্যতা (স্নাতক পাশ) উল্লেখ থাকলেও তৃতীয় বিভাগে এসএসসি এবং এইচএসসি পাশ করা আকতার হোসেন ২০০০ সালের ২১ আগস্ট সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ নেন। নিয়োগের প্রায় তিন বছর পর ২০০৩ সালে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএসএস পাশ করেন।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম জানান, গত মাসের ৫ তারিখে হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে শিক্ষক আকতার হোসেন নিয়মিত স্কুলে আসছেন। চেয়ারম্যান হিসেবে সে হয়ত ব্যস্ত থাকায় তার স্ত্রী মাঝে মাঝে এসে স্কুলে ক্লাস নিয়েছেন। এমপি সাহেবের তিনি কাছের লোক ছিলেন তাই তাকে কিছুই বলা সম্ভব হয়নি। তার নিয়োগের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি আজাদ হোসেন খলিফা জানান, আমি তৎকালীন সভাপতি থাকা কালে এবং আমার জানা মনে তার কোন বৈধ নিয়োগ হয়নি। শুনেছি সে এইচএসসি পাস তাহলে সে কিভাবে বিএ পাশের বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক পদে নিয়োগ পায়।
চাটমোহর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মগরেব আলী জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে কেউ যদি আমার নিকট এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক আকতার হোসেন জানান, আমার বিরুদ্ধে ভুয়া নিয়োগের অভিযোগটি মিথ্যা। আমি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন কালে ঢাকায় যাওয়া সহ উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন মিটিংয়ে থাকা কালিন কিছু দিন বিদ্যালয়ে যেতে পারিনি। সেক্ষেত্রে আমার স্ত্রী তখন স্কুলে গিয়ে ক্লাস নিয়েছেন। এখন আমি নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছি।
চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি রেদুয়ানুল হালিম বলেন, উনার বিষয়ে কেউ আমার নিকট কোন অভিযোগ দেয়নি। কেউ অভিযোগ দিলে যথাযথ বিভাগের মাধ্যমে তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর