এবারের একাধারে চতুর্থ দফার বন্যায় খাগড়াছড়িতে কৃষি ও মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। টাকার অঙ্কে তা প্রায় ৭৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৩১০১ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যাওয়ায় কৃষি খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আর বন্যায় তলিয়ে গেছে ১৫৬৯টি পুকুর। এতে মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
গত ২ জুলাই থেকে ২২ আগষ্ট পর্যন্ত ৪ বার বন্যার কবলে পড়ে খাগড়াছড়ি। টানা বর্ষণ ও ভারতীয় উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে তলিয়ে যায় খাগড়াছড়ির চেঙ্গী ও মাইনি নদী। তলিয়ে যায় ছোট-বড় সব ছড়া ও খাল। দিনে দিনেই তলিয়ে যায় খাগড়াছড়ি সদর, দীঘিনালা, পানছড়ি, রামগড়, মাটিরাঙ্গা, মহালছড়ি উপজেলার কয়েকটি এলাকা। এতে তলিয়ে যায় প্রায় দেড় শতাধিক গ্রাম। অনেক গ্রামের ঘরের চাল সহ তলিয়ে যায় পানিতে। এতে গৃহ ও আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে প্রায় ৫০ হাজার পরিবার। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষি খাত। জানা যায়, চলতি মৌসুমে খাগড়াছড়ির ৪টি উপজেলায় বন্যায় ৩১০১ হেক্টর জমির কৃষি ফসল নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে আউশ ২২৮ হেক্টর, আমন ২১৭২ হেক্টর সবজি ক্ষেত নষ্ট এয়েছে ৭০১ হেক্টর।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার মেরুং ইউপির বাসিন্দা মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'আমি ৫২ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছিলাম। বন্যার পানিতে আমার সব ধান তলিয়ে গেছে।'
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. বাছিরুল আলম বলেন, 'বন্যায় খাগড়াছড়ির বিভিন্ন এলাকায় ৩১০১ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে কৃষি খাতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকার। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে।
খাগড়াছড়ি মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক জানা যায়, এবারের বন্যায় জেলার ৩৮টি ইউনিয়নের ১৫৬৯টি পুকুর ডুবে গেছে। এরমধ্যে খাগড়াছড়ি সদরে ১৭০টি, দীঘিনালা উপজেলায় ৩০০টি, মাটিরাঙ্গায় ৫৭০টি, মহালছড়িতে ১৯৫টি, রামগড়ে ১০৫টি, গুইমারায় ৬৫টি, লক্ষ্মীছড়িতে ৬৫টি এবং পানছড়ি উপজেলায় ৪২টি পুকুর ডুবে যাওয়ার তথ্য দিয়েছে জেলা মৎস্য অফিস। নেট দিয়ে ঘিরে মাছ আটকানোর চেষ্টা করা হলেও মাছ রক্ষা করতে পারেনি চাষীরা। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার হাচিনসনপুর এলাকার মৎস্যচাষী মো. ইদ্রিস বলেন, 'আমার ২টি পুকুরে দুই লাখ টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে। অনেক চেষ্টা করেও মাছ আটকাতে পারিনি। আমি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।'
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. রাজু আহমেদ জানান, 'হঠাৎ বন্যা হওয়ায় মৎস্যচাষিরা সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেননি। কিছু চাষি বেড় দিয়ে মাছ রক্ষা করার চেষ্টা করেও পানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যর্থ হয়। যার ফলে ১৫৬৯টি চাষের মাছ ভেসে গেছে। এতে মৎস্য খাতে প্রায় ৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মাছচাষিদের পুনর্বাসনের জন্য প্রণোদনা দেয়া প্রয়োজন। সরকারি প্রণোদনা নিয়ে আমরা মাছচাষিদের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করছি।'
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর