মৌলভীবাজার জেলাসহ পুরো সিলেট বিভাগে প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। জেলার অন্যান্য উপজেলার মতো জুড়ীতে প্রচণ্ড গরমে যখন মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা ঠিক তখনই মরার উপর খড়ার ঘা হিসেবে বেড়েছে বিদ্যুতের অসহনীয় লোডশেডিং। প্রতিদিনই ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের ফলে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ গ্রাহকরা। দিন রাত মিলিয়ে ৯-১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে স্বাভাবিক কাজকর্মে চরম ভাটা পড়েছে।
বিদ্যুতের এ চরম লোডশেডিংয়ের বিষয়ে বিদ্যুতের উৎপাদন কম ও চাহিদা বাড়াকেই দায়ী করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে আরো কিছুদিন পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মাস খানেকের অধিক সময় ধরে এই উপজেলায় বিদ্যুতের লোডশেডিং তীব্র আকার ধারণ করেছে। দিনে ও রাতে পাল্লা দিয়ে চলছে লোডশেডিং। এতে তে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের ফলে উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, ব্যাংকিং খাতের সেবা, সাধারণ ব্যবসায়ী, পোল্ট্রি ও মৎস্য খামারী ছাড়াও শিশু ও বয়স্করা পরেছেন চরম বিপাকে।
গভীর রাতে গ্রামসহ শহরে একবার বিদ্যুৎ গেলে আসছে ঘণ্টাখানেক পর। বিদ্যুৎহীন থাকার কারণে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা পড়েছেন বিপাকে। বিশেষ করে বিপাকে পড়েছে গ্রামের প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। অসহনীয় গরম এবং তীব্র লোডশেডিংয়ে ঘা ঘেমে যাচ্ছে। অতিরিক্ত ঘামে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যবসায়ীদের ফটোস্ট্যাট মেশিন, বাসাবাড়ির টিভি-ফ্রিজ, কম্পিউটার থেকে শুরু করে বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল বিভিন্ন জিনিসপত্র নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ব্যাহত হচ্ছে ইন্টারনেট সেবা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খামার মালিকরা। নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে ওঠা বিদ্যুতের এমন লুকোচুরি খেলায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
জুড়ী পিডিবির আবাসিক প্রকৌশলীর অফিস সূত্রে জানা গেছে, জুড়ী উপজেলায় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ৬ থেকে সাড়ে ৬ মেগাওয়াট। কিন্তু কুলাউড়া বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র থেকে জুড়ী উপকেন্দ্রে আড়াই থেকে তিন মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লোড বরাদ্দ করা হয়। ফলে প্রতিদিন জুড়ী উপকেন্দ্র থেকে ঘাটতি ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ থাকার কারণে প্রতি ঘণ্টায় মূলত এই কারণেই বিদ্যুতের লোডশেডিং বেড়েছে বলে দাবি করেন বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টরা।
সাধারণ গ্রাহক কামরুল ইসলাম জানান, দিনে-রাতে মিলিয়ে ৯/১০ বার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। থাকছে না ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আমার ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করছে। রাতে গরমের কারণে তারা পড়াশোনা ও ঘুমাতে পারছে না। আবার স্কুলেও ঠিকমতো বিদ্যুৎ থাকে না। গরমে শরীরে ঘাম বসে কাশি হয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি চাই।
জুড়ী শহরের বাসিন্দা রায়হান আহমেদ শাহীন বলেন, বাড়িতে বয়স্ক মা-বাবা আছেন। ঘন ঘন বিদ্যুৎ আসা যাওয়ার কারণে তীব্র ঘামে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তারা। গভীর রাতেও বিদ্যুৎ থাকে না ঘন্টার পর ঘন্টা। স্বস্তিতে ঘুমাতেও পারছি না কেউ-ই। এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ চাই।
আলাপকালে এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যাংকে সাধারণ গ্রাহক সেবা ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা জেনারেটর চালিয়ে গ্রাহক সেবা দিচ্ছি।
জানতে চাইলে আবাসিক প্রকৌশলী কবির আহমদ বলেন, ‘যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় একেবারেই কম। চাহিদার চেয়ে বিদ্যুৎ কম পাওয়ায় কিছুটা লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা চলছে। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে।’
সিলেট বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আবু হোসাইন জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের একটি অভ্যন্তরীণ সভা হয়েছে। ওই সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সিলেটের বিদ্যুতের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি সেন্ট্রাল (ঢাকা) জানানো হবে। আশা করছি অচিরেই এই সমস্যার সমাধান হবে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর