• ঢাকা
  • ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৬ মিনিট পূর্বে
শাহীন মাহমুদ রাসেল
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৩:৩২ দুপুর
bd24live style=

দালালদের টাকা দিলেই বাংলাদেশে ঢুকার রুট পারমিট মিলছে রোহিঙ্গাদের

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

সীমান্তবর্তী কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার পূর্বে নাফ নদের ওপারে মিয়ানমার। আর এপারে টেকনাফ উপজেলায় রয়েছে বঙ্গোপসাগরের প্রায় ৫০ কিলোমিটার সৈকত। বঙ্গোপসাগর বা নাফ নদের এই এলাকার কিছুদূর পরপর একেকটি ঘাট। প্রতিটি ঘাট যেন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের দরজা। কয়েকশ দালালের সহযোগিতায় গড়ে ওঠা সংঘবদ্ধ চক্র বিজিবি বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে রোহিঙ্গা আনতে পারলেই টাকা।

মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে গৃহযুদ্ধের জেরে রোহিঙ্গাদের স্রোত নেমেছে নাফ নদে। তারা আসতে চাইছে বাংলাদেশে। টেকনাফ ও উখিয়ার চিহ্নিত একটি সংঘবদ্ধ চক্র এবং মিয়ানমারের কিছু লোকজন কাজটি করছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার আর মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচার করে আসছে।

টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে গত এক মাসে নতুন করে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের অন্তত ২০ জনের সাথে আলাপ করেই মিলেছে এমন তথ্য। 

মঙ্গলবার সকালে টেকনাফের আলীখালিস্থ ২৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৫ নম্বর ব্লকে গিয়ে দেখা মেলে মিয়ানমারের মংডুর নলবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ হানিফের। তিনি গত ৮ আগস্ট পালিয়ে এসে পরিবারের ৮ সদস্য নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন স্বজনের বাড়িতে।

তিনি বলেছেন, মিয়ানমারের দুই পক্ষের সংঘাতে রোহিঙ্গা গ্রামগুলো একের পর এক আক্রান্ত হচ্ছে। ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, বোমা ও গুলিতে জীবন রক্ষায় রোহিঙ্গারা উপায় খুঁজছেন। এই পরিস্থিতিতে জনপ্রতি বাংলাদেশি ২৮ হাজার টাকা দেওয়ার পর দালালরা একটি নৌকায় তুলে বঙ্গোপসাগর অতিক্রম করে হাবির ছড়া ঘাটে নামিয়ে দেন। ওইখানে নেমে আরেকটি চক্রকে জনপ্রতি ৩ হাজার টাকা দিলে তারা কয়েকবার গাড়ি বদল করে তাদের ক্যাম্পে পৌঁছে দেয়।

তবে তিনি দালালদের কারও নাম বলতে পারেননি। মিয়ানমারের যে সদস্যের মাধ্যমে এই দালালচক্রের সন্ধান পেয়েছেন ওই সদস্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পেরই বাসিন্দা। প্রায়শ মিয়ানমার-টেকনাফে আসা-যাওয়া করেন। জড়িত রয়েছেন ইয়াবা কারবারেও। ওই যুবকের নাম হেলাল উদ্দিন বলে জানান তিনি।

ক্যাম্পে পাওয়া নতুন রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার গল্প যেন এক ও অভিন্ন। আর এসব দালালকে টাকা দিয়ে টেকনাফের বিভিন্ন ভাড়া বাড়িতেও থাকার সুযোগ পাচ্ছেন এসব রোহিঙ্গারা।

টেকনাফের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাধারণ মানুষ বলছেন, মূলত জেলে সেজে মাছ ধারার ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগেই আনা হচ্ছে এসব রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিভিন্ন মাধ্যমে ৩০ পয়েন্টের কথা বলা হলেও এর সংখ্যা কম হলেও ৫৫টি।

এর মধ্যে টেকনাফের সাগর উপকূল শাপলাপুর, শীলখালী, চৌকিদারপাড়া, মারিশবনিয়া, হলবনিয়া, জাহাজপুরা, কচ্ছপিয়া, বাঘগোনা, নোয়াখালীপাড়া, রাজারছড়া, হাবিরছড়া, মিঠাপানির ছড়া, লম্বরি, লেঙ্গুরবিল, তুলাতুলী, মহেশখালিয়া পাড়া, মুন্ডারডেইল ঘাট, খুরেরমুখ, জিরোপয়েন্ট, শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিমপাড়া, ডাঙ্গরপাড়া, নাফ নদের মিস্ত্রিপাড়া, গোলাপাড়া, শাহপরীর দ্বীপ, জালিয়াপাড়া, নয়াপাড়া-ঝিনাপাড়া, টেকনাফ সদরের নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, ট্রানজিট, বরইতলী, কেরুনতলী, হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া ১৪নং ব্রিজ, দমদমিয়া কেয়ারিঘাট, দমদমিয়া হাজীর খাল, ন্যাচার পার্ক, দমদমিয়া ওমরখাল, জাদিমুড়া, জাইল্যা ঘাট, মুচনি ঘাট, হ্নীলা চৌধুরীপাড়া, হ্নীলা জালিয়াপাড়া, উয়াব্রাং, মৌলভীবাজার, হোয়াইক্যং খারাংখালী, নয়াবাজার, মিনাবাজার, ঝিমংখালী, কাঞ্জরপাড়া, উনছিপ্রাং, লম্বাবিল, বালুখালী, কেরুনতলী, উলুবনিয়া ঘাট ব্যবহার করেই দালালরা নিয়ে আসছেন এসব রোহিঙ্গা।

এসব দালাল কারা? এমন প্রশ্নের উত্তরে সাবরাং ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ সেলিম বলেন, শত শত দালাল। রাত হলেই এসব দালালের আনাগোনা বাড়ে সাগর উপকূল বা নাফ নদের কিনারে। বিজিবি ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল নজরদারি করে সংকেত দিলেই নৌকা নির্ধারিত ঘাটে ভেড়ানো হয়। মিয়ানমারের সাথে ইয়াবা কারবারি জড়িত ব্যক্তি, সাগর পথে মালয়েশিয়ায় মানব পাচারকারী দালালরা এই নিয়ন্ত্রক। নৌকা আনা-নেওয়ার কাজ ঘরে বসেই নিয়ন্ত্রণ করে দালালদের প্রধান বা গডফাদার। মাঠের নজরদারিকারী, নৌকায় জেলে সেজে আনার কাজে জড়িত ব্যক্তিরা পাচ্ছেন কমিশন।

টেকনাফের ৮ জনপ্রতিনিধিসহ ২৫ জন মানুষের সাথে আলাপ করে দালাল কারা শনাক্ত করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কেউ নাম প্রকাশ করতে চান না। তারা বলেন, শত শত দালাল! কার নাম বলবেন তারা!

শেষ পর্যন্ত নাম প্রকাশ না করার শর্তে দালালচক্রেরই কয়েক সদস্য জানিয়েছেন, কোন ঘাটে নৌকা আসছে এটা বড় না। সব ঘাটেই মিলেমিশে এই কাজ করা হচ্ছে। আগে থেকে ইয়াবা বা মানব পাচারে সংঘবদ্ধ এসব চক্র। তবে ঘাটভিত্তিক নিয়ন্ত্রক ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির রয়েছে। যেখানে জড়িত রয়েছেন জনপ্রতিনিধিসহ প্রভাবশালীরাও।

এদের মধ্যে যাদের নাম পাওয়া গেছে তারাও ঘুরেফিরে মানব পাচার মামলা ও ইয়াবা পাচার মামলার আসামি। টেকনাফের সাগর উপকূলের ঘাটসমূহ বদি আলম, হেলাল উদ্দিন, মো. রহিম বাদশা, মো. বলি, নুর মোহাম্মদ, মোহাম্মদ সালমান, মো. শামসুল আলম, মো. জাবেদ, ইমান হোসেন ইউচুপ, মো. ইউনুছ, মো. সিরাজ, আজিজ উল্লাহ, জাফর আলম, মো. জিয়াবুল, মো. শফিক, মুহাম্মদ মান্নান, করিম উল্লাহ, নজির আহমেদ, মো. শফিক, মো. ফারুক, মো. জয়নাল, নুর হোসেন, মো. সাদ্দামরা নিয়ন্ত্রণ করলেও নাফ নদ নিয়ন্ত্রণে ভিন্ন নাম পাওয়া যায়।

নাফ নদের ঘাটসমূহ নিয়ন্ত্রণ করছেন মো. মিজান, মো. নজির, শফিউল্লাহ, আককাজ, নুর হাকিমসহ কয়েকজন।

আবার ঘাট দিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ভাড়া বাড়ি বা ক্যাম্পে পৌঁছানোর চক্রটি রয়েছে জালাল হোসেন, খোরশেদ আলম, ইয়াসিনদের মতো যুবকরা।

টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, ‘এটা সত্য যে, আমার এলাকাসহ বিভিন্ন গ্রামে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা অবস্থান করছে। অনেকে ভাড়া বাসায় থাকছে। দালালরা তাদের সহযোগিতা করছেন। এসব বিষয়ে আমি আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে একাধিকবার অবহিত করেছি। এরপরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা স্থানীয় বাসিন্দা অনিরাপদ আছি। কেননা ওপার থেকে অনেক সশস্ত্র সন্ত্রাসী পালিয়ে আসার খবর পেয়েছি। এখনই এর ব্যবস্থা না নিলে সামনে আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।’

বিজিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের দালালদের শনাক্ত করতে কাজ শুরু করেছেন তারা। এর মধ্যে ৫৭ জনকে চিহ্নিত করে একটি তালিকা তৈরি করেছে। কয়েকজনকে আটকও করা হচ্ছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, টেকনাফ শহরসহ রোহিঙ্গারা বিভিন্ন এলাকা ছড়িয়ে পড়ছে। বিষয়টি নিয়ে অতি দ্রুত যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের জনবল বাড়াতে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। দালালদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

মুনতাসির/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com