বাগেরহাটের চিতলমারীতে কচুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মেধাবী, প্রতিবন্ধীসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৫ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৪ শিক্ষককে বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চিতলমারী উপজেলার সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে ৪ শিক্ষককে বহিষ্কারসহ বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন। পরে কচুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, ২০২২ সালে বাগেরহাটের চিতলমারী কচুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মেধাবী, প্রতিবন্ধীসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে স্কুলে এককালীন ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ ৪জন শিক্ষক এই বরাদ্দের টাকা বিতরণ না করে আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সহ জড়িতদের বরখাস্ত এবং শাস্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা।
মাধ্যমিক স্কুলে মেধাবী ও প্রতিবন্ধী কোটায় জন প্রতি শিক্ষার্থীদের ৫ হাজার টাকাসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ আসে। বিষয়টি ২ বছর পর রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) জানাজানি হলে স্কুলের শিক্ষার্থীরা কখনো স্কুলে এবং কখনো উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের সামনে প্রতিকার চেয়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে। এসময় স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরাও অংশগ্রহণ করে শিক্ষকদের বহিষ্কার দাবি করে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবকরাও যোগ দিয়ে তাদের দাবির সাথে সুর মিলিয়ে মানুষ গড়ার কারিগর দুর্নীতিবাজ এসব শিক্ষকদের বিচার দাবি করেন।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে যারা পড়াশুনা করে অধিকাংশই দরিদ্র। বিদ্যালয়ের মেধাবী, প্রতিবন্ধী, দরিদ্র শিক্ষার্থীর জন্য ২০২২ সালে ৫লক্ষ টাকা বরাদ্দ আসে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষরা আমাদের কোন টাকা না দিয়ে সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করে। পরে আমরা ০৯ সেপ্টেম্বর জানতে পারি আমাদের জন্য টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকসহ বাকি শিক্ষকদের কাছে জানতে চাইলে তারা আমাদের সঠিক কোনো উত্তর দিতে পারেনি। আমরা পরে জানতে পেরেছি বিদ্যালয়ে কিছু পুরানো শিক্ষার্থীর নাম দিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে ভুয়া ভাউচার দিয়েছে। আমাদের শিক্ষক হয়ে যারা আমাদের দরিদ্র, মেধাবী, প্রতিবন্ধীদের অর্থ চুরি করেছে , বঞ্চিত করেছে আমরা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, এই দুর্নীতির সাথে প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান আলী, সহকারী প্রধান শিক্ষক হেদায়েত আলী দুলাল, গণিতের শিক্ষক নির্মল কান্তী হীরা জড়িত রয়েছে। তাদের এই অপকর্মের জন্য প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার ও শাস্তি দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী তিথি মনির পিতা মো. সাফায়েত শেখ বলেন, রবিবার প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান আলী, সহকারী প্রধান শিক্ষক হেদায়েত আলী দুলাল আমাকে কচুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে রাস্তার উপরে বসে ৫ হাজার টাকা দেয়। আমি টাকা দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তারা জানায় সরকারি টাকা তোমার মেয়েকে স্কুল থেকে দেওয়া হয়েছে। তিরি আরো বলেন, প্রতিষ্ঠানের দুলাল স্যার আমাকে বলেছে যদি কেউ জানতে চায় তাকে বলবা টাকাটা ৩/৪ মাস পূর্বে তোমাকে দেওয়া হয়েছে।
টাকা আত্মসাৎ এর বিষয়ে অফিসের কেরানি মাসুম বিল্লাহ বলেন, হেডস্যার যেভাবে বলছে আমি সেভাবেই করেছি আর কিছু আমি জানি না।
আন্দোলনের মুখে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান আলী স্কুলে অনুপস্থিত থাকলেও সহকারী প্রধান শিক্ষক হেদায়েত আলী দুলাল এ ঘটনা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসমত হোসেন বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। মেধাবী ও প্রতিবন্ধী কোটায় স্কুলের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অনিয়ম পেলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা করা হবে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর