বাংলাদেশ সময় রাত ১১ টায় শুরু হবে অ্যাপলের ইভেন্টট। এই ইভেন্টের মাধ্যমে আইফোন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাপল আজ তাদের আইফোন ১৬ সিরিজের ফোনগুলো বাজারে নিয়ে আসতে চলেছে। ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাপল কুপারটিনো পার্কে আয়োজিত ‘ইটস গ্লোটাইম’ ইভেন্টের মাধ্যমে এ আয়োজন করা হয়েছে।
অ্যাপল বরাবরের মতোই তাদের নতুন আইফোন বা অন্যান্য পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করেনি। তবে প্রযুক্তি দুনিয়ায় নানা গুঞ্জন চলছে যে, এবারের অনুষ্ঠানে আইফোন ১৬, আইফোন ১৬ প্লাস, আইফোন ১৬ প্রো এবং আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স মডেলের চারটি নতুন আইফোন আসতে পারে। এছাড়াও, অ্যাপল ওয়াচ ১০ সিরিজ এবং এয়ারপডস ৪ এর ঘোষণাও আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এরইমধ্যে আইফোন ১৬-এর ফিচার সম্পর্কে অনেক তথ্যই সামনে এসেছে। এবার আইফোন ১৬-এর দাম কত হতে পারে তা জানিয়েছে অ্যাপল হাব। অ্যাপল হাবের মতে, আইফোন ১৬-এর দাম হতে চলেছে ৭৯৯ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯৫ হাজার ৬৬৮ টাকা।
অন্যদিকে আইফোন ১৬ প্লাসের দাম হবে ৮৯৯ ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৭ হাজার ৫০০ টাকা। আইফোন ১৬ প্রো-এর দাম ১,০৯৯ ডলার হতে চলেছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার ৪৫১ টাকা। এবং আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্সের দাম ১,১৯৯ ডলার হতে পারে। অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় এর দাম পড়বে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪০০ টাকা।
আইফোন ১৬-তে থাকছে এআই সুবিধা। অর্থাৎ আপনাকে এআই ব্যবহার করতে আলাদা করে চ্যাটবট ডাউনলোড করতে হবে না, ফোনেই ইনস্টল করা থাকবে। তবে এআই সার্কিটের জন্য আলাদা কোনো চার্জ নিচ্ছে না কোম্পানি।
নতুন আইফোনের প্রো ও প্রো ম্যাক্স দুটোরই স্ক্রিন আগের সংস্করণগুলোর তুলনায় বেশ বড় হবে। আইফোন ১৫ প্রো-এর ডিসপ্লে যেখানে ছিল ছয় দশমিক এক ইঞ্চি, সেখানে এবারের প্রো-তে ডিসপ্লে থাকবে ছয় দশমিক তিন ইঞ্চির। আর প্রো ম্যাক্স-এও আগের ছয় দশমিক সাত ইঞ্চি ডিসপ্লে বদলে করা হবে ছয় দশমিক ৯ ইঞ্চি।
২০২০ সালে আইফোন ১২ প্রো ও প্রো ম্যাক্সের পর থেকে এই প্রথমবারের মতো আইফোনের স্ক্রিনের আকারে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সেই সূত্রে আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স হতে যাচ্ছে এখন পর্যন্ত প্রকাশিত সবচেয়ে বড় আইফোন।
আইফোন প্রো ম্যাক্সের আকর্ষণীয় ফিচার ৫এক্স জুম টেট্রাপ্রিজম ক্যামেরা আইফোন ১৬ প্রোতেও থাকবে। তবে প্রো ম্যাক্সের ক্ষেত্রে অপটিক্যাল জুম রেঞ্জকে আরও বিস্তৃত করা হতে পারে। প্রো এবং প্রো ম্যাক্স দুটোরই প্রধান ক্যামেরায় থাকবে নতুন সনি ক্যামেরা সেন্সর। এতে করে স্বল্প আলোতে ছবি তোলার ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে।
২০২১ সালে আইফোন ১৩ প্রো-এর পর থেকে ক্যামেরার আল্ট্রা-ওয়াইড সেকশনটিতে একদম গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। কিন্তু এবার আইফোন ১৬ প্রোতে ব্যবহৃত ক্যামেরার রেজুলেশন হবে ৪৮ মেগাপিক্সেল, যা এতদিন পর্যন্ত ১২ মেগাপিক্সেলে সীমাবদ্ধ ছিল।
পূর্ববর্তী সংস্করণের থাকা ওয়াই-ফাই ৬ই থেকে সরাসরি আপগ্রেড নিয়ে নতুন আইফোনের প্রো মডেল হবে ওয়াই-ফাই ৭ সমর্থিত। ওয়াই-ফাই ৭ প্রযুক্তিতে ডেটা ট্রান্সমিশনের গতি সর্বোচ্চ ৪০ জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড)-এরও বেশি, যা ওয়াই-ফাই ৬ই থেকে চারগুণ দ্রুত। ওয়াই-ফাই ৭ সংযোগে অনেকটা কমে আসবে লেটেন্সি, যা স্মার্ট হোম ডিভাইস বিশেষ করে হেডফোনে ভালো পারফরমেন্স পাওয়ার জন্য জরুরি।
অবশ্য এই নিরবচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক পেতে ওয়াই-ফাই রাউটারটি অবশ্যই ওয়াই-ফাই ৭ সমর্থিত হতে হবে। আর প্রাথমিক স্তরে এরকম রাউটারের জন্য অতিরিক্ত খরচে বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে।
এ ছাড়া আইফোন ১৬ প্রোর মডেমটি হবে কোয়ালকমের স্ন্যাপড্রাগন এক্স৭৫, যার সঙ্গে রয়েছে ৫জি অ্যাডভান্সড প্রযুক্তি। ফলে এর মাধ্যমে সাত দশমিক পাঁচ জিবিপিএস পর্যন্ত ডাউনলোড গতি পাওয়া যাবে।
আইফোনের জন্য নতুন প্রসেসর খুব একটা আকর্ষণীয় কিছু নয়। তবে এই বছরের বিষয়টি একটু ভিন্ন, কেননা এবার ফোনের প্রসেসর হিসেবে থাকবে এ১৮ চিপ। এখানে আইফোন ১৫ প্রো-এর মতই ব্যবহার করা হবে আট জিবি (গিগাবাইট) র্যাম। তবে সেটা মূল বিষয় নয়, আসল ব্যাপার হচ্ছে এ১৮ চিপটিতে রয়েছে প্রগতিশীল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য পূর্বাপেক্ষা অধিক সহায়ক পরিবেশ।
এ১৮ প্রো চিপে রয়েছে পর্যাপ্ত সংখ্যক ট্রানজিস্টর এবং বিশেষ ইলেক্ট্রনিক উপাদান। এতে করে শক্তিশালী নিউরাল ইঞ্জিনসহ বিল্ট-ইন এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) কম্পিউটিং কোরের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। এই টিপটি এ১৭ প্রো-এর মত ৬-কোর জিপিইউ (গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট) ডিজাইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।
পুরনো মডেলগুলো তুলনায় নতুন আইফোনের ব্যাটারির ক্ষমতা হবে সবচেয়ে বেশি। সম্পূর্ণ নতুনভাবে ডিজাইন করা ব্যাটারি হবে অপেক্ষাকৃত বেশি ঘনত্বের। ব্যাটারির ঘনত্ব বেশি হওয়ার কারণে ছোট আকৃতির ব্যাটারিও দীর্ঘ সময় ধরে ফোনকে ব্যাকআপ দিতে পারবে। জায়গা সঙ্কুলানের এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আইফোন ১৬ প্লাস-এ ব্যবহার করা হবে ছোট ব্যাটারি।
আইফোন ১৬ প্লাস-এর ব্যাটারি হবে চার হাজার ছয় এমএএইচ (মিলি অ্যাম্পিয়ার পার আওয়ার)-এর, যা আইফোন ১৫ প্লাস-এর ব্যাটারির তুলনায় আট দশমিক ছয় শতাংশ ছোট (চার হাজার ৩৮৩ এমএএইচ)। অবশ্য আইফোন ১৬-এর ব্যাটারি (তিন হাজার ৫৬১ এমএএইচ) আইফোন ১৫-এর ব্যাটারির (তিন হাজার ৩৪৯ এমএএইচ) তুলনায় প্রায় প্রায় ছয় শতাংশ বড় হতে পারে। নতুন সংস্করণে তারযুক্ত চার্জিংয়ের জন্য চার্জিং গতি সীমাবদ্ধ থাকবে ২০ ওয়াট থেকে ৪০ ওয়াটের মধ্যে। সেখানে তারবিহীন চার্জিংয়ের গতি ১৫ ওয়াট থেকে সর্বোচ্চ ২০ ওয়াট পর্যন্ত উঠতে পারে।
সর্বশেষ খবর