জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ধরনের দলীয় ও লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং অবিলম্বে জাকসু নির্বাচনের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৩ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের (জাবি) ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আহসান লাবিবের সঞ্চালনায় শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।
সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জিয়াউদ্দীন আয়ান বলেন, জাবির এই ৭০০ একরে আমরা রাজনীতি দেখতে চাই না। ২৪ এর গণ অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে আমরা নষ্ট হতে দেব না। আপনারা জানেন ছাত্রলীগকে বিতাড়িত করতে আমাদের সময় লাগেনি। ক্যাম্পাসে আবাত কোনো দল যদি লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি করার পায়তারা করে তাহলে তাদেরকে বিতাড়িত করতে আমাদের সময় লাগবে না। এই ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি থাকবে কি থাকবে না তা নির্ধারন করবে বর্তমান শিক্ষার্থীরা। সেই সাথে বলতে চাই আমরা কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী রাজনীতি চাই না। আমরা নবনিযুক্ত উপাচার্যের কাছে আহবান জানাতে চাই, যত দ্রুত সম্ভব ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করে জাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।
সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি আমাদের কি দিয়েছে শিক্ষার্থীদের, এরা কখনো ছাত্রদের অধিকারের বিষয়ে কথা বলে নাই, এরা ক্যাম্পাসের কল্যানে কোনো কাজ করে নাই, এই রাজনীতি শিক্ষার্থীদেরকে মাদকাসক্ত করেছে, গনরুমের মতো নোংরা সংস্কৃতি তৈরি করেছে, দলীয় শিক্ষক রাজনীতি আমাদের শরীরে বুলেট উপহার দিয়েছে, তাই এই রাজনীতি আমরা চাই না। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝতে পারছি ক্যাম্পাসে যদি সবরকম দলীয় রাজনীতি বন্ধ হয়ে যায় তাহলেই আমাদের ক্যাম্পস নিরাপদ থাকবে। তাই ভিসি মহোদয়কে বলতে চাই যত দ্রুত সম্ভব সিন্ডিকেটে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ করেন এবং জাকসু নির্বাচনের ব্যাবস্থা করুন।
ফারহানা তারিন বলেন, রাজনীতি মানুষের ভেতর থেকে কেউ কখনো সড়াতে পারবে না। আমরা চাই লেজুড়ভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ হোক, দলীয় লেজুড়ভিত্তিক রাজনীতি ছাত্রদের জন্য কখনো সুফল বয়ে আনতে পারে না । যদি এই রাজনীতিক দলগুলো যদি ছাত্রদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনত তাহলে আমরা রাজনীতি বন্ধ চাইতাম না। কিন্তু এই রাজনীতি সবসময় ক্যাম্পাসে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে রাখে।
সমন্বয়ক আরিফ সোহেল বলেন, সারা দেশে বিপ্লবী ছাত্র জনতা নতুন করে দেশ ও রাষ্ট্র গঠনে ভূমিকা রেখে চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি কেমন হবে, চলবে কি চলবে না তার মীমাংসা করা জরুরী। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক কাঠামোর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হয়েছে। ঔপনিবেশিকদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো ছিলো প্রতিবাদের আতুর ঘর। ন্যায্য অধিকার আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো সূতিকাগার হয়ে উঠেছিলো।
তিনি আরো বলেন, স্বাধীন রাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয় কেমন হবে সেই প্রশ্নে গেলে দেখতে হবে উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীন রাষ্ট্র গুলো কিভাবে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলো সাজিয়েছে। কিভাবে তারা আধুনিকায়নের মাধ্যমে তাদের ছাত্রদেরকে গড়ে তুলেছে এবং তারা পুরো পৃথিবীতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। সেখানে কোনো শিক্ষক বা কর্মচারীদের রাজনীতি পাওয়া যাইনি। শিক্ষার্থীদের দিয়ে নোংরা রাজনীতি করানোর এখন কোনো সুযোগ নাই। বর্তমানে স্বাধীন দেশে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে গড়ে তুলতে আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর দিকে তাকাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়কে জ্ঞান ও গবেষণার জায়গায় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। স্বাধীন হওয়ার পর এই পর্যন্ত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সুস্থ ছাত্র রাজনীতি দেখা যায়নি। রাজনীতির নামে শিক্ষার্থীদের নিপিড়ন করা হয়েছে। অতিবিলম্বে জাকসু নির্বাচন ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি দিতে হবে।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুর রশিদ জিতুর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মানববন্ধনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর