
জুলাই বিপ্লব এর শহীদদের স্মরণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বিপ্লবী গান, আবৃত্তি ও কাওয়ালী গানের আসর আয়োজিত হয়েছে।'মেহফিল-ই ইনকলাব' শীর্ষক এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিপ্লবী সাংস্কৃতিক মঞ্চ।
আয়োজন উপলক্ষ্যে শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা থেকেই সেলিম আল-দীন মুক্তমঞ্চে ভীড় করতে শুরু করেন সাবেক- বর্তমান শিক্ষার্থীরা৷ তাদের সাথে সাভার ও আশুলিয়া এলাকার স্কুলকলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন। অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বেই মুক্তমঞ্চ কানায় কানায় ভরে ওঠে। জাতীয় সংগীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে এ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা চলে রাত দশটা পর্যন্ত।
তিনটি ভাগে আয়োজনটি সাজান আয়জকেরা। প্রথম ভাগে কয়েকটি বিপ্লবী গান, দেশাত্মবোধক গান ও নাতে রাসূল পরিবেশন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপরের আয়োজন ছিল ছিল বিপ্লবী কবিতা আবৃত্তি। সর্বশেষে কাওয়ালী গান গেয়ে দর্শকদের মাতিয়ে তোলেন 'ওয়ান এম্পায়ার' ব্যান্ড।
এ সময় বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র আর শিল্পীদের সুরের মূর্ছনায় এক ভিন্নরূপ সৃষ্টি হয়েছিল মুক্তমঞ্চে। এ আয়োজনকে ঘিরে সাজ সাজ রব পরে যায় জাবিতে। বিভিন্ন হল থেকে দলে দলে পাঞ্জাবি পরে, আতর, সুরমা মেখে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় ছিল লক্ষণীয়। মঞ্চে ছিলো আগরবাতির ধোঁয়া। দর্শকদের চাঙ্গা করতে ছিটানো হয় গোলাপজল। আবার দর্শকদের হাতে হাতে আতর মাখিয়ে দিচ্ছিলেন কেউ কেউ। মঞ্চে বাংলাদেশের পতাকার পাশাপাশি শোভা পেয়েছিলো ফিলিস্তিনের পতাকা। ২৪ এর সফল বিপ্লবের পর প্রথম জাবি মুক্তমঞ্চে এ কাওয়ালির আয়োজন করে ‘বিপ্লবী সাংস্কৃতিক মঞ্চ’।
শিক্ষার্থীদের সাথে দর্শক সারিতে বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান সহ বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাবৃন্দ।
এ আয়োজন নিয়ে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের শাবাব বলেন, সাড়ে পাঁচ বছরের ক্যাম্পাস জীবনে এই প্রথম সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা দেখলাম। কোনো অনিয়ম নাই, কোনো গাঁজার গন্ধ নাই, কোনো মদ খেয়ে মাতলামি নাই। আছে শুধু আতর আর গোলাপজলের সুবাস। এই সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা অব্যাহত থাকুক। "সংস্কৃতির রাজধানী" আবার ফিরুক তার সুস্থ-স্বাভাবিক রূপে।
অনুষ্ঠানে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থী মিকদাদ বলেন, '২৪ এর জুলাই মাসের এ আন্দোলনে আমরা সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছি৷ প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জনের এক মাস পূর্তিতে এমন একটা আয়োজন আমাদের খুব আবেগাপ্লুত করেছে৷ শহীদদের রক্তমাখা স্মৃতিকে ধারণ করে আমরা বাংলাদেশকে নতুন করে গড়তে পারব এটাই প্রত্যাশা করি।
কাওয়ালি সন্ধ্যার আয়োজন নিয়ে ‘বিপ্লবী সাংস্কৃতিক মঞ্চ’ এর অন্যতম সদস্য আহসান লাবিব বলেন, মেহফিল-ই-ইনকিলাব অর্থ হলো বিপ্লবের আসর। জুলাই বিপ্লবের শহিদদের স্মরণে বিপ্লবী মঞ্চের আয়োজনে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করে সারা বাংলাদেশে নতুন করে সাংস্কৃতিক ধারা শুরু হয়েছে। ৫ আগস্টের আগে তা ছিল অসম্ভব।অপসংস্কৃতির করাল গ্রাস থেকে বেরিয়ে এসে সুস্থ সংস্কৃতির এমন সুন্দর আয়োজন সর্বমহলে সাড়া ফেলেছে। মানুষ আমাদের এ আয়োজনকে সাদরে গ্রহণ করেছে। আমরা এমন একটি ক্যাম্পাস বিনির্মাণ করতে চাই, যেখানে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এমন সুস্থ সংস্কৃতির আয়োজন ও অংশগ্রহণ করতে পারে।'
উল্লেখ্য, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের তত্ত্বাবধানে সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিপ্লবী সাংস্কৃতিক মঞ্চ।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর