কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর রেগুলেটর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর ছোট ফেনী নদীর ভাঙন ঠেকাতে সোনাগাজীতে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণ করছেন এলাকাবাসী। সোনাগাজী উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নের উত্তর চরদরবেশ গ্রামের ইতালি মার্কেট সংলগ্ন তালতলি নামকস্থানে ৭ সেপ্টেম্বর শনিবার সকাল এ বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ছোট ফেনী নদীর একাংশে খুঁটি, জিও ব্যাগ, বাঁশ ও বেড়া দিয়ে ৬০০ ফুট দৈর্ঘ্যের বাঁধ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে প্রায় ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হবে। এলাকার প্রবাসী সহ বিভিন্নজনের কাছ থেকে অনুদান নিয়ে ইতোমধ্যে পাঁচ লক্ষাধিক টাকা খরচ করা হয়েছে। এলাকার সর্বস্তরের প্রায় তিন শতাধিক যুবক এ স্বেচ্ছাশ্রমের কাজ করছেন।
রোববার সরজমিনে গেলে স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে যাওয়ায় গ্রামের সহস্রাধিক লোকের পরিবার রক্ষা করতে হলে দ্রুত এ স্থানটিতে একটি টেকসই বাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন। বিগত দিনে এ এলাকার প্রায় শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। মুছাপুর রেগুলেটর নির্মাণের পাশাপাশি এ স্থানে যদি দ্রুত বাঁধ নির্মাণ না করে তাহলে বাকি পরিবারের ঘরবাড়ি অচিরেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন স্থানীয়রা। এছাড়া অব্যাহত নদী ভাঙনের ফলে এ জনপদের মানুষদের মাঝে চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
চরদরবেশ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ স্থানে বাঁধটি নির্মাণ করা হলে এলাকাটি ভাঙন থেকে কিছুটা রক্ষা পাবে। দ্রুত মছাপুর রেগুলেটর পুনঃনির্মাণ সহসহ একটি টেকসই বাঁধ নির্মাণে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। জিসাসের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সেলিম রেজা বলেন, হাজার হাজার পরিবার ও জমি রক্ষায় সোনাগাজী ও কোম্পানীগঞ্জ বাসীর একটাই দাবি অতিদ্রুত মুছাপুর রেগুলেটর নির্মাণ করতে হবে। চরদরবেশ ইউনিয়ন জামায়েতের আমির মাও. হোসেন আহমদ বলেন, ভাঙন রোধে রেগুলেটর নির্মাণের বিকল্প নেই। সে সাথে নদীর সাথে সম্পৃক্ত ডাকাতিয়া খালের মুখসে মাটি ভরাট হয়ে যাওয়ার পানি অপসারণে বিঘ্ন হচ্ছে। খালটি যদি পরিকল্পিত ভাবে খনন করা হয় তাহলে ভাঙন রোধে সহায়ক হবে।
স্থানীয় ইতালি মার্কেট সমাজের সভাপতি মাহবুবুল হক বলেন, নদী এখান থেকে ১ কিলোমিটার দক্ষিণে ছিল। বর্তমানে নদী ভাঙার তীব্রতায় এ অঞ্চলের মানুষ রাত হলে একজনও তাদের বাড়ি-ঘরে থাকেন না। যদি এখানে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয় তাহলে নদীটা অন্যদিকে প্রবাহিত হবে। বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি রক্ষা পাবে। রোববার দুপুরে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পাউবোর স্টেশন অফিসার। এসময় এলাকাবাসীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, মুছাপুর রেগুলেটর নদী গর্ভে বিলীনের পর শুধু চরদরবেশ ইউনিয়ন নয়, পুরো সোনাগাজী উপজেলার চার পাশে নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। জেলা প্রশাসন ও পাউবো কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। অব্যাহত নদী ভাঙনের ফলে সোনাগাজী উপজেলার জনগণের ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
উল্লেখ্য; গত ২৬ আগস্ট ভারতীয় বন্যার পানির চাপে মুছাপুর রেগুলেটর নদীতে বিলীন হয়ে গেলে সোনাগাজী উপজেলার চারপাশে তীব্র নদী ভাঙন শুরু হয়। এর মধ্যে বহু ঘর-বাড়ি রাস্তা-ঘাট নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর