ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষা (দ্বিতীয় বারের মতো ভর্তি পরীক্ষাতে বসার সুযোগ) দাবি জানিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি করেছে ভর্তিচ্ছুরা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করতে এলে, এক পর্যায়ে ভবন থেকে বেরিয়ে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ মাহবুব কায়সার। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাকে সেই স্মারকলিপিটি প্রদান করেন।
স্মারকলিপি গ্রহণের পর সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ মাহবুব কায়সার আন্দোলনকারী ভর্তিচ্ছুদের উদ্দেশ্য বলেন, কোন এক কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকেন্ড টাইম বন্ধ করা হয়। সেটি অন্য প্রসঙ্গ, তবে ব্যক্তিগতভাবে যদি বলতে হয় তাহলে বলব আপনাদের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক। যদিও এখন এ বিষয়ে আলোচনা মুখ্য বিষয় না। আমরা এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো পরিপূর্ণভাবে খোলা এবং অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালুর বিষয়ে ভাবছি। যেহেতু আপনাদের যে দাবি সেটি আমরা পেয়েছি এবং পরবর্তী এ বিষয়ে আমি উপর্যুক্ত জায়গাতে এ নিয়ে আলোচনা করব।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা তাদের স্মারকলিপিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের পিছনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক তিনটি কারণ উল্লেখ করেন।
সেগুলো হলো- দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় সুযোগের কারণে বিভাগ পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু আসন ফাঁকা থাকে। প্রথম বছরের পরীক্ষার্থী ও দ্বিতীয় বছরের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। দ্বিতীয় বারের পরীক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস ও জালিয়াতির সুযোগ নেয়।
এর প্রেক্ষিতে প্রশাসন কর্তৃক দেখানো অযৌক্তিক কারণের বিপক্ষে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যুক্তি দেখান। সেগুলো হলো-
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী যদি দ্বিতীয় বার পরীক্ষা দিয়ে কাঙ্ক্ষিত বিষয় অর্জন করে, তবে এটা তার মেধার পরিচয়। সে তার লক্ষ্য পূরণের পথে হাঁটছে। মেডিকেলসহ বাংলাদেশের সকল স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ রয়েছে, ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণ হয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ মেধাভিত্তিক সম্মাননা "ডীন'স অ্যাওয়ার্ড" অর্জনে সক্ষম হয়েছে এবং বিশ্বে অন্যান্য স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন।
অসম প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বিষয়টি বিশেষভাবে পর্যালোচনা করে যেন পুনরায় দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দেয়। দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন জালিয়াতির কথা তুলে বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজ প্রশাসনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যার দায়ভার শিক্ষার্থীদের উপরে দেওয়া হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে কিছুক্ষণ অবস্থান শেষে ভর্তিচ্ছুরা প্রশাসনিক ভবন ত্যাগ করেন। এসময় তামিরুল মিল্লাত মাদরাসার সাবেক শিক্ষার্থী শোভন ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, আমরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে কোন বৈষম্য চাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ সকলের স্বপ্ন থাকে। দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই সেকেন্ড টাইম অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটে নেই। আমরা উচ্চ শিক্ষায় বৈষম্য চাই না। আমরা চাই অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকেন্ড টাইম চালু করা হোক।
ঢাকা কলেজের অনার্স পড়ুয়া জাহিন বলেন, আমি ঢাকা কলেজে অনার্স পড়ছি কিন্তু আমার স্বপ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ এই স্বপ্নের বড় বাঁধা সেকেন্ড টাইমারদের ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ না দেওয়া। আমরা চাই অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকেন্ড টাইম চালু করা হোক। সেই হোক আশা করছি মাননীয় উপাচার্য মহোদয় এ বিষয়টি আমলে নিয়ে সুষ্ঠু সমাধান করবেন।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয়বার ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা (ব্যাচ-২০২৩) এর ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা চালুর জন্য ও উচ্চশিক্ষা গ্রহণে প্রতিবন্ধকতা বন্ধের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর