
রাজবাড়ীর পাংশা, খোকসা ও পাবনা অঞ্চলে পদ্মা নদীতে চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। সেনগ্রামের কলাবাগানের ঠুটা নামক জায়গা থেকে দিনে রাতে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু চুরি করছে একটি মহল। সম্প্রতি সময়ে চুরি করা বালু বিভিন্ন এলাকায় বাল্কহেড দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কলাবাগানের ঠুটার বালি কুমারখালীর শিলাইদহ ঘাট সহ বিভিন্ন জায়গায় তা বিক্রয় করা হচ্ছে। সরেজমিনে নদীতে গিয়ে দেখা যায়, ড্রেজার ও বাল্কহেড তিন জেলার মোহনায় অবস্থানরত।
স্থানীয়রা জানান, এই বালি উত্তোলনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বাহাদুরপুর ইউনিয়ন বিএনপির নেতা সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খানসহ খোকসা উপজেলার বেশ কয়েকজন । ইতিপূর্বে ওই এলাকায় আওয়ামী লীগ-যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে বালি ব্যবসা করে আসছিল। প্রশাসনের নজরদারিতে বিগত প্রায় একবছর ধরে বালি উত্তোলন ক্রয় বিক্রয় বন্ধ থাকলেও গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে নতুন করে বালু উত্তোলন শুরু করে এই মহল। বিভিন্ন সময় নদীতে নৌ পুলিশ টহল দেয়ায় বালু চোরের দল নদীর বিভিন্ন প্রান্তে পালিয়ে যায়। পুলিশ চলে গেলে পরক্ষণেই তারা বালু উত্তোলনের কাজে লিপ্ত হয়। এ যেন এক চোর-পুলিশ খেলা চলছে। নদী পাড়ের স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব আসলাম হোসেন বলেন, নদী থেকে বালু কাটায় নদীপাড়ের মানুষ হুমকির মুখে রয়েছে।
বাহাদুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সজীব হোসেন বলেন-নদী থেকে বালি উত্তোলন করায় ইতি মধ্যে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে আমাদের নিজের জমিও ভেঙ্গে গিয়েছে,আইন শৃংঘলা কমিটির সভায় চেয়ারম্যান সজীব বলেন বালি উত্তোলনকারীদের দমাতে না পারলে আমরা ক্ষতির সমূখিন হব।
সম্প্রতি একাধিক পত্রিকায় হাবাসপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খানের ছেলে জেমস খান, চরপাড়া গ্রামের আব্দুল হাই, আরিফ শেখ, বাবুল মল্লিক, মাসুদ মল্লিক, আবজাল, কামাল সর্দার, আনিস মন্ডল, আলাই মন্ডল, সাহেব আলী মন্ডল, হযরত খাঁ, মান্নান প্রামানিক, শহিদ প্রামানিক, নিজাম শেখ ও লিটন শেখ নামের স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের নাম জড়িয়ে বালু উত্তোলনের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যা সম্পূর্ণ, মিথ্যা, ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান। তিনি বলেন, আমরা বালু উত্তোলনের সাথে কেউ জড়িত নাই, বাহাদুরপুর অঞ্চলে সেনগ্রাম এলাকায় কলাবাগান ঠুটা নামক স্থানে বিএনপি নেতা সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান ও তার লোকজন বালু উত্তোলন করছে বলে জানতে পেরেছি। হাবাসপুর এলাকার কিছু মানুষ পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ এলাকা থেকে বালু ক্রয় করে বিক্রয় করার জন্য বেড়িবাঁধের পাশে এনে রেখেছে। এতে করে বেড়িবাঁধের কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করতে একটি মহল বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা ভিত্তিহীন অভিযোগ দিচ্ছে। প্রকাশিত ওই সকল প্রতিবেদনে আমাদের নামে যেসমস্ত অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
দীর্ঘদিন ধরে একটি স্বার্থান্বেষী মহল পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন করে আসছিল। অনেকেই বালু বিক্রয় করে কোটিপতি বনে গেছে ইতিপূর্বে। সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমের পুত্রের মদদপুষ্টে তারা বালুর ব্যবসা করেছেন দীর্ঘদিন। তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও সম্প্রতি সময়ে সুযোগ সন্ধানী একটি মহল পুরোনো ব্যবসায় বিএনপির ছত্রছায়ায় পুনরায় বালু চুরি শুরু করেছে।
পদ্মা নদীতে বালু উত্তোলনের বিষয়ে পাংশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার কারণে বালু উত্তোলন হচ্ছে। বালু উত্তোলন বন্ধে অচিরেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতি মধ্যে পাবনার প্রশাসন অভিযান চালিয়েছে। আমরাও অভিযান চালিয়ে বালি উত্তোলন বন্ধ করে দিব।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর